Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নদীর মাছ বাঁচাতে মাস্টারপ্ল্যানের দাবি

শেষ ছ’মাসে দেখা মেলেনি মহাশোল, সরপুঁটি, ছোট ভেটকির মতো নদীয়ালি মাছের। তাতে উদ্বিগ্ন আলিপুরদুয়ারের মৎস্য দফতরের কর্তারা। অভিযোগ কিছু জেলে ছোট জাল, ব্যাটারি ও বিষ দিয়ে মাছ ধরনে। তারই জেরে প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে এই নদীয়ালি মাছ।

ব্যাটারি, বিষ, ছোট জাল দিয়ে চলে মাছ ধরার কাজ। নিজস্ব চিত্র

ব্যাটারি, বিষ, ছোট জাল দিয়ে চলে মাছ ধরার কাজ। নিজস্ব চিত্র

নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০১
Share: Save:

শেষ ছ’মাসে দেখা মেলেনি মহাশোল, সরপুঁটি, ছোট ভেটকির মতো নদীয়ালি মাছের। তাতে উদ্বিগ্ন আলিপুরদুয়ারের মৎস্য দফতরের কর্তারা। অভিযোগ কিছু জেলে ছোট জাল, ব্যাটারি ও বিষ দিয়ে মাছ ধরনে। তারই জেরে প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে এই নদীয়ালি মাছ। মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরাও স্বীকার করেন, বোরলি, পুঁটি, পয়া, গুচি, চ্যাং-সহ নানা প্রজাতির মাছের জোগান কমছে। পরিবেশপ্রেমীদেরও আশঙ্কা, এ ভাবে মাছ ধরায় আগামী দিনে ডুয়ার্সের বিভিন্ন নদী থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে প্রজাতির মাছ।

আলিপুরদুয়ার জেলাপরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শীলা দাস সরকার জানান, বিষয়গুলি নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সচেতনতামূলক প্রচার ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে কর্মশালা করে বিষয়গুলি বোঝানো হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারের জেলা মৎস্য আধিকারিক সুনীলচন্দ্র বর্মন বলেন, “শেষ ছ’মাসে দেখা মেলেনি মহাশোল, সরপুঁটি, নেদস বা ছোট ভেটকির মতো নদীয়ালি মাছের, বিষয়টি উদ্বেগের। তা ছাড়া কমে আসছে বোরলি, পুঁটি, পয়া, গুচি, চ্যাং সহ নানা প্রজাতির মাছ। বিষয়টি রাজ্য মৎস্য দফতরে জানানো হবে। নদীয়ালি মাছ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন রয়েছে মাস্টার প্ল্যানের।’’

মৎস্য দফতরের আধিকারিকরা জানান, জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ এই সময় মাছেরা ডিম পাড়ে। মৎসজীবীরা পেটে ডিম থাকা মাছ বা ডিম থেকে বের হওয়ায় ছোট মাছ ধরলে, মাছেদের বংশবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমে আসবে। তা ছাড়া, ছোট ফুটোর জাল বা চলতি ভাষায় ফাঁস জাল দিয়ে মাছ ধরা বেআইনি। এতে ডিম থেকে সদ্য বের হওয়ায় মাছও আটকে পড়ে। ব্যাটারি দিয়ে জলের মধ্যে হালকা বিদ্যুৎ দিয়ে মাছ ধরেন অনেক মৎস্যজীবী। সবই পুরোপুরি বেআইনি। একই ভাবে, মৎস্য দফতরের কর্তারা যাই বলুন না কেন, বর্ষার মরসুমেও মাছ ধরা চলছে। এমনকি, ডিম পাড়ার মরসুমেও ফাঁস জাল ও ব্যাটারি দিয়ে মাছ ধরেন মৎসজীবীরা।

কী ভাবে ব্যাটারি দিয়ে মাছ ধরা হয়? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফালাকাটা, বীরপাড়া, কালচিনি, কুমারগ্রাম আলিপুরদুয়ার সহ বিভিন্ন এলাকায় নদীতে দল বেঁধে যান মৎস্যজীবীরা। এক জন দু’টি বাঁশের মাথায় লোহার রডে বিদুৎতের তার লাগিয়ে তার সংযোগ করে দেন ব্যাটারিতে। নদীতে কোনো জায়গায় মাছ দেখলে নেগটিভ ও পজেটিভ তার দু’টি ওই জায়গায় লম্বা বাঁশের সাহায্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার মাছগুলি নদীতে ভেসে ওঠে। তা ধরে ফেলেন মৎসজীবীরা। আধিকারিকরা জানান, এ ধরনের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, ব্যাটারি দিয়ে মাছ ধরা ও বিষ প্রয়োগে মাছ মারায় বহু প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে নদীয়ালি মাছে বোরলি, চ্যালা, চেপটি চাঁদা মাছ বিপন্ন তালিকায় চলে গিয়েছে। এর মূল কারণ হল অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত ভাবে মাছ শিকার। বর্ষার সময় মাছেদের প্রজনন কালেও অবৈধ ভাবে মাছ ধারায় আগামী দিনে মাছেদের বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। তা ছাড়া চাবাগানগুলিতে বিষ প্রয়োগ মাছ কমার মূল কারণ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE