Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক মাসেও টাকা তুলতে পারেননি প্রবীণা খোকো

ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে ঝরঝর করে কাঁদছিলেন খোকো বেওয়া। স্বামী মারা গিয়েছেন ২৫ বছর আগে। একমাত্র ছেলের পৃথক সংসার। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের রশিদাবাদের ৮২ বছরের খোকো বেওয়ার ভরসা বার্ধক্য ভাতার মাসিক এক হাজার টাকা।

খোকো বেওয়া

খোকো বেওয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১১
Share: Save:

ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে ঝরঝর করে কাঁদছিলেন খোকো বেওয়া। স্বামী মারা গিয়েছেন ২৫ বছর আগে। একমাত্র ছেলের পৃথক সংসার। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের রশিদাবাদের ৮২ বছরের খোকো বেওয়ার ভরসা বার্ধক্য ভাতার মাসিক এক হাজার টাকা। সেই টাকাও নিয়মিত মেলে না। গত ছয় মাস ধরে ভাতার টাকা মেলেনি।

অবশেষে জুন, জুলাই, অগস্টের টাকা এক সঙ্গে গত মাসের গোড়ায় তাঁর অ্যাকাউন্টে এসেছে। কিন্তু নোটের গেরোয় মাস ফুরোলেও একটা টাকাও তুলতে পারেননি তিনি। অশক্ত শরীরে কষ্ট করে একাধিকবার ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু শুনতে হয়েছে টাকা শেষ। চেয়ে চিন্তে খেয়ে দিন কাটছে তাঁর।

শুধু খোকো বেওয়া নন। হেঁশেলে হাড়ি চড়ানোই বন্ধের উপক্রম হয়েছে খোকো বেওয়ার মতো মালদহের চাঁচল মহকুমার বিধবা ও বার্ধক্যভাতার উপভোক্তাদের। যাঁদের ৮০ শতাংশেরও বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের শাখায়। গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলো এমনিতেই টাকার অভাবে জেরবার। যে টুকু কখনও মিলছে, ওই প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াদের পক্ষে সবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে পাল্লা দিতে না পারায় খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ওই প্রৌঢ় উপভোক্তাদের জন্য ব্যাঙ্কে পৃথক লাইন কেন করা হবে না সেই দাবিও উঠেছে।

বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের মালদহের রিজিওনাল ম্যানেজার সব্যসাচী মজুমদার বলেন, ‘‘সমস্যাটা বুঝি। কিন্তু ওদের জন্য পৃথক কাউন্টার করার মতো পরিকাঠামো নেই।’’ তবে এ ক্ষেত্রে উপায়ও বাতলেছেন সব্যসাচীবাবু।

তিনি বলেন, ‘‘সপ্তাহে একদিন শুধু এ রকম উপভোক্তাদেরকেই টাকা দেওয়া হবে! অন্য কেউ টাকা নেবেন না। স্থানীয় পন্চায়েতগুলো সেই উদ্যোগ নিলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’

প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল মহকুমার ছ’টি ব্লকে বিধবা ও বার্ধক্য ভাতা প্রাপকের সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। বার্ধক্য ভাতা মাসে ৪০০ টাকা ও বিধবা ভাতা দেওয়া হয় ৬০০ টাকা। ৮০ বছর পেরোলে বার্ধক্য ভাতা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজারে। কিন্তু নিয়মিত কখনওই তা মেলে না। বকেয়া ছয়মাসের মধ্যে তিন মাসের টাকা গত মাসে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত মাসের গোড়ায় ভাতার টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর থেকেই শুরু হয় নোটের গেরো।

ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে খোকো বেওয়া বলেন, ‘‘কী খাব দূরের কথা, এক কাপ চা খাওয়ারও পয়সা নেই। ওষুধ কিনতে পারছি না। যে দিনই ব্যাঙ্কে আসছি শুনছি টাকা নাই।’’ একই অবস্থা ঘোরটের রলি বেওয়া, জাহিদা বেওয়া, কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মুকুন্দপুরের ননী বেওয়া, উত্তর রামপুরের কমলা থোকদারদের।

হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও বিপ্লব রায় বলেন, ‘‘বকেয়া তিন মাসের টাকাও এ মাসেই ওঁদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’ কিন্তু সবার সঙ্গে লাইন দিয়ে সেই টাকা তোলা ষাট, সত্তরোর্ধ উপভোক্তাদের পক্ষে যে সমস্যার তা অস্বীকার করেননি বিডিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation elderly lady
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE