Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতভর আঁধারে লাটাগুড়ি, ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ পর্যটকেরা

বেড়াতে এসে বিপত্তি! লোডশেডিংয়ের জেরে রাতভর দুর্ভোগ পোহাতে হল পর্যটকদের। রবিবার গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া মেটেলি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘটনা। স্কুল-কলেজের ছুটি থাকায় প্রতিটি রিসর্টই এখন পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা।

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

বেড়াতে এসে বিপত্তি! লোডশেডিংয়ের জেরে রাতভর দুর্ভোগ পোহাতে হল পর্যটকদের।

রবিবার গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া মেটেলি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘটনা। স্কুল-কলেজের ছুটি থাকায় প্রতিটি রিসর্টই এখন পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা। রাত থেকে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে হাঁসফাস করেছেন বাসিন্দা থেকে পর্যটক— সকলেই। গত কয়েকদিন ধরেই উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রার পারদ ৩৮ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। তার মধ্যে সারারাত বিদ্যুৎ না আসায় শিশুদের নিয়ে নাকাল হতে হয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা বহু পর্যটককে।

তবে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু রবিবারই নয়, বেশ কয়েকদিন ধরেই লোডশেডিং চলছে এলাকায়। বিদ্যুৎ পর্ষদকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের। এ দিনের লোডশেডিং ফের পর্যটন প্রসারের পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ডুয়ার্সের বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করে পর্যটন প্রসার হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। সরকারি রিসর্টও তৈরি করা হয়েছে। তবে সরকারি আহ্বানে পর্যটক এলে তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চয়তা করার কোনও পদক্ষেপ নেই বলেই স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে কেন এমন টানা লোডশেডিং হবে সে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরেরা।

পর্ষদের দাবি, বাজ পড়ে যন্ত্রাংশ বিগড়ে যাওয়াতেই বিপত্তি। যদিও, বাসিন্দাদের অভিযোগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই সামান্য ঝোড়ো হাওয়া বা বৃষ্টি শুরু হলেই লোডশেডিং হয়ে যায়। বিদ্যুত সংযোগ স্বাভাবিক হতে লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রবিবারই রাত থেকে লোডশেডিং চলায় বেশ কিছু রিসর্টে পানীয় জল সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জল কষ্ট শুরু হয় লাগোয়া গ্রাম এবং বনবস্তিগুলিতেও। ডুয়ার্সের মেটেলির বাতাবাড়ি, টিলাবাড়ি, বড়দিঘি বিটের বিস্তীর্ণ এলাকায় সোমবার দিনভর জলকষ্ট ছিল। মেটেলি বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের স্টেশন ম্যানেজার নবীন কুমার দাবি করেছেন, রবিবার রাতে বাজ পড়ে চালসা থেকে বাতাবাড়ি বিদ্যুতের প্রধান লাইনের কিছু যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রধান বিদ্যুতের তারে অনেক যন্ত্রাংশ থাকে। ঠিক কোনটি বা কতগুলি যন্ত্রাংশ খারাপ হয়েছে চিহ্নিত করাটাই সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। সে কারনেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’’

গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া এবং বনবস্তি এলাকায় অন্তত ৫০টিরও বেশি সরকারি, বেসরকারি রিসর্ট রয়েছে। জঙ্গল এবং লাগোয়া এলাকায় হওয়ায় সেখানে শব্দ এড়াতে জেনারেটর চালানোর নিধেধাজ্ঞা রয়েছে। সে কারণে বেশ কিছু রিসর্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাটারি সংযোগও রাখে। তবে লোডশেডিং হওয়ার পরে এক বা বড়জোর দু’ঘণ্টার বেশি ব্যাটারিতে বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হয় না। গত রবিবার সন্ধ্যায় লোডশেডিং শুরু হওয়ার পরে রিসর্টগুলিতে বেশ কিথুক্ষণ ব্যাটারির আলো দেখা গেলেও, তারপরে অন্ধকার হয়ে যায়। মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘরে থাকতে হয়েছে পর্যটকদের। স্থানীয় ট্যুর অপারেটরদের দাবি, পর্যটনকেন্দ্র যে এলাকাগুলিতে বেশি রয়েছে, সেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিত করার দাবি একাধিকবার জানানো হলেও, ফল হয়নি। আশেপাশের লোকালয়ের থেকে পৃথক লাইনে বিদ্যুৎ সরবাহ করার দাবি উঠেছিল। যাতে দূরের কোনও এলাকায় যান্ত্রিক ক্রুটি হলে তার আঁচ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে না পোহাতে হয়। তাও হয়নি। উল্টে নিত্যদিনের লোডশেডিং দুর্ভোগে পর্যটকদের নাকাল হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। বাড়ছে বাসিন্দাদের দুর্ভোগও। গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রিসর্টগুলিতে বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক মিটার সংযোগ রয়েছে। পর্যটন এই এলাকার একটি অন্যতম শিল্পও। তারপরেও কেন বিদ্যুতের এমন বেহাল দশা থাকবে তাই আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। পর্যটকদের কাছেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।’’ দিল্লি থেকে ডুয়ার্সের জঙ্গলে ঘুরতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী রাজীব প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বিজ্ঞাপন দেখেই গরুমারা জঙ্গলে এসেছিলাম। সকাল থেকে ভালই সাফারি হয়েছে। তবে এমন টানা লোডশেডিং হবে ভাবিনি। এতো আমন্ত্রণ করে বাড়িতে ডেকে অন্ধকারে বসিয়ে রাখা!’’

ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকার রাজনৈতিক মহলেও। সিপিএমের মেটেলি জোনাল কমিটির নেতা গোপাল সাউ বললেন, ‘‘বিদ্যুতের সমস্যা আজ থেকে নয়। সামান্য ঝড়, বৃষ্টি হলেই যে একদিন বিদ্যুৎ থাকবে না সেটাই ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলেরও। মেটেলি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সোনা সরকার নিজেও বাতাবাড়িতে থাকেন। তাঁর বাড়িতেও গত রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পর থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে। রবিবার সারারাতের পরে সোমবার দুপুর হতে চললেও আর বিদ্যুৎ এল না। বিদ্যুত দফতরে ফোন করেও কোন সাড়া মেলে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lataguri tourist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE