Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আবর্জনায় নাকাল মেডিক্যাল

হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘেঁষে পড়ে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। তার গন্ধে ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আবর্জনার গন্ধে করিডর দিয়ে যাতায়াত করতেও সমস্যা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জরুরি বিভাগের সামনে জমে রয়েছে জঞ্জাল। — নিজস্ব চিত্র

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জরুরি বিভাগের সামনে জমে রয়েছে জঞ্জাল। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০২:২৬
Share: Save:

হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘেঁষে পড়ে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। তার গন্ধে ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আবর্জনার গন্ধে করিডর দিয়ে যাতায়াত করতেও সমস্যা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে। রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালের ক্যাম্পাস জুড়েই ওয়ার্ডের লাগোয়া অংশে ফেলা হচ্ছে চিকিৎসা বর্জ্য-সহ অন্যান্য আবর্জনা। মেডিসিন বিভাগ, জরুরি বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ সর্বত্রই একই পরিস্থিতি। দিনের পর দিন এভাবেই আবর্জনা জমে হাসপাতালের পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠেছে। এমনকী ওই আবজর্নার জেরে ওয়ার্ডে জানলার ধারে থাকা রোগীদের শরীর অনেক সময় আরও খারাপ হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ তাঁদের পরিজনের।

অন্তত মাস পাঁচেক আগে হাসপাতালের আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয় রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে। অথচ সেই কাজ আজও শুরু হয়নি। কেন আবর্জনা সাফাই করা যায়নি? হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা বলেন, ‘‘ সাফাইয়ের কাজ একটি অভিজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সংস্থার নাম রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকের নথিতে ভূল লেখা হয়েছে। এর ফলেই সমস্যা বেড়েছে।’’ নথিতে এক নাম আর বাস্তবে ওই সংস্থার নাম অন্য হওয়ায় এখন ওই কাজ করালে পরে আর্থিক অনিয়ম-সহ নানা প্রশ্ন উঠতে পারে বলে জানান তিনি।। সম্প্রতি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি জানিয়েছেন, ওই নামটি যে ভুল করে লেখা হয়েছে তা জানিয়ে চিঠি দিতে। সেই মতো ভূল সংশোধন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান নির্মলবাবু। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে তাতেও। সাফাইয়ের কাজের বিষয়টি দেখভাল করছেন ডেপুটি সুপার। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি দীর্ঘ দিন ছুটিতে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে ফের তিনি ছুটিতে গিয়েছেন। আগামী সোমবার তাঁর কাজে যোগ দেওয়ার কথা। তিনি আলার পরেই সাফাইয়ের কাজ করানোর বিষয়টি দেখা হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তা ছাড়া মাঝে নির্বাচনী বিধি নিযেধের জেরেও কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া করা সম্ভব হয়নি বলে হাসপাতাল সুপার দাবি করেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আবর্জনা নষ্ট করার পদ্ধতি মেনে কাজ করে ওই সংস্থা। তাদের দিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতরের এবং বাইরের সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করানো হবে। প্রথম দফায় পরিষ্কার করার পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফাতেও তারা ওই কাজ করবেন। সেই কাজের মান দেখে পরবর্তীতেও ওই সংস্থাকে দিয়ে সাফাইয়ের কাজ করানোর বিষয়টি ঠিক হবে বলে জানান তিনি।

কিন্তু কবে সাফাই শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। রোগীর আত্মীয়দের কয়েকজন জানান, হাসপাতালের করিডর দিয়েও দুর্গন্ধের জন্য হাঁটা যায় না। মেডিসিন বিভাগের পিছনের গেট দিয়ে আইডি ওয়ার্ডে যাতায়াতের যে করিডর রয়েছে ওই অংশে নোংরা অবর্জনার জেরে যাওয়াই দায়। চিকিৎসকদের এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সেখান দিয়ে যাতায়াত করতেই হয়। বিপাকে পড়েন তাঁরাও। এমনকী রোগীদের জন্য রান্নার জায়গা থেকে খাবার আনা হয় ওই করিডর দিয়েই। জরুরি বিভাগে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় পবিত্র বর্মন বলেন, ‘‘ওয়ার্ডের জানলার সামনে দাঁড়ালেই দুর্গন্ধে গা গোলায়। রোগীরা তো এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তা ছাড়া ওয়ার্ডের ভিতরে শৌচাগারের পরিস্থিতিও মারাত্মক।’’ এক স্বাস্থ্য কর্মীর কথায়, ‘‘মেডিসিন বিভাগের শৌচাগারে জমে থাকা নোংরায় পোকা ঘুরে বেড়ায়। সেই পোকা রোগীদের খাবারে উড়ে বেড়াচ্ছে। রোগীরা আমাদের অভিযোগ করেন। কিন্তু কিছু করার নেই।’’ বহিবির্ভাগে চিকিৎসা করাতে আসা নিখিল রায়, প্রতিমা বর্মনরা জানান, দুর্গন্ধের জেরে করিডরে দাঁড়ানো যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical collage and hospital Trash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE