প্রতীকী ছবি।
দুপুরে বাড়িতেই খেলছিল দু’বছরের ছেলে উমর ফারুক। তারপর থেকে নাকি আচমকাই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। কিন্তু সেই ছেলের খোঁজে পুলিশে নয়, বাবা-মা সহ পরিবার দারস্থ হয়েছেন গুণিনের কাছে। গুণিন নিদানও দিয়েছেন যে, সাত দিন পর তাঁদের ছেলে বাড়ি ফিরে আসবে। আর গুণিনের সেই নিদানের ভরসাতেই ছেলের বাড়ি ফেরার আশায় পথ চেয়ে বসে রয়েছেন বাবা-মা। এ ঘটনা ইংরেজবাজার ব্লকের নরহট্টা পঞ্চায়েতের বাবুপুর গ্রামে।
ওই গ্রামের অনেকেই একই কথা বলছেন। তাঁরা গুণিনের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। তাঁরা চান প্রশাসন হস্তক্ষেপ করুক। কেন প্রশাসন হস্তক্ষেপ করছে না, সে প্রশ্ন উঠেছে। গোটা গ্রাম জুড়েই এখন এই শিশু-অন্তর্ধান নিয়ে জোর চর্চা চলছে। অনেকেই বলছেন, প্রশাসন হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে ওই শিশুটিকে খোঁজার চেষ্টা করুক।
মহিদুর পেশায় দিনমজুর। মাঝেমধ্যে ভিন রাজ্যেও কাজে যান। এখন বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী জাসমিরা খাতুন। তাঁদেরই একমাত্র ছেলে দু’বছরের উমর ফারুক। পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরের দিকে বাড়িতেই একটি বেড়ালের সঙ্গে খেলছিল উমর। জাসমিরা সে সময় রান্না করছিলেন ও তাঁর স্বামীও কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ওই ছেলের আর কোনও হদিস নেই। পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও এলাকায় তন্নতন্ন করে খোঁজ করেছেন, পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদীতে জাল ফেলেও দেখা হয়। কিন্তু উমরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেষপর্যন্ত শনিবার মহিদুর ও জাসমিরা সহ পরিবারের কয়েকজন স্থানীয় এক গুণিনের কাছে যান। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সেই গুণিন নিদান দিয়েছেন যে, উমর সাত দিনের মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসবে।
ছেলে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি থানায় না জানিয়ে গুণিনের কাছে কেন? মহিদুর বলেন, একমাত্র ছেলে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে মাথা কাজ করছিল না। সে সময় পরিবারে অন্যরাই গুণিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমিও যাই। কয়েকদিন দেখি, তারপর থানায় জানাব।’’ জাসমিরাও জানিয়েছেন, গুণিনের নিদানের ভরসাতেই তিনি ছেলের পথ চেয়ে রয়েছেন। তবে সাত দিন পর ছেলে বাড়ি না ফিরলে থানায় অবশ্যই বিষয়টি জানাবেন।
এ দিকে ছেলে আচমকা নিখোঁজ হওয়ার খবর রটে যেতে ওই বাড়িতে প্রতিবেশীরা তো বটেই এমনকী পাশের গ্রামের বাসিন্দারাও ভিড় করছেন। বাবুপুর গ্রামের বাসিন্দা সামিম শেখ, সাদিকূল ইসলাম, ইমাত আলিরা বলেন, ‘‘আমরাও ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়েছি। এই যুগে গুণিনের নিদান অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু ওই পরিবার বা গ্রামের অনেকেই এখনও সেই ভরসাতেই রয়েছেন।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের জেলা সম্পাদক সুনীল দাস বলেন, ‘‘এখনও অনেক মানুষ কুসংস্কারে বিশ্বাসী। আমরা ওই গ্রামে গিয়ে বোঝাব। পুলিশের কাছে গিয়ে মিসিং ডায়েরি করতে বলব।’’ ইংরেজবাজার থানার আইসি পূর্ণেন্দু কুণ্ডু বলেন, ওই এলাকা থেকে নিখোঁজ সংক্রান্ত কোনও ডায়েরি এ দিন পর্যন্ত হয়নি। হলে অবশ্যই পদক্ষেপ হবে। বিডিও দেবর্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। তবে প্রশাসন ওই গ্রামে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy