Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভ্যাটিকানে যাবেন কি না, জানেন না মনিকা

আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভ্যাটিক্যান সিটি মাদার টেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করতে চলেছে। হাতে আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। অথচ দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের সেই প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী বধূ মনিকা বেসরা বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না। মাদারকে সেন্ট হুড উপাধি দেওয়ার খবরে অবশ্য উচ্ছ্বসিত মনিকাদেবী।

অনুপরতন মোহান্ত
হরিরামপুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভ্যাটিক্যান সিটি মাদার টেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করতে চলেছে। হাতে আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। অথচ দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের সেই প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী বধূ মনিকা বেসরা বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না। মাদারকে সেন্ট হুড উপাধি দেওয়ার খবরে অবশ্য উচ্ছ্বসিত মনিকাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি। তবে কবে দেওয়া হবে, জানি না।’’ এ বিষয়ে কলকাতার মাদারের অফিস থেকে তাঁর সঙ্গে এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি বলে মনিকাদেবী জানিয়েছেন। তার বড় ছেলে গোপীনাথ মুর্মু বলেন, এর আগে তাঁর মাকে দু’বার কলকাতায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বারে এখনও কেউ-ই তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি বলে গোপীনাথ জানান। তাই মাদারের সন্ত ঘোষণার দিন মনিকাদেবীকে ভ্যাটিক্যানে নিয়ে যাওয়া হবে কি না, তা ধোঁয়াশাই রয়েছে। মাদারকে সন্ত ঘোষণার দিন তবে কি মনিকা বেসরাকে হরিরামপুরের গ্রামের মাটির বাড়িতে পড়ে থাকতে হবে?

অথচ প্রায় এক যুগ আগে গত ২০০৪ সাল নাগাদ প্রত্যন্ত এলাকার গরিব আদিবাসী বধূ মনিকা বেসরাকে নিয়ে মাদারের কলকাতার কার্যালয় থেকে ভ্যাটিক্যান সিটির আগ্রহ ছিল দেখার মতো। কেননা, ওই বছরই অসুস্থ মনিকাদেবীর পেটের টিউমারটি মাদারের আশীর্বাদ ও অলৌকিক শক্তির প্রভাবে রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় বলে রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে দাবি করা হয়েছিল। ঈশ্বরের দূত কিংবা সন্ত ঘোষণার আগে অন্তত দু’টি অলৌকিক ঘটনার প্রমাণ সামনে আনতে হয়। ওই দু’টির মধ্যে প্রথম সারিতে চলে আসে মনিকা বেসরার টিউমার গায়েব হওয়ার ঘটনাটি। পরে অনুরূপ ভাবে ব্রাজিলের এক মহিলার সুস্থ হওয়ার ঘটনাকে দ্বিতীয় অলৌকিক ঘটনা বলে ধরা হয়েছিল।

নিজের বাড়িতে মাদারের ছবিতে প্রণাম মনিকার।

মনিকার অসুখ মাদারের অলৌকিক প্রভাবে সেরেছে কি না তা নিয়ে তর্ক ওঠে। বালুরঘাট হাসপাতালের প্রাক্তন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন মুস্তাফি বলেছিলেন, মনিকাদেবীর পেটে সিস্টের মতো হয়েছিল। দীর্ঘ দিন ওষুধ খাওয়ার ফলে সিস্টটি সেরে গিয়েছিল। মনিকাদেবী দীর্ঘ দিন ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো ওষুধ খেয়েছিলেন, তা তাঁর স্বামী সেলকু মুর্মুও স্বীকার করছেন।

তবে মনিকার কথায়, ২০০৪ সাল নাগাদ তিনি অসুখে কষ্ট পাচ্ছিলেন। বালুরঘাটের পতিরামের এক গির্জার সেবাকেন্দ্রে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। মাদারের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন প্রার্থনার সময় তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় সিস্টার তাঁর কোমরে ষিশুর মূর্তি লাগানো একটি কালো সুতো বেঁধে দিয়ে মাদারকে স্মরণ করতে বলে শুইয়ে রাখেন। ঘুম ভেঙে তিনি দেখেন তার পেটের টিউমারটি ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে। এরপরই মাদারের অলৌকিক ক্ষমতায় তাঁর আরোগ্য লাভের খবর জেলা থেকে কলকাতার মাদারের প্রধান অফিসে পৌঁছে গেলে রাতারাতি প্রত্যন্ত গ্রামের ওই আদিবাসী বধূ মনিকার গুরুত্ব বেড়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother teresa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE