এমন পাঁচটি জারেই উদ্ধার হয় সাপের বিষ। সঙ্গে ধৃতেরা। — নিজস্ব চিত্র
সাপের বিষ ভরা পাঁচটি জার নিয়ে কখনও কলকাতা তো কখনও শিলিগুড়ি ছোটাছুটি করছিল দলটি৷ উদ্দেশ্য ছিল মনের মত ক্রেতা ধরা৷ ক্রেতা মিললেও দামে কোনভাবেই পোষাচ্ছিল না৷ শেষপর্যন্ত ক্রেতা ভেবে শুক্রবার গভীর রাতে কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করতে যেতেই বাধল বিপত্তি৷ যাদেরকে তারা ক্রেতা ভেবেছিল তাঁরা যে আসলে বন দফতরের আধিকারিক ও কর্মী! ফুলবাড়ি এলাকায় পৌঁছতেই সাপের বিষ-সহ চারজনকে ধরে ফেলেন তাঁরা৷
শুক্রবার জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ির ঘটনা। বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত জানিয়েছেন, ওই সাপের বিষের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন হলেও কালোবাজারে ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনকী ২০০ কোটি অবধিও উঠে যেতে পারে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রও। বন দফতর সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি জারে সাপের বিষ মিলেছে। প্রতিটি জারে থাকা বিষের পরিমাণ প্রায় ২ কেজি। ধৃতদের কাছ থেকে একটি রিভলবার, চার রাউন্ড কার্তুজ ও একটি গাড়ি আটক করা হয়েছে৷ ধৃতদের নাম সুজয় কুমার দাস, বিপুল সরকার, পিন্টু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমল নুবিয়া৷ এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ, গঙ্গারামপুর এবং বালুরঘাট সীমান্ত এলাকায়। অমলের বাড়ি মালদহে। বন দফতরের অফিসারদের অনুমান সাপের বিষ পাচারের এই চক্রে ৩০ থেকে ৩৫ জন জড়িত রয়েছে৷
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি এই বিষ বাংলাদেশ থেকে হিলি সীমান্ত দিয়ে বালুরঘাটে আসে৷ সেখান থেকে এই দলটি তা নিয়ে যায় কলকাতায়৷ খবর পেয়ে নজরদারিতে নেমে ফাঁদ পাতার ছক কষে বন দফতর। শুক্রবার গভীর রাতে ফুলবাড়ি এলাকায় সাপের বিষের পাঁচটি জার নিয়েই আসে দলটি৷ সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, এই চক্রে ভিন দেশের বেশ কিছু মাথা রয়েছে৷ সেইসঙ্গে এ রাজ্যের বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন৷ এদের মধ্যে একজন শিক্ষকও রয়েছেন৷ ধৃতদের জেরায় পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে এ বার তাদের ধরার চেষ্টা হবে বলে জানান সঞ্জয়৷ শনিবার ধৃত পাঁচজনকে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে তাদের দশদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক৷ সরকার পক্ষের আইনজীবী অভিজিৎ সরকার জানিয়েছেন, ধৃতদের ফের ২৪ অক্টোবর আদালতে তোলা হবে৷
কী ভাবে আসছে এই সাপের বিষ? বন দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, হিলি সীমান্তের অনেকটা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নেই। উন্মুক্ত ওই সমস্ত সীমান্তের চোরাপথ সহজে ব্যবহার করেই এ পারে ঢুকে মিশে যেতে সক্ষম হচ্ছে পাচারকারীরা। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় ধরা পড়ে জার ভর্তি সাপের বিষ। ওই সূত্র ধরে গত বছরের ৩১ অগস্ট সকাল ১১টা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি থানার মোল্লাপাড়া এলাকায় রাজ্য সড়কে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে বন দফতরের ওই বিশেষ দল দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) দীপর্ণ দত্ত জানান, তাদের কাছ থেকে সাপের বিষের তিনটি জার ও ফ্রান্সের তৈরি একটি রিভলভার আটক করা হয়েছিল। এ বারেও ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরের একাধিক বাসিন্দা থাকায় সীমান্ত লাগোয়া জেলায় পাচার চক্র ভালমতোই জাল বিছিয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ ও বন দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy