Advertisement
১০ মে ২০২৪

দু’জনের দেখা হল, কথা হল না

গত ২৯ জুন জলপাইগুড়ির কদমতলা বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে মৃত্যু হয় এলআইসির ডেভলপমেন্ট অফিসার উত্তম মোহান্তের।

হাজিরা: আদালত চত্বরে অনির্বাণ। ছবি: সন্দীপ পাল।

হাজিরা: আদালত চত্বরে অনির্বাণ। ছবি: সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৩:০৪
Share: Save:

ঠিক দু’মাসের মাথায় ফের দেখা হল দু’জনের৷ কিন্তু নিজেদের মধ্যে কথা বলা তো দূর, সে ভাবে কেউ কারও দিকে তাকালোই না৷ উল্টে একে অপরের দিকে আঙুল তুলতেই যেন ব্যস্ত থাকল তারা৷

গত ২৯ জুন জলপাইগুড়ির কদমতলা বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে মৃত্যু হয় এলআইসির ডেভলপমেন্ট অফিসার উত্তম মোহান্তের। উত্তমবাবুর দাদারা অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রী লিপিকা ও তার প্রেমিক অনির্বাণ মিলেই তাকে খুন করেছে। ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ ৩০ জুন গ্রেফতার করা হয় লিপিকাকে। কিন্তু পালিয়ে গিয়েছিল অনির্বাণ। সম্প্রতি, হাওড়ার গোলাবাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ এরপর আদালতের অনুমতিতে বুধবার অনির্বাণকে নিয়ে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে যায় পুলিশ৷ উদ্দেশ্য একটাই, লিপিকার মুখোমুখি বসিয়ে অনির্বাণকে জেরা করা৷

বেলা পৌনে একটা নাগাদ সংশোধনাগারের আলাদা একটি ঘরে শুরু হয় জেরা৷ জেরা চলে ৪৫ মিনিট৷ পুলিশ ও সংশোধনাগার সূত্রের খবর, দু’দিকে দু’টি চেয়ারে লিপিকা ও অনির্বাণকে বসিয়ে মাঝে বসেন কোতোয়ালি থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার৷ লিপিকার পাশে একজন মহিলা পুলিশ কর্মীও ছিলেন৷

পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, মেয়েদের প্রতি দুর্বল ছিল অনির্বাণ৷ আর সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই তার আরেক প্রেমিকাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে গত শুক্রবার গোলাবাড়ি থেকে অনির্বাণকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ সংবাদ-পত্রে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর সংশোধনাগারে থাকা লিপিকার কানেও তা যায়৷ এ দিন দু’জনকে মুখোমুখি বসাতেই লিপিকা অনির্বাণের মুখের দিকে না তাকিয়েই রীতিমত বিরক্তির সুরে তাকে জিজ্ঞাসা করে, “ওই মেয়েটি কে?” অনির্বাণ এর কোনও উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে৷

গ্রেফতার হওয়ার পর জলপাইগুড়িতে এসে পুলিশের জেরায় অনির্বাণ বলেছিল, লিপিকা ও শ্বেতাই তাকে মেরে ফেলেছে৷ এ দিন মুখোমুখি জেরার সময় পুলিশ কর্তারা অনির্বাণকে সেই কথা মনে করালে, সে যে তা বলেছিল তা স্বীকার করে নেয়৷ আর তখনই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে লিপিকা৷ সে বলে, ‘‘স্যার, ও নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা কথা বলছে৷’’

পুলিশ এতদিন তদন্তে তারা জানতে পেরেছিল মৃত্যুর আগে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তমবাবুকে খাটের সঙ্গে বেধে রাখা হতো৷ কিন্তু এ দিন মুখোমুখি জেরা করার পর জানতে পেরেছে, কাঠের বাটাম দিয়েও অসুস্থ উত্তমবাবুকে পেটানো হতো৷ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বিষ প্রয়োগ বা মৃত্যুর বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি৷ তাই এ ভাবে দীর্ঘদিনের অত্যাচারও একটা মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে মনে হচ্ছে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE