রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি পরীক্ষার উত্তরবঙ্গের আট জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষের মতো। শুধু শিলিগুড়ি মহকুমায় ১০৪টি সেন্টারে পরীক্ষা দিয়েছেন ৫১ হাজার। যার একটা বড় অংশ বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। শনিবার রাত থেকে রবিবার সাতসকালে যাদের মধ্যে অন্তত হাজার সাতেক হাজির ছিলেন এনজেপি স্টেশনে।
শনিবার রাতে ব্রহ্মপুত্র মেলে কয়েক জন পরীক্ষার্থী উঠেও যান। কিন্তু এ দিন সকালে চেহারা পুরোপুরি বদলে যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার দশেক পরীক্ষার্থীদের প্রথমে দফতরে দফতরে ঘোরাঘুরি, বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ, এক দফায় অওধ অসম এক্সপ্রেসে জোর করার ওঠার চেষ্টা করেন। তা না পেরেই শুরু হয় তাণ্ডব। ক্ষোভ বদলে যায় রণক্ষেত্রে। রেলের দাবি, সব মিলিয়ে দেড় কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হল তাদের।
কিন্তু এমনটা হল কেন! পরিকল্পনার গলদে এ দিনের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে মনে করছেন সব পক্ষই।
রেল সূত্রের খবর, লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী উত্তরবঙ্গে এলেও রেলের কাছে সরকারি ভাবে সেই খবর দেওয়া হয়নি। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে কয়েক দিন আগে রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুটি হেল্প ডেক্সের জায়গা চাওয়া হয়েছিল। তা দেওয়া হলেও আলাদা ট্রেনের কথা বলা হয়নি। পরীক্ষার আগে গত এক মাসে সরকারি স্তরে কলকাতা থেকে জেলাস্তর অবধি পুলিশ, প্রশাসন, পরিবহণ দফতরের অফিসারদের একাধিকবার বৈঠক হলেও রেলের বিষয়টি ভাবাই হয়নি। তাতে অন্য পরীক্ষা বা ইভেন্টের মতো স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থাই ছিল না। উপরন্তু সরকারি বাসগুলি বিভিন্ন গন্তব্য থেকে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে স্টেশনের বাইরে ছেড়েও যায় বলে রেলের অফিসারদের দাবি। এ দিন তড়িঘড়ি ১৯ কামরার স্পেশাল ট্রেন পটনায় পাঠানো হলেও তাতে পরীক্ষার্থীদের টিকিট কাটার প্রশ্নই ছিল না। আগাম স্পেশাল ট্রেনের ঘোষণা থাকলে সকলে টিকিট কেটেই যেতেন।
এনজেপি স্টেশন ডিরেক্টর পার্থসারথী শীল বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে আগে বৈঠক করলেও সমস্যা হত না। আলাদা ১-২ ট্রেনের ব্যবস্থা করাই যেত। তা না করে বাসে বাসে স্টেশনে ছেলেগুলিকে নামিয়ে চলে গেল!’’ প্রশাসনের যুক্তি, এমন পরীক্ষার ঘোষণা হলে রেলের তরফেই আগাম ব্যবস্থা রাখা হয়।
তবে হুট করে আরপিএফের লাঠিচার্জ বা আধা সামরিক বাহিনীকে নামানোয় আরও পরিস্থিতি খারাপ হয় বলে রেল পুলিশ মনে করছে। রেল পুলিশের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, এক একটি ট্রেনে অল্প অল্প করে পরীক্ষার্থীদের তোলা হচ্ছিল। কোচবিহার, এনজেপিতেও তা হচ্ছিল। কিন্তু লাঠিচার্জেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রাতজাগা, আধপেটা ছেলেদের দল ক্ষেপে ওঠে। শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার আন্নাপা ই বলেন, ‘‘লার্ঠিচার্জে সমস্যা বাড়ে। ক্ষুব্ধদের কথা শুনে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করাই যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy