Advertisement
০৯ মে ২০২৪

হারিয়েছে রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড নিয়ে আক্ষেপ

ব্যবসা এবং উন্নত শহরের জন্যে চাই নতুন রাস্তা। উন্নত যোগাযোগ। কিন্তু মালবাজার পুরসভায় গত দুই দশকে নতুন রাস্তা তৈরি হওয়া তো দূর অস্ত্, লুপ্ত হয়ে গেছে শহরের একটি জনপ্রিয় রাস্তাও।

পরিষেবা বেহাল, ক্ষুব্ধ শহরবাসী। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

পরিষেবা বেহাল, ক্ষুব্ধ শহরবাসী। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

সব্যাসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০২:০৩
Share: Save:

ব্যবসা এবং উন্নত শহরের জন্যে চাই নতুন রাস্তা। উন্নত যোগাযোগ। কিন্তু মালবাজার পুরসভায় গত দুই দশকে নতুন রাস্তা তৈরি হওয়া তো দূর অস্ত্, লুপ্ত হয়ে গেছে শহরের একটি জনপ্রিয় রাস্তাও। মালবাজার শহরের উত্তর কলোনি এবং নেতাজি কলোনি হয়ে ৪ এবং ৫নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে যে রাস্তাটি হাসপাতালের পিছন দিয়ে সরাসরি থানার কোয়ার্টার্সগুলোর পাশ দিয়ে স্টেশন রোডে উঠে যেত, তা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেওয়াল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মালবাজার থানা কোয়ার্টার্সের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে জানিয়ে দেওয়াল তুলে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেওয়াল দিয়ে বন্ধ সেই পথ আজ ঝোপ জঙ্গলে ঢেকেছে। দেওয়ালের মাঝে তিন ফুটের গেট দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করলেও রাতের দিকে আলোর অভাবে এই পথ দিয়ে যেতে ভয় পান পথচারীরা। অথচ এই পথে গাড়ি চলাচল থাকলে একদিকে যেমন যাতায়াত সহজ হত তেমনি ঘড়িমোড়ের ওপরেও চাপ কমে যেত বলেই ব্যবসায়ীদের মত।

তবে তৃণমূল পরিচালিত মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সাহা অবশ্য বাসস্ট্যান্ড এবং বন্ধ সড়ক ফের চালু করার বিষয়ে আশা দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ডের জমিটি জেলা পরিষদের অধীনে থাকায় পুরসভা হস্তক্ষেপ করতে পারত না। আমরা এ বারে বাসস্ট্যান্ডের এলাকাটি জেলা পরিষদের থেকে লিজে নিয়ে নিয়েছি। এখন পুরসভাই বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়ন করবে। দ্রুতই বাসস্ট্যান্ড সাজাবার কাজ শুরু হবে।’’ থানার অধীনে থাকা বন্ধ হয়ে যাওয়া রাস্তা খোলাতে পুরসভা উদ্যোগী হবে বলেও স্বপন সাহা জানান।

জমিটি যে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে তা জানেন মালবাজারের মহকুমাশাসক। মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতির কথায়, ‘‘আমি এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। প্রেক্ষাগৃহ বা মুক্তমঞ্চ এখানে করা যায় কি না সেটি খতিয়ে দেখছি।’’ থানার পেছনের এই এক সময়ের জনপ্রিয় এই রাস্তা বন্ধ হওয়ায় কার্যত মালবাজারের ব্যস্ততম রাস্তা স্টেশন রোডে পৌছতে হলে জাতীয় সড়ক বাদে একমাত্র পথই হল বিবেকানন্দ রোড। যা বিদ্যুৎ দফতরকে পাশে রেখে ঘড়ি মোড়ে গিয়ে ওঠে। সেই পথও সঙ্কীর্ণ।

শহরের অন্যতম জনপ্রিয় রাস্তার এই করুণ দশা হওয়ার ফলে ঘড়িমোড়ের সামনের মোড়ে একটি লরি দাঁড়িয়ে গেলেই ভুগতে হয় পথচারীদের। স্টেশন রোডের থেকে ২ কিমি ঠিক বিপরীতে শহরের পূর্ব প্রান্তে বাজার রোড এবং বাটাইগোল বাজার এলাকার পথেও এখন সঙ্কীর্ণতার ফলে যানজট লেগেই থাকে। মালবাজার শহরের ৩কিমি পথে বাজার রোডে দুটো লরি পাশাপাশি চলতেই হিমশিম খায়। রবিবারের সাপ্তাহিক হাটের দিনে শহরের ক্যালটেক্স মোড় দিয়ে বাজার রোডের পথে যারা বড়দিঘি যান তাঁদের তিন কিমি রাস্তা পেরোতেই আধঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।

এতো গেল পথের কথা। পথ নির্মাণ এবং সংস্কারের দায়িত্বে যারা সেই মালবাজার পুরসভার সার্বিক অবস্থাও স্বাস্থ্যকর নয়। পুরসভা গঠনের পর থেকে আজ অবধি মালবাজার পুরসভা রাজ্যের পুরসভাগুলির মধ্যে সব থেকে তলানির গ্রেড অর্থাৎ ই ক্যাটাগরিতেই পড়ে রয়েছে। ফলে শহরের ওপর নানা পরিষেবামূলক চাপ বাড়লেও বরাদ্দ বাড়েনি।

পুরসভাতে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া টাকার পরিমাণ মাঝেমধ্যেই ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়। বিদ্যুতের বিলের দেনার টাকা প্রতিমাসেই বাড়ছে। অতিরিক্ত ১৬০টি পথবাতি জাতীয় সড়কে বসেছে। বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বোঝা যে আরও বাড়ল তা আড়ালে স্বীকার করছেন পুরসভার কর্মীরাও। সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু মতবাদ বা নিদান অবশ্য আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বিরাট অংশের এলাকাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মালবাজার পুরসভা পরিষেবা দিলেও শহরতলির সেই এলাকাগুলির পুরসভায় অন্তর্ভুক্তি এখনো ঘটেনি।

মালবাজার শহরের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে নিউ মাল এলাকা। মূলত নিউ মাল জংশনের জন্যেই নিউ মাল এলাকার গুরুত্ব। মালবাজার শহর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে থাকা নিউ মাল রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত। আলো, বর্জ্য সাফা‌ইয়ের মতো একাধিক ক্ষেত্রে পুরসভার তরফ থেকে পরিষেবা নিউ মাল এলাকাতে রয়েছে। প্রায় তিন হাজারের মতো নিউ মাল এলাকার বাসিন্দাদের পুরসভায় অন্তর্ভুক্তি হলে নাগরিক পরিষেবাও বহুগুণে বেড়ে যাবে। একই চিত্র মালবাজারের ক্ষুদিরাম পল্লি এলাকাতেও। প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি বাসিন্দা মালবাজার শহরের ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের গা ঘেঁষে বাস করেন। পুরসভার ওপরেই তাঁরা বিভিন্ন কারণে নির্ভরও করেন। এমনকি বিধাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষুদিরাম পল্লি এলাকাটির থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরের দূরত্ব যেখানে ১৪কিমি, সেখানে মালবাজারের পুরসভা দফতর মাত্র দেড় কিমি দূরত্বে।

একই রকম ভাবে শহরের দক্ষিণ অংশে তেশিমিলা গ্রাম পঞ্চায়েতেও এখন নগরায়ণের ছায়া পড়তে শুরু করেছে। জমির অভাবে তেশিমিলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দিকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন মালবাজার এলাকার অনেক বাসিন্দাই। কৃষিজমি উধাও হয়ে আচমকাই ঝাঁ চকচকে রুপ নিতে চলা তেশিমিলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাংশে মালবাজার পুরসভার অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন পুরনাগরিকেরা। বর্তমানে ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত মালবাজার পুরসভায় প্রায় চল্লিশ হাজার পুর নাগরিক বাস করেন। ১৫ ওয়ার্ডের পুর এলাকার সঙ্গে শহরতলির এলাকা যুক্ত হলে পুরসভার সামগ্রিক কর আদায় যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি পুরসভার সামগ্রিক মানন্নোয়নও হতে পারে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।

তবে শহরের সবটাই যে হতাশার তা-ও নয়। গত ১৪ বছর আগে মালবাজার মহকুমা প্রতিষ্ঠা পেলেও মহকুমাশাসকের কোনও স্থায়ী দফতর ছিল না। জেলা পরিষদের সুপার মার্কেট চত্বরেই ভাড়ার ঘরে চলত অফিস। এবারে গত ২মার্চ থেকে সেই দফতর স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে মালবাজার শহরের একসময়ের পূর্ত দফতরের নাগরাকাটা ডিভিশনের ভেতরে। গত বছরের অগস্টেই পূর্ত দফতরের নাগরাকাটা ডিভিশন উঠে যায়। এরপর থেকেই শহরের বুকে তিন একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে পূর্তদফতরের পরিকাঠামোতেই মহকুমাশাসকের স্থায়ী দফতরের রূপ দেবার কাজ শুরু হয়। বাসিন্দাদের আরও সুবিধাই হবে। সম্প্রতি মালবাজার পুরসভা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগকে শহরে বাতিল করেছে। দলমত নির্বিশেষে সকলেই এই সিদ্ধান্তে স্বাগতও জানিয়েছেন। তবে মালবাজার পুরসভার বিরোধী দল সিপিএমের বিরোধী দলনেতা সুপ্রতিম সরকারের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিকল্প ভাবনায় জোর দেওয়া উচিত।’’ (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malbazar Road Trinamool BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE