বালুরঘাটের সিপিএম প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরীকে ক্ষোভ জানাচ্ছেন আক্রান্তেরা। — অমিত মোহান্ত
আরএসপির কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর করে বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার গভীর রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মহান্তপাড়া এলাকার ঘটনা। হামলাকারীরা এনবিএসটিসির অস্থায়ী গার্ড রীতা হোসেনের কুঁড়ে ঘরে চড়াও হয়ে আগুন লাগিয়ে লুঠপাট করে বলে অভিযোগ। প্রতিবেশীরা আগুন নিভিয়ে ফেলায় বড় দুর্ঘটনা হয়নি। এরপর কয়েকটি বাড়ির দরজায় ইট ছুড়ে হুমকি দিয়ে দুষ্কৃতীরা চলে যায়।
হামলার ঘটনায় এ দিন তৃণমূলের ১৯ জন কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় আরএসপি-র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও একজনকেও ধরা হয়নি বলে অভিযোগ। আরএসপি-র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ধড়পাকড়ের নামে রাতে ওই এলাকায় পুলিশ হানা দিয়ে পুরুষ শূন্য করে দেওয়ার পর তৃণমূলের বাইক বাহিনী চড়াও হয়ে দলীয় কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। বালুরঘাটের বিরোধী জোট প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী অভিযোগ করেন, জোটের মিছিলে যোগ দিয়ে প্রচারের জন্য শাসক দলের কর্মীরা পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালাচ্ছে।
প্রথমে পুলিশ পাঠিয়ে কর্মী সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করে শাসক দলের কর্মীরা চড়াও হচ্ছেন। গত রবিবার রাতে ব্যক্তিগত মারপিটের ঘটনায় রাজনীতির রং চড়িয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করার পরে পুলিশ অতি তৎপর হয়ে রাতে এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিরীহ আরএসপি কর্মীদের গ্রেফতার করছে বলে বিশ্বনাথবাবু দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান বলেন, ‘‘দু’পক্ষের তরফে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত ও ধরপাকড় চলছে।’’
শাসক দলের বালুরঘাটের প্রার্থী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি বাইরে আছি। কিছু বলতে পারব না।’’ তৃণমূল নেতা দেবপ্রিয় সমাজদার অবশ্য বলেন, ‘‘ভোটের পরে রবিবার রাতে ওই এলাকায় আরএসপি কর্মীরা আমাদের এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে একজনকে মারধর করে। খোকন কর্মকার নামে দলীয় সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গ্রেফতারের ভয়ে আরএসপি মিথ্যা হামলার অভিযোগ তুলেছে।’’ বালুরঘাট থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘দু’পক্ষের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকা থেকে পুলিশ ৪ জন আরএসপি সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। এদিন ওই চার যুবককে বালুরঘাট আদালত থেকে পুলিশ ৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
এ দিন বিকেলে বিশ্বনাথবাবু ওই এলাকায় গিয়ে আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তার সঙ্গে ছিলেন আরএসপির জেলা নেতা বিমল সরকার, সুচেতা বিশ্বাস ও অমর সরকারেরা। রাত থেকে ঘর ছেড়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন রীতাদেবী। তার স্বামী জাকির হোসেনও ঘর ছাড়া। এলাকায় বিশ্বনাথবাবুব এসেছেন শুনে রীতদেবী এসে বলেন, ‘‘রাত দু’টো নাগাদ একদল দুষ্কৃতী বাড়িতে চড়াও হলে আমরা পালিয়ে যাই। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দলটি গ্যাস সিলিন্ডার, ওভেন লুঠ করে নিয়ে যায়। প্রতিবেশীদের চেষ্টায় দ্রুত আগুন নেভানোর ফলে বড় দুর্ঘটনা হয়নি।’’
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা গোপেন বিশ্বাসের বাড়ির দরজায় ইট, লাঠি মেরে শাসিয়ে চলে যায় ওই দলটি। তার আগে রাত ১টা নাগাদ পুলিশ এসে গোপেনবাবুর ছেলে গোলক বিশ্বাস, পাশের বাড়ির যুবক দীপক সাহা, শিবা ঠাকুর এবং শক্তি ঠাকুরকে ধরে নিয়ে যায়।
এলাকার মহিলারা বলেন, গত শনিবার ভোট দেওয়া নিয়ে দু’দলের মারপিট হয়। রবিবার ভোট গ্রহণের শেষে বাইক নিয়ে খোকন পড়ে গিয়ে চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরপর থেকে শাসক দলের কর্মীরা হুমকি দিচ্ছে, হামলাও করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy