অপেক্ষা: এনজেপি স্টেশনে গাড়ির ধরতে পর্যটকরা। নিজস্ব চিত্র
সাত সকালে দার্জিলিং মেলে এনজেপি স্টেশনে নেমে চোখ গেল দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে। কিন্তু দার্জিলিং পাহাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে।। তাই মন খারাপ হয়ে গেল দক্ষিণেশ্বরের শতাব্দী ঘোষ হাজরা, টালিগঞ্জের সিদ্ধার্থ দত্ত বা ঢাকুরিয়ায় মৌসম চক্রবর্তীদের। কেউ চললেন ডুয়ার্সের জঙ্গলে, কেউ বা সিকিমের পাহাড়ে।
কিন্তু দার্জিলিঙের প্রতি ভালবাসা কি তাতে যায়? শৈলশহরের ছবি মন থেকে মুছতে না পেরে, স্টেশনে নেমে শেষ একবার পরিস্থিতি জানতে কেউ সংবাদপত্রে চোখ বোলালেন, কেউ বা গাড়ির চালক, পুলিশকর্মীদের কাছে খোঁজও করলেন—যদি কোনওভাবে দার্জিলিং যাওয়া যায়।
মঙ্গলবার সকালে কাঞ্চনকন্যা, দার্জিলিং মেলে পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। বহু পর্যটকও এসেছেন। তবে অন্য বারের ষষ্ঠীর সকালের থেকে ছবিটা কিছু অনেকটাই অন্যরকম। গাড়ির সারি থাকলেও ঘোরার জন্য গাড়ির চাহিদা অনেকটাই কম। তাই দরাদরিও ছিল না বললেই চলে। কয়েক মাস আগেই সপরিবারে কালিম্পং থেকে ‘সিল্করুট’ ঘোরার পরিকল্পনা ছিল টালিগঞ্জের সিদ্ধার্থবাবুর। পরিকল্পনা বাতিল করেননি। বদলে সিকিমের রংপো হয়ে যতটা সম্ভব সিল্করুট দেখে নিতে চান। তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তার অভাব তো রয়েছেই। তাই কালিম্পঙে গেলাম না। সিকিম থেকে কিছু ঘুরেই দেখি আর কী!’’
টানা পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বেলঘরিয়ার দাশগুপ্ত পরিবারের। বাড়ির বধূ শ্রী বলেন, ‘‘দার্জিলিংটা যেন কেমন হয়ে গেল। তবে জোরজুলুম করে এ সব বেশিদিন চলে না। আমাদের দার্জিলিং পুরানো ছন্দে ফিরবেই। আপাতত পেলিং, গ্যাংটক ঘুরে যাই।’’ হাওড়ার তরুণী রিয়া মেটে’র আক্ষেপ এত লম্বা ছুটি পেয়েও দার্জিলিং ম্যালে বসার আনন্দ, পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটা বা মিরিক লেকের মাছগুলির দেখা মিলল না। রিয়া বলেন, ‘‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে গ্যাংটক যাচ্ছি। কাছাকাছি পাহাড়ে থাকব, এই যা।’’
পর্যটকদের মন খারাপের মধ্যে তাঁদের মুখে কিছুটা হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছে পর্যটন দফতর। সকালে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব এনজেপি স্টেশনে গিয়ে ট্রেনযাত্রীদের হাতে গোলাপ ফুল, চকলেট তুলে দিয়ে উত্তরবঙ্গে সকলকে স্বাগত জানান। পুজোর শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাইকে নির্বিঘ্নে ঘুরতে বলেন। এনজেপি ছাড়াও বাগডোগরা বিমানবন্দর, তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস, মালবাজার ও আলিপুরদুয়ারে পর্যটন সংগঠন এতোয়াকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটক সহায়তা কেন্দ্রও চালু করেন মন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন শহরের পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহও। মন্ত্রী বলেন, ‘‘পর্যটকদের কথা শুনে খারাপ তো লাগছেই। কী করা যাবে। তবে আমাদের আশা, দেওয়ালির মধ্যে অবস্থা বদলাবে।’’
মন্ত্রী জানান, গত তিন মাসে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি পাহাড়ের পর্যটনে হয়েছে। নিজেদের সম্পত্তি, ব্যবসা, শিক্ষার ক্ষতি করে এমন আন্দোলনের মানেই হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy