Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

তিন কৃতীর জগতে মিশেছে বই, রং, নাচ

ড়ার চাপ বাড়লেও ভরতনাট্যম ছাড়বে না শ্রেয়সী। পরীক্ষার আগেও রং-তুলি হাতে তোলেনি এমন একটি দিনও দেখা যায়নি মহিমাকে। দু’জনেই আইএসসির দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় শিলিগুড়ির কৃতী। দু’জনেই বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী এবং শতাংশের হিসেবে দু’জনের নম্বর একই। ৯৮.২৫ শতাংশ। দু’জনেরই লক্ষ্য বহুজাতিক সংস্থার পেশাদারের পদে পাওয়া। দ্বাদশ শ্রেণির পড়া শেষে পেশাদারি পাঠক্রমের বৃত্তে ঢুকে গেলেও দু’জনের কেউই নিজেদের ভাললাগার নাচ বা আঁকা কিছুতেই ছাড়বে না বলে স্থির করে রেখেছে।

(উপরে) মহিমাকে সংবর্ধনা মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের। (নীচে বাঁ দিক থেকে) শ্রেয়সী ও অর্চিস্মান। —নিজস্ব চিত্র।

(উপরে) মহিমাকে সংবর্ধনা মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের। (নীচে বাঁ দিক থেকে) শ্রেয়সী ও অর্চিস্মান। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

পড়ার চাপ বাড়লেও ভরতনাট্যম ছাড়বে না শ্রেয়সী। পরীক্ষার আগেও রং-তুলি হাতে তোলেনি এমন একটি দিনও দেখা যায়নি মহিমাকে। দু’জনেই আইএসসির দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় শিলিগুড়ির কৃতী। দু’জনেই বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী এবং শতাংশের হিসেবে দু’জনের নম্বর একই। ৯৮.২৫ শতাংশ। দু’জনেরই লক্ষ্য বহুজাতিক সংস্থার পেশাদারের পদে পাওয়া। দ্বাদশ শ্রেণির পড়া শেষে পেশাদারি পাঠক্রমের বৃত্তে ঢুকে গেলেও দু’জনের কেউই নিজেদের ভাললাগার নাচ বা আঁকা কিছুতেই ছাড়বে না বলে স্থির করে রেখেছে। শ্রেয়সী ও মহিমার মতো কৃতী অর্চিস্মানও। আইসিএসই বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ডন বসকো স্কুলের ছাত্র অর্চিস্মান।

দেশবন্ধুপাড়ার শ্রেয়সী ভৌমিক ভক্তিনগরের সেন্ট জোসেফ স্কুলের ছাত্রী। অঙ্কে একশোয় একশো পেয়েছে। অ্যাকাউন্টেন্সি, অর্থনীতি, ইংরেজির নম্বরও নব্বইয়ের ঘরে। কলকাতা বা মুম্বইয়ের কোনও কলেজে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানাল শ্রেয়সী। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বাবা পরিমলবাবুর মৃত্যু হয়। মা ইন্দ্রাণীদেবী এবং দাদা দ্বীপ দু’জনে সে সময় থেকে মানসিক ভাবে তাকে আগলে রেখেছে বলে জানাল শ্রেয়সী। দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষার আগে নাচের ক্লাসে যাওয়া বন্ধ রাখতে হয়েছে। চার জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার পরেও নাচের ক্লাসের জন্য সময় বের করতে পারেনি। তাই বলে বাড়িতে তালিম ছেড়ে দেয়নি সে। এ বার কলকাতা বা মুম্বইতে পড়তে গেলে সেখানেই ফের নাচের ক্লাসে ভর্তি হবে বলে ভেবেও রেখেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রেয়সী বলল, ‘‘ইচ্ছে আছে স্নাতক পড়া শেষ করে চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পড়াশোনা করব। এমবিএ-ও করব। তবে দিল্লি বা কলকাতা গেলে আরও একটা সুবিধে হবে, ভাল নাচের ক্লাসে শেখার সুযোগ পাওয়া যাবে।’’

বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ফেসবুকে একটি ‘পেজ’ তৈরি করেছে মহিমা। ‘বিয়ন্ড দ্য থট’। নানা ধরনের ছবি আঁকা কার্ড, খাম, ঘর সাজানোর হাতের কাজ, পোস্টার কেনা যায় এই ‘পেজ’-এর মাধ্যমে। ছবি এঁকে, শক্ত কাগজ কেটে ঘর সাজানোর জিনিস বানিয়ে ঘরে ফেলে রাখতে রাজি ছিল মহিমারা। সে কারণেই ফেসবুক ‘পেজ’ তৈরি করা। তবে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার কারণে ছবি আঁকায় ঢিলে পড়েছিল। নির্মলা কনভেন্টের ছাত্রী মহিমার বাড়ি পাঞ্জাবি পাড়ায়। ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে মহিমার ছোট থেকেই রং-তুলি সঙ্গী। পড়ার খাতার পেছনের বেশ কিছু পাতা জুড়ে অজস্র ছোট বড় ছবি। অঙ্কে ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছে মহিমা অগ্রবাল। দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য নিয়েই স্নাতক পড়বে বলে স্থির করে ফেলেছে। ইচ্ছে, এমবিএ করারও। মহিমার কথায়, ‘‘সব বিষয়ে গৃহশিক্ষক, পরীক্ষার পড়া, কোনও চাপেই ছবি আঁকা বাদ দেইনি।’’ অর্চিস্মান পেয়েছে ৯৮ শতাংশ নম্বর। ইতিমধ্যে একাদশ শ্রেণির পড়াশোনাও শুরু হয়ে গিয়েছে। গত সোমবার ফল প্রকাশের পরের দিন থেকেই স্কুল চলছে। মা রাখিদেবী জানালেন, নবম এবং দশম শ্রেণি মিলিয়ে তিন জন গৃহশিক্ষক ছিল অর্চিস্মানের। খেলাধুলোর সঙ্গে বই পড়াতেও তার ঝোঁক। রাখিদেবী বললেন, ‘‘গল্পের বই ওর খুব প্রিয়। গোয়েন্দা গল্প, অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পড়ে। হ্যারি পটারের বই পেলে আর কিছুই চায় না।’’ পড়াশোনার বাইরেও ফেসবুক, হোয়াটস আপের ‘জেন ওয়াই’ প্রজন্মের এই তিন কৃতীর জগতে ভরতনাট্টম, বই, রং-তুলি ক্যানভাসও মিলেমিশে-ই রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE