Advertisement
১১ মে ২০২৪

জেলা পরিষদ সদস্যকে গুলি, নালিশ দিনহাটায়

দলেরই জেলা পরিষদের এক সদস্যকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে দিনহাটা থানার মাতালহাটের বড়ভিটা এলাকার ঘটনা।

উদ্ধার হওয়া গুলি। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া গুলি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০২:৩৪
Share: Save:

দলেরই জেলা পরিষদের এক সদস্যকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে দিনহাটা থানার মাতালহাটের বড়ভিটা এলাকার ঘটনা।

ওই তৃণমূল নেতা কৃষ্ণকান্ত বর্মনের অভিযোগ, ২০-২৫ জনের একটি দল তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি লক্ষ করে ঢিল ছুড়তে শুরু করে তাঁরা। সঙ্গে চলে গালি। ওই সময় তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন। টিনের চালে ঢিল পড়ার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। ঘরের জানালা খুলতেই তাঁকে লক্ষ করে পর পর তিনটি গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ তাঁর। একটি গুলি জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে যায়। কোনওক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এই অবস্থায় এলাকার লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তাঁরা তাঁর একটি গাড়ি ভাঙচুর করে যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে অভিযোগ জমা দেন কৃষ্ণবাবু। তিনি একটি গুলির খোল পুলিশকে দেখিয়েছেন। ওই ঘটনায় যাদের নাম অভিযোগে দেওয়া হয়েছে তাঁরা তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী, এবং দু’জন তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীর নামও রয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “উনি বেশ কয়েকবার থানায় ফোন করেছিলেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কৃষ্ণকান্ত বর্মন বলেন, “লোকসভা ভোটের পরে ওই এলাকায় ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে অনেকে তৃণমূলে যোগদান করেছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের ওই কর্মীদের বিরুদ্ধেই আমি তৃণমূলের হয়ে লড়াই করেছি। এখন ওঁরা সুযোগ বুঝে আমার উপরে হামলা করছে।” ইতিমধ্যেই তিনি বিষয়টি দলের জেলা নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য ওই অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “হামলার অভিযোগ ঠিক নয়। মিথ্যে অভিযোগ করছেন কৃষ্ণবাবু। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা কার্যকরি সম্পাদক বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “আমাকে উনি বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি আইনের পথে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।” কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী মিহির গোস্বামী বলেন, “এমন ঘটনা হয়ে থাকলে অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি ওই এলাকার যে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী রয়েছে তার দেখা উচিত।”

দলীয় সূত্রের খবর, মাতালহাটের ওই এলাকাটি সিতাই বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করে জগদীশ বর্মা বসুনিয়াকে। ওই কেন্দ্রে কৃষ্ণবাবু তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার জন্য নানাস্তরে আবেদন-নিবেদন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও লাভ হয়নি। সেখান থেকেই দলীয় কোন্দল চরমে ওঠে বলে অভিযোগ। মাতালহাটে কৃষ্ণবাবুর পাশাপাশি তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরাও সক্রিয় রয়েছেন। অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের প্রচারে সিতাই এলাকায় কৃষ্ণবাবুকে দেখা যায়নি। তিনি জগদীশবাবুর হয়ে একদিনও প্রচারে নামেননি। তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর অভিযোগ, উল্টে কৃষ্ণবাবু ওই কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কেশব রায়ের হয়ে প্রচার করেছেন। মাতালহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন বর্মন বলেন, “কৃষ্ণবাবু দলবিরোধী কাজ করেছেন। তা নিয়ে বড়ভিটা এলাকায় দলের কর্মীদের ক্ষোভ ছিল। তা নিয়ে একটা গণ্ডগোল হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।”

কৃষ্ণবাবু অবশ্য জোট প্রার্থীর হয়ে প্রচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ওই কেন্দ্রের প্রার্থী জগদীশবাবু তাঁকে কোনওদিন প্রচারে ডাকেননি। তাই তিনি পাশের কেন্দ্র কোচবিহার দক্ষিণের প্রার্থী মিহির গোস্বামীর হয়ে প্রচারের কাজ করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁর বাড়ি লাগোয়া কোচবিহার দক্ষিণের পাটছড়া পঞ্চায়েত এলাকা। সেখানে তিনি দলেরহয়ে একাধিক মিটিং করেছেন। মিহিরবাবুও সে কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “দলের আমরা পুরনো কর্মী। দলকে ভালবাসি। যারা নতুন এসেছেন তাঁরা পুরনো কর্মীদের মারপিট করে সরিয়ে দিতে চাইছেন।” ঘটনাচক্রে সিতাইয়ের প্রার্থী জগদীশবাবু ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়েই বছর পাঁচেক আগে তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি বলেন, “আমি কলকাতায় আছি। গন্ডগোলের বিষয়টি আমার জানা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Attacked TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE