পেরিয়ে গিয়েছে চার বছর তিন মাস। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে ফুলহার দিয়ে ওই চার বছরে অনেক জল গড়িয়েছে। আর ওই দীর্ঘ সময়ে হরিশ্চন্দ্রপুরের শিশাতলা গ্রামের নুরজাহান বিবির পরিবারের লোকজনদের চোখের জলও কম পড়েনি। কোনও দিন নুরজাহান ফিরবেন সে আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ে ও স্বামী। কিন্তু দিন কয়েক আগে হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসির জরুরি ফোন পেয়ে দুরুদুরু বুকে থানায় হাজির হলেন নুরজাহান বিবির বড় ছেলে বাবর আলি। আইসি হোয়াটসঅ্যাপ খুলে কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বললেন, ‘দ্যাখো তো একে চিনতে পারো কি না!’
‘নিজের মাকে চিনতে পারব না স্যার! কিন্তু মা কোথায়”, বলেই আইসির দু’হাত ধরে হাইহাউ করে কেঁদে ফেললেন বাবর। বাকিটা নুরজাহানের পরিবারের কাছে সিনেমার গল্পের মতো। নুরজাহান বিবির কাছেও। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিখোঁজ নুরজাহান তত দিনে রাজস্থান প্রশাসনের চিকিৎসায় অনেকটাই সুস্থ। যোধপুরের একটি সরকারি হোমে এর পর দেখা হল মা-ছেলের। ছেলেকে চিনতে পেরেই অঝোরে কাঁদলেন নুরজাহান বিবি, সঙ্গে বাবরও। রাজস্থান সরকারের সমাজকল্যাণ দফতর আর পুলিশের সহায়তায় এ ভাবেই বাড়ি ফিরলেন নুরজাহান। সোমবার সকালে নুরজাহান বাড়ি ফিরতেই তাঁকে দেখার জন্য ঢল নামল প্রতিবেশীদেরও।
মধ্য চল্লিশের নুরজাহান বিবিকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে পারায় খুশি হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি বাবিন মুখোপাধ্যায়ও। তবে কৃতিত্বের পুরোটাই তিনি দিতে চেয়েছেন যোধপুরের সমাজকল্যাণ আধিকারিক টিনা অরোরাকে। আর যোধপুর সমাজকল্যাণ দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট টিনা অরোরা ফোনে বলেন, “পরবর্তী জীবন সুখে কাটুক এটাই চাই।”
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নুরজাহান বিবির দুই ছেলে তিন মেয়ে। স্বামী মানতাজ আলি পেশায় কৃষক। ২০১০ সালে মানসিক ভারসাম্য হারান নুরজাহান। ফলে তাঁকে কখনও কাছ ছাড়া করতেন না পরিবারের লোকেরা। কিন্তু ওই বছর নভেম্বর মাসে বাড়ি থেকে হঠাৎ নুরজাহান নিখোঁজ হয়ে যান। তার পর বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা।
যোধপুর সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ২৫ নভেম্বর রাস্তার পাশে এক অসুস্থ ভবঘুরে মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে খবর দেন। পরে তাঁর ঠাঁই হয় সরকারি হোম নারী নিকেতনে। তার পর শুরু হয় ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি।
এর মধ্যে বাবর বিয়ে করেছেন। বাড়িতে সন্তাদের পাশাপাশি পুত্রবধূকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত নুরজাহান। শুধু বলেন, “হরিশ্চন্দ্রপুরে একটা ট্রেনে উঠেছিলাম। এটুকু শুধু মনে আছে। আর কিছু মনে নেই। ফের আমি নতুন জীবন পেলাম। তবে ওখানকার সবার কথা খুব মনে পড়ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy