Advertisement
১০ মে ২০২৪

তৃণমূলের কৃষক নেতা খুনে গ্রেফতার স্ত্রী

তৃণমূল কিসান কংগ্রেসের নেতা রবিন কর্মকার খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাঁর স্ত্রী ও আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করল বাগডোগরা থানার পুলিশ। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের বাগডোগরা থেকে স্ত্রী বাবলি কর্মকারকে এবং রায়গঞ্জ থেকে প্রসেনজিত্‌ সেন এবং বিকি সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। টাকার বিনিময়ে রায়গঞ্জের ওই দুই যুবককে ‘ভাড়াটে খুনি’ হিসাবে ব্যবহার করে হয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

তৃণমূল কিসান কংগ্রেসের নেতা রবিন কর্মকার খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাঁর স্ত্রী ও আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করল বাগডোগরা থানার পুলিশ। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের বাগডোগরা থেকে স্ত্রী বাবলি কর্মকারকে এবং রায়গঞ্জ থেকে প্রসেনজিত্‌ সেন এবং বিকি সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। টাকার বিনিময়ে রায়গঞ্জের ওই দুই যুবককে ‘ভাড়াটে খুনি’ হিসাবে ব্যবহার করে হয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। এই ঘটনায় বাবলিদেবীর আত্মীয় আরও এক যুবককে পুলিশ খুঁজছে। রায়গঞ্জের বাসিন্দা ওই যুবককে সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি নিয়ে আসা হয়েছে।

আজ, সোমবার ধৃতদের শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হবে। ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব। তিনি বলেন, “আমি ওঁর স্ত্রীর গ্রেফতারের কথা শুনেছি। একে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না।”

পুলিশের বক্তব্য, গ্রেফতারের পর বাবলিদেবী দাবি করেছেন, স্বামীকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বার করে আনতে না পেরে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। বাবলিদেবী-সহ নিহতের পরিবারের লোকজনকে একাধিকবার জেরা করা হয় তারপরে মোবাইলের সূত্র ধরেই সকলকে ধরা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বাবলিদেবীর আত্মীয় তথা পলাতক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভক্তিনগর থানায় আগেও একটি খুনের মামলা রয়েছে।

শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শ্যাম সিংহ বলেন, “তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুন ও খুনের ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরেক অভিযুক্তকে খোঁজা হচ্ছে।” ঘটনার পিছনে আর কোনও কারণ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ডিসি জানিয়েছেন।

পুলিশ তদন্তে জেনেছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা লেগে থাকত ওই দম্পতির। বাবলিদেবীর বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়ায়। দীর্ঘদিন আগে রবিনবাবুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বড় মেয়ে কলেজে পড়েন। ছোট মেয়ে স্কুলে পড়ে। কিন্তু অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তাঁর জন্য টাকা খরচ করার অভিযোগ নিয়ে প্রায়শই স্বামী-স্ত্রীর গোলমাল হত বলে পরিবারের লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশের দাবি, পলাতক অভিযুক্ত বাবলিদেবীর সাহায্যে ঘটনার ষড়যন্ত্র করে। এর পরে ওই যুবকের পরিচিত রায়গঞ্জের দুই যুবকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলে আনা হয়। এমনকি, ঘটনার দিন নিহতের স্ত্রী তাদের দুই লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে রায়গঞ্জের দুই যুবক পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। পরে বাকি টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাগডোগরায় নিজের বাড়িতেই খুন হন তৃণমূল কিসান কংগ্রেস জেলা সভাপতি রবিনবাবু। তাঁকে মাথার পাশে গুলি করে খুন করা হয়। গলা ও পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। সেই সময় রবিনবাবুর স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছিল, ওই রাতে তিন জন বাড়িতে এসেছিল। দুই মেয়ে অন্য ঘরে শুয়ে ছিল। বাড়ির পিছনের অংশে একটি ঘরে সকলে বসেছিলেন। লোডশেডিংয়ের কারণে অন্ধকার ছিল। বৃষ্টিও হচ্ছিল। তাই কারা ঠিক এসেছিল, তা তিনি দেখতে পাননি। তা ছাড়া দলের কাজে প্রায়ই লোকজন এসে ওই ঘরে বসত বলে তিনি ভাল করে বিষয়টি খেয়াল করেননি বলে দাবি করেছিলেন। রাতে রবিনবাবু সকলকে খেয়ে শুয়ে পড়তে বলেন। সকালে ডাকতে গিয়ে স্বামীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান বলে বাবলিদেবী পুলিশকে জানান। যদিও প্রথম থেকেই তাঁর কথাবার্তায় খটকা লেগেছিল তদন্তকারী অফিসারদের। ধৃতেরাই সেদিন রাতে ওই বাড়িতে এসেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

খুনের ঘটনায় ভাইয়ের স্ত্রী এমন কাজ করতে পারে তা বিশ্বাস করতে পারছেন না রবিনবাবুর দাদা বিশ্বনাথ কর্মকার। এদিন তিনি বলেন, “এমন ঘটনা বাবলি ঘটাতে পারে তা ভাবতে পারছি না। আমরা দোষীদের কড়া শাস্তি চাই।” এলাকার তৃণমূল নেতারাও ঘটনায় হতবাক। বাগডোগরার বাসিন্দা ও নকশালবাড়ি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি গৌতম কীর্তনিয়া বলেন, “ঘটনার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। দোষীদের শাস্তি চাই।” প্রত্যেক দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি করেছেন লোয়ার বাগডোগরা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত ঘোষও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE