Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

ফেলুদার প্রথম আবির্ভাব ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ গল্পে (১৯৬৫-’৬৬), সেই হিসাবে ফেলুদার আবির্ভাবের এটা বাহান্ন বছর (‘ফেলুদার সুবর্ণজয়ন্তী’, কলকাতার কড়চা, ১৭-৪)।

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১৮
বিচিত্র: বহু রূপে ঘনাদা। ঘনাদার গল্প বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে

বিচিত্র: বহু রূপে ঘনাদা। ঘনাদার গল্প বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে

তাই বলে ঘনাদাকে ভুলে যাব?

ফেলুদার প্রথম আবির্ভাব ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ গল্পে (১৯৬৫-’৬৬), সেই হিসাবে ফেলুদার আবির্ভাবের এটা বাহান্ন বছর (‘ফেলুদার সুবর্ণজয়ন্তী’, কলকাতার কড়চা, ১৭-৪)। সত্যজিৎ রায় সোসাইটির ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মধ্যে এই পরিকল্পনা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।

কিন্তু পাশাপাশি মনে পড়ে যায় অনেকটাই আমাদের স্মৃতির আড়ালে চলে যাওয়া, প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট অমর চরিত্র ঘনাদাকে! বাংলা সাহিত্যের এই অবিস্মরণীয় চরিত্রটির প্রথম আবির্ভাব দেব সাহিত্য কুটির-এর পূজাবার্ষিকী ‘আলপনা’-য় ১৯৪৫ সালে। সেই হিসেবে ঘনাদার বয়স এখন বাহাত্তর বছর।

প্রেমেন্দ্র মিত্র আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ছিলেন না। যদিও বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের অনেক অবিস্মরণীয় কাজ তিনি করেছেন। ঘনাদাকে নিয়ে তিনি আমৃত্যু সাহিত্যসৃষ্টি করে গিয়েছেন (চল্লিশ বছরেরও অধিককালব্যাপী)। বর্তমানে সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কুর গল্পসংকলন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় পাঠ্যপুস্তকে ঠাঁই পেয়েছে। কিন্তু যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, একাধারে গোয়েন্দা, অভিযাত্রী, বহু ভাষাবিদ, পরিবেশবিদ, ভূগোলবিদ, নৃতত্ত্ববিশারদ, ইতিহাসনিষ্ঠ ঘনাদার গল্পও বিদ্যালয়স্তরের জ্ঞান এবং বিদ্যাচর্চার যথার্থ পাঠ্য হওয়ার দাবি রাখে। দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়ক পাঠ্যরূপে রবীন্দ্রপরবর্তী যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং নতুন দিগন্তের দিশারি প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছোটগল্প ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ আছে, এটা মেনে নিয়েও ঘনাদার আবশ্যকীয়তার কথা বলা যায়।

প্রেমেন্দ্র মিত্র কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সুরকার, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক— এই সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে, এমনকী তাঁর সৃষ্ট মামাবাবু, পরাশর বর্মা— সকলকে ছাপিয়ে যায় তাঁর অমর চরিত্র ঘনাদা।

ঘনাদার পঞ্চাশ বছর কবেই পেরিয়ে গিয়েছে, ১৯৯৫-এ। এখনও কি তাঁর নামে কোনও সোসাইটি হয়েছে? একদা হয়তো ভারতীয় পরিকাঠামোয় ঘনাদাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ কঠিন ছিল, আজও কি তা-ই আছে? আজও কি সেই একই বিস্মরণের জগতে দাঁড়িয়ে আমরা ঘনাদাকে বাহাত্তুরে বানিয়ে স্থির হয়ে বসে থাকব?

গিরিধারী সরকার বর্ধমান-৪

শিক্ষিকা সাবিত্রী

লাহুজি বুয়া নামে মাং সম্প্রদায়ের এক প্রাক্তন সেনাবাহিনীর জমাদার সাবিত্রীর দেহরক্ষী ছিলেন, স্বাতী ভট্টাচার্যর প্রবন্ধে যাঁকে বলবন্ত সখারাম কোলে নামে উল্লেখ করা হয়েছে (‘সাবিত্রীর শিক্ষাব্রত’, রবিবাসরীয়, ৫-৩)। কাশীবাই নামে বিধবা ব্রাহ্মণী পুত্রহত্যার দায়ে ইংরেজ দ্বারা আন্দামানে প্রেরিত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে— এটা ঠিক নয়। কাশীবাই ফুলে দম্পতির শিশু হত্যা প্রতিরোধ গৃহে (১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) জন্ম দেন এক শিশুপুত্রের। ফুলে দম্পতি এই পুত্রের নামকরণ করেন চিরঞ্জীব যশবন্ত। নিঃসন্তান ফুলে দম্পতি এই শিশুকে দত্তক নেন। প্রবন্ধে লক্ষ্মীকে সাবিত্রীর পুত্রবধূ বলা হয়েছে, এটি ভুল। সাবিত্রীর পুত্রবধূ ছিলেন রাধাবাই। পরে নামকরণ হয় চন্দ্রভাগা।

দিলীপকুমার বিশ্বাস কলকাতা-১৩৩

বিদ্যাসাগর

‘সাবিত্রীর শিক্ষাব্রত’ সম্পর্কে কিছু বক্তব্য আছে। এক, সাবিত্রীবাই ফুলের স্কুলের প্রতিষ্ঠা ১৮৪৮ সালে। রবার্ট মে লন্ডন মিশনারি স্কুল সোসাইটির হয়ে প্রথম বালিকা শিক্ষার জন্য স্কুল খোলেন ১৮১৮ সালে চুঁচুড়ায়। দুই, মিশনারি কর্তৃত্বের বাইরে সাধারণ বাঙালি মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল খোলার কৃতিত্ব কালীকৃষ্ণ মিত্র, নবীনকৃষ্ণ মিত্র ও প্যারীচরণ সরকারের ১৮৪৭ সালে। বারাসত বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্যারীচরণ সরকারের সহায়তায় নিজেদের গৃহপ্রাঙ্গণে স্কুলটি খোলেন। বিদ্যাসাগর এই স্কুলের শুভার্থী ছিলেন, নবীনকৃষ্ণের কন্যা ছাত্রী কুন্তিশলা বিদ্যাসাগরের বিশেষ স্নেহধন্য ছিলেন। তিন, ‘মেয়ে শিক্ষক তৈরির প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন ঈশ্বরচন্দ্র— এই মন্তব্যটি ত্রুটিপূর্ণ, বেথুন স্কুলের সম্পাদক ছিলেন বিদ্যাসাগর, তখন সরকার থেকে জানতে চাওয়া হয় যে বেথুন স্কুলের প্রাঙ্গণে একটি নর্মাল স্কুল স্থাপনের যৌক্তিকতা আছে কি নেই। বিদ্যাসাগর লেখেন, ‘...আই ফুললি অ্যাপ্রিশিয়েট দি ইমপরটান্স অ্যান্ড ডিজায়ারাবলনেস অব হ্যাভিং ফিমেল টিচারস ফর ফিমেল লার্নার্স, বাট ইফ দ্য সোশ্যাল প্রেজুডিসেস অব মাই কান্ট্রিমেন ডিড নট অফার অ্যান ইনসাফরেবল বার, আই উড হ্যাভ বিন দ্য ফার্স্ট টু সেকেন্ড দ্য প্রপোজিশন ...আই ক্যানট পার্সুয়েড মাইসেল্ফ টু সাপোর্ট দি এক্সপেরিমেন্ট।’ এটা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। তিন বছরের মধ্যেই বাস্তব বুঝে নর্মাল স্কুলটি তুলে দেওয়া হয়। চার, বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বক্র মন্তব্য করার আগে সংযত পর্যবেক্ষণ করা দরকার। তিনি স্ত্রী কন্যাকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি, সেই ব্যর্থতা তাঁর জীবনের অন্যতম যন্ত্রণা।

সুনন্দা ঘোষ কলকাতা-৬৪

প্রতিবেদকের উত্তর: নিবন্ধটির প্রধান সূত্র পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে অধ্যাপক হরি নারকে-র লেখা সাবিত্রীবাই ফুলের জীবনী (২০০৮)। ১৮৬৩ সালে যিনি সন্তানকে খুনের দায়ে আন্দামানে কয়েদের সাজা পান, সেই ব্রাহ্মণ বিধবার নাম কাশীবাই। নারকে লিখছেন, ‘১৮৭৪ সালে আর এক প্রতারিত ‘কাশীবাই’ তাঁদের (ফুলে দম্পতির) কাছে আসেন এবং তাঁরা তাঁর পুত্রকে দত্তক নেন।’ এ থেকে আন্দাজ হয়, দ্বিতীয় মহিলার নাম কাশীবাই নয়, পূর্বের মহিলার সঙ্গে তাঁর দুরবস্থার সাদৃশ্য বোঝাতে ওই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। দত্তক পুত্র যশোবন্তের বিয়ে হয় জ্ঞানোবা কৃষ্ণজী সাসানে-র কন্যা রাধা ওরফে লক্ষ্মীর সঙ্গে। সাসানেকে একটি চিঠিতে জ্যোতিরাও লিখছেন, ‘আমার স্ত্রী গৃহকর্মের সব দায়িত্ব নিয়েছে যাতে লক্ষ্মী পড়ার সময় পায়।’ ১৮৯৫ সালের ৬ মার্চ রাধা ওরফে লক্ষ্মী মারা যান। ১৯০৩ সালে যশোবন্ত দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। এই দ্বিতীয় স্ত্রী চন্দ্রভাগা।

সুনন্দা ঘোষের চিঠির উদ্ধৃতি থেকেই স্পষ্ট যে বিদ্যাসাগর মহিলা শিক্ষকের প্রয়োজন স্বীকার করেও মহিলাদের নিয়োগ সমর্থন করেননি। যেখানে মহারাষ্ট্রে জ্যোতিরাও ফুলে বালিকা শিক্ষা এবং মহিলা শিক্ষক নিয়োগ, দুটিই একেবারে গোড়া থেকে পাশাপাশি করেছেন। গবেষকের দৃষ্টিতে প্রশ্ন এটাই যে, বিদ্যাসাগর বালিকাদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে সমাজের বাধাকে লঙ্ঘন করেও মহিলা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তা ‘অনতিক্রম্য’ মনে করলেন কেন? জ্যোতিরাও ফুলে যেখানে নিজের স্ত্রীকে পড়িয়ে স্ত্রীশিক্ষার অভিযান শুরু করলেন, সেখানে বিদ্যাসাগর স্ত্রী-কন্যাকে শিক্ষা দেননি কেন? অশোক সেন তাঁর ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অ্যান্ড হিজ ইলিউসিভ মাইলস্টোনস’ বইয়ে লিখছেন, সম্ভবত এর কারণ পিতামাতার প্রতি তাঁর একান্ত আনুগত্য। ‘অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের সামাজিক বিশ্বাসকে আচ্ছাদিত করেছিল বাবার প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততা,’ লিখছেন অশোকবাবু। ভুললে চলবে না, পিতা সম্মতি দিয়েছিলেন বলেই বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন করতে উদ্যোগী হন। মহিলা শিক্ষকদের প্রতি সমাজ কতটা বিদ্বিষ্ট, তা বিদ্যাসাগরের মতো জ্যোতিরাও ফুলেও জানতেন। কিন্তু ব্যর্থতার আশঙ্কায় বিদ্যাসাগর যা সমর্থন করেননি, ফুলে দম্পতি তার মোকাবিলা করেছিলেন। বরেণ্য ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করেও তাঁদের সীমাবদ্ধতা এবং স্ববিরোধিতা নিয়ে আলোচনা সম্ভব।

আর, স্ত্রী-কন্যাকে পড়াতে না পারার ব্যর্থতায় বিদ্যাসাগর যন্ত্রণা পেয়েছেন, এই বক্তব্যের তথ্যসূত্র কী? পত্রলেখক সেই সূত্রটি দিলে ভাল হত।

বালিকা বিদ্যালয়ের ইতিহাস রচনা এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। সমসাময়িক এক মরাঠি দলিত দম্পতি, আর এক বাঙালি ব্রাহ্মণ, মেয়েদের শিক্ষা ও শিক্ষকতাকে কী ভাবে দেখেছিলেন, এই নিবন্ধ তা বোঝার একটি চেষ্টা।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy