Advertisement
E-Paper

গণতন্ত্রের উদ্বেগ

বাংলাদেশ অবশ্যই দরিদ্র দুনিয়ায় গণতন্ত্রের অনুশীলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। কিন্তু সেই কারণেই, সে দেশে গণতন্ত্র যে ভাবে খণ্ডিত হইতেছে, তাহাতে উদ্বেগের বড় কারণ আছে। এক বছর আগের পার্লামেন্ট নির্বাচন বিরোধীরা বয়কট করিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগই তাহাতে জয়ী হয়।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১

বাংলাদেশ অবশ্যই দরিদ্র দুনিয়ায় গণতন্ত্রের অনুশীলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। কিন্তু সেই কারণেই, সে দেশে গণতন্ত্র যে ভাবে খণ্ডিত হইতেছে, তাহাতে উদ্বেগের বড় কারণ আছে। এক বছর আগের পার্লামেন্ট নির্বাচন বিরোধীরা বয়কট করিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগই তাহাতে জয়ী হয়। বিরোধী বিএনপি ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশময় প্রতিবাদ-সমাবেশের ডাক দিলে তাহা বানচাল করিতে হাসিনা ওয়াজেদের সরকার গোটা দেশে কার্যত জরুরি অবস্থার অনুরূপ নিরাপত্তার কড়াকড়ি কায়েম করে, বিরোধী দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘তাঁহারই নিরাপত্তা’র নামে কার্যত অন্তরিন করা হয়। প্রতিবাদী আন্দোলন উত্তাল হইয়া উঠিয়াছে। শাসক ও বিরোধী দলের সমর্থকদের মধ্যে দেশব্যাপী সংঘর্ষ, তাহাতে মানুষ হতাহত হইতেছেন, দোকানপাট ভাঙচুর হইতেছে, ঘরবাড়ি ভস্মীভূত, রাস্তায় লুঠপাট, গুলিবোমা, ইটপাটকেল। বাংলাদেশ নূতন করিয়া অশান্ত, অগ্নিগর্ভ।

এই পরিস্থিতি এড়ানো কি অসম্ভব ছিল? হাসিনা ওয়াজেদ ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সম্পর্কের শৈত্য ও বৈরিতা সত্ত্বেও বিরোধী পক্ষের আন্দোলনের পথ খোলা রাখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কারণ গণতন্ত্র মানে কেবল শাসকের অভিপ্রায় নয়, বিরোধীদেরও তাহাতে প্রতিবাদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার স্বীকৃত। বিএনপি নেতৃত্ব যদি তাহার বয়কট করা নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়া প্রতিবাদ জানাইতে চায় এবং নূতন করিয়া নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামে, তবে তাহা নিষিদ্ধ করা ও নেতাদের গ্রেফতার করা কেমন ধরনের গণতন্ত্র? বিএনপি ও তাহার জোটসঙ্গী জামাতে ইসলামির যৌথ আন্দোলন সহজেই হিংসাত্মক হয়, তাহা সত্য। কিন্তু অতিরিক্ত দমন নীতি জনসাধারণের এক বৃহৎ অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাহিরে আসার পথটিই রুদ্ধ করিতে পারে, স্বাভাবিক নিষ্ক্রমণের পথ না পাইয়া এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ অন্তর্ঘাতেই বিস্ফোরণের পথ খুঁজিবে। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়াও দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তাঁহার দলের গণভিত্তি যথেষ্ট মজবুত। তাঁহাকে কার্যত অন্তরিন রাখিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করিবার উদ্যোগে কোথাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ক্রিয়া নাই তো?

পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফের দল ‘কারচুপি করিয়া ভোটে জিতিয়া সরকার গড়িয়াছে, অতএব সেই নির্বাচন বাতিল’ করার দাবিতে তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খান যে প্রবল দেশব্যাপী প্রতিবাদ-আন্দোলন সংগঠিত করেন, তাহা পাক সরকারের পক্ষে এক বিপুল সঙ্কট ঘনাইয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু নওয়াজ শরিফ ইমরান সহ বিরোধী পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসিয়া দেশে শান্তি ও স্থিতি ফিরাইয়াছেন। বিরোধী পক্ষকে দমন করা নয়, দেশে সুশাসন চালানোই যে একটি নির্বাচিত সরকারের জনাদেশ, ইহা বুঝিতে শরিফের অসুবিধা হয় নাই। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি এক নহে, কিন্তু পাকিস্তানের সমস্যা কিছুমাত্র কম বলিয়া মনে করিবারও কারণ নাই। গণতন্ত্রের স্বার্থেই নমনীয় হওয়া দরকার। আর শাসক পক্ষের দিক হইতেই নমনীয়তা অধিক জরুরি। নতুবা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িবার আশঙ্কা প্রবল, মৌলবাদীরা তাহার সুযোগ লইতে পারে। তাহার পরিণাম কেবল দেশের উদীয়মান ও সংকটদীর্ণ অর্থনীতি নহে, দেশের শাসক দলের পক্ষেও শেষ বিচারে বিপজ্জনক।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy