আশিক ইকবাল (প্রথম স্থান) এবং নাসিরুদ্দিন মোল্লা (দ্বিতীয় স্থান)। নিজস্ব চিত্র।
এক জনের বাবা ফেরিওয়ালা, অন্য জনের বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। আর্থিক অনটনের মধ্যেই চলে সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারে খুশির আলো ফোটাল আশিক ইকবাল ও নাসিরুদ্দিন মোল্লা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চলতি বছরের হাই মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিলের ফলাফল প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ। হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছে তারা। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা ব্লকের ভাবতার বাসিন্দা আশিক ইকবাল ও রানীনগরের বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন মোল্লা। আশিকের প্রাপ্ত নম্বর ৭৮০, নাসিরের প্রাপ্তি ৭৭৫। আশিক মুর্শিদাবাদের ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র। নাসিরুদ্দিন মুর্শিদাবাদের কোমনগর হাই মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আশিক অষ্টমের গণ্ডি পেরোনোর পর পরিবারের সামর্থ্য ছিল না পড়াশোনার খরচ জোগানোর। তাই মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাহায্যে হস্টেলে থেকেই চলেছে পড়াশোনা। বাবা ফেরি করে সর্বোচ্চ আয় করেন দিনপ্রতি ২০০ টাকা, তা-ও প্রত্যেক দিন তা নিশ্চিত নয়। পাঁচজনের সংসারে প্রতি দিন ঠিকমতো খাবার জোটাতে হিমশিম খান বাবা ইয়ামিন শেখ। ফেরিওয়ালা বাবার কৃতি সন্তান আশিক ইকবাল এ বারের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম।
অন্য দিকে, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী নাসিরুদ্দিনের ছয় ভাইবোনের পরিবারে প্রত্যেক পুরুষ সদস্যই পরিযায়ী শ্রমিক। নাসিরুদ্দিন ছাড়া বাড়ির কোন সদস্যই স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। বাবা ভিন্রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সংসারের হাল ফেরাতে বিড়ি বাঁধেন মা। বেশির ভাগ সময় আয় নামমাত্র। নাসিরুদ্দিনের কোনও গৃহশিক্ষকও ছিল না। সফল হওয়ার তীব্র জেদ ও অধ্যবসায়ের জোরে মাদ্রাসায় রাজ্যে দ্বিতীয় নাসিরুদ্দিন মোল্লা।
ছেলেদের প্রথম হওয়ায় পরিবার খুশি হলেও এর পর তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পরিবারের বড়দের কপালে। কারণ, আশিক বড় হয়ে হতে চায় প্রশাসক এবং নাসিরুদ্দিন হতে চায় চিকিৎসক। অভাবের সংসারে তাদের স্বপ্নকে কী ভাবে সত্যি করে তুলতে হবে, জানে না তাদের পরিবার। অগত্যা, সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে দু’জনের পরিবারই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy