সমীরণ দাস (বাঁদিকে), ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়াদের নিয়ে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে পরিদর্শনে অধ্যক্ষ এবং অন্যান্যরা (ডানদিকে) ছবি: সংগৃহীত।
সদ্য মা-কে হারিয়ে নানা রকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেত সমীরণ দাসের। মনের কুয়াশাটা কাটছিল না, মন বসত না পড়াতেও। অথচ সামনে উচ্চ মাধ্যমিক। তাই আলাদা করে ডেকে কথা বলেছিলেন নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ অসীমচৈতন্য মহারাজ। বুঝেছিলেন ছাত্রের মনের অবস্থা, তাকে মা সারদা’র কথা মনে করেই এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন।
তার পর আরও ১১ জনের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া। ৬৯ দিনের মাথায় ৮ মে ফলও প্রকাশিত হল। রেজ়াল্ট অনুযায়ী, সর্বোচ্চ নম্বর ৪৬৯ (৯৩.৮ শতাংশ) পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ সমীরণ। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সংস্কৃত এবং মিউজ়িক, বাংলা এবং ইংরেজি - সব বিষয়ে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন। গান গাইতে ভালোবাসেন তিনি। ভবিষ্যতে আরও পড়াশোনা করতে চান এই দৃষ্টিহীন পড়ুয়া।
এ বারের পরীক্ষায় সমীরণের সহপাঠীরাও ভাল ফল করেছেন। বিশ্বনাথ মোদকের প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৭ (৯৩.৪ শতাংশ), কৃষ্ণ গড়াই পেয়েছেন ৪৬৫ (৯৩ শতাংশ)। এ ছাড়াও খোকন কামাট— ৪৬৪ (৯২.৮ শতাংশ), জাহাঙ্গীর মোল্লা — ৪৬৩ (৯২.৬ শতাংশ), সোয়াল মুদি — ৪৫৮ (৯১.৬ শতাংশ), রাজা দে — ৪৫৬ (৯১.২ শতাংশ), কার্তিক প্রসাদ — ৪৫৫ (৯১ শতাংশ), রাহুল দাস — ৪৫৩ (৯০.৬ শতাংশ), দীপ মণ্ডল — ৪৫৩ (৯০.৬ শতাংশ), আদিত্য বরনওয়াল — ৪৫০ (৯০ শতাংশ) এবং প্রীতম শাহ ৪৪২ (৮৮.২ শতাংশ) নম্বর পেয়ে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এদের মধ্যে কেউই কখনও পরীক্ষা দিতে বসার ঘরটাকে দেখেননি। খাতার গন্ধ চেনা হলেও সেটা সাদা রঙের কি না, তা-ও জানা নেই তাঁদের। কিন্তু তাতে পরীক্ষা দেওয়ার উৎসাহ কমেনি বিন্দুমাত্র। বরং নতুন কিছু জানার তাগিদে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা, এমনটাই জানিয়েছেন অধ্যক্ষ অসীমচৈতন্য মহারাজ।
তিনি বলেন,“বাকিদের মতো সমীরণের প্রস্তুতি প্রথম থেকেই ভাল ছিল। তবে, হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা বিশেষ ভাবে চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু ও সব বাধা জয় করেছে, এতে আমরা খুশি। তবে শুধু সমীরণই নয়, এ বারের ব্যাচের প্রত্যেকে নজরকাড়া নম্বর পেয়েছে এবং সকলেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহী। এতে আমরা ভীষণ ভাবে গর্বিত। ”
প্রসঙ্গত, ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে বিভিন্ন মডেল, ব্রেল-এ তৈরি চার্ট, ম্যাপ এবং অডিও-ট্যাকটাইলের সাহায্যে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের পড়ানো হয়ে থাকে। এখানকার বেশির ভাগ পড়ুয়াই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসায় তাঁরা প্রত্যেকেই সমীরণের মতো জীবনে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy