Advertisement
E-Paper

মাখড়া যেন শ্মশান, পুলিশহীন গ্রাম ছাড়ছেন মহিলারা

ফের আক্রমণের আতঙ্কেই দিন কাটল মাখড়া-র। অথচ এমন পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের পাশে যাদের দাঁড়ানোর কথা, মঙ্গলবার সারা দিন গ্রামের কোথাও সেই পুলিশেরই দেখা মেলেনি। অবশ্য গ্রাম থেকে কিলোমিটার দেড়েক দূরে হাঁসড়া স্কুল মোড় এবং প্রায় চার কিলোমিটার দূরের কুলতোড় সেতুর কাছে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তারা গ্রামের ভেতরে ঢোকেনি। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন উঠলেও পুলিশের তরফে এ দিন কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

মহেন্দ্র জেনা ও দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ১৯:২৪

ফের আক্রমণের আতঙ্কেই দিন কাটল মাখড়া-র। অথচ এমন পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের পাশে যাদের দাঁড়ানোর কথা, মঙ্গলবার সারা দিন গ্রামের কোথাও সেই পুলিশেরই দেখা মেলেনি। অবশ্য গ্রাম থেকে কিলোমিটার দেড়েক দূরে হাঁসড়া স্কুল মোড় এবং প্রায় চার কিলোমিটার দূরের কুলতোড় সেতুর কাছে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তারা গ্রামের ভেতরে ঢোকেনি। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন উঠলেও পুলিশের তরফে এ দিন কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

নতুন করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সোমবারের দুষ্কৃতী হামলায় এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এক জনও গ্রেফতার হয়নি। এমনকী, জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও আটক করা হয়নি কারওকে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই ঘটনায় পাড়ুই থানায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। পুলিশ কি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করবে? মেলেনি সেই প্রশ্নের উত্তরও।

এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সোমবারের তাণ্ডব-চিহ্ন ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। আতঙ্কের জেরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গ্রাম ছাড়তে দেখা যায় বেশির ভাগ পরিবারের মহিলাদের। সিংহ ভাগ পুরুষ যদিও পাহারার দায়িত্ব নিয়ে গ্রামেই রয়ে গিয়েছেন।


গবাদি পশুকে নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন মাখড়ার বাসিন্দারা। ছবি বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।

কিন্তু গ্রাম কেন ছাড়ছেন?

এক মহিলা বললেন, “গ্রামের দু’টি তাজা প্রাণ চলে গেল পুলিশের চোখের সামনে। তারা কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। এর পর আর কোন ভরসায় থাকব এখানে? ফের হামলা হবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?” অন্য এক মহিলার কথায়, “এত বড় একটা ঘটনার পরেও গ্রামের কোথাও কোনও পুলিশ দেখছেন? তারাই যেখানে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে, সেখানে আমরা রাত কাটাবো কেমন ভাবে?”

গত কাল তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে বীরভূমের পাড়ুই থানার মাখড়া গ্রামে তিন জনের প্রাণ যায়। তাঁদের দু’জনের রাজনৈতিক পরিচয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে। অন্য যে কিশোর ওই দিন গুলিতে নিহত হয় সেই শেখ তৌসিফ আলির বাবা বিজেপি সমর্থক। নিহত তৌসিফ এবং শেখ মোজাম্মেল মাখড়ারই বাসিন্দা। তবে অন্য যে ব্যক্তি গুলিতে নিহত হন সেই শেখ সোলেমানের বাড়ি যদিও দুবরাজপুরের সালুঞ্চি গ্রামে। মৃত তিন জনের দেহ উদ্ধার করে ওই দিন সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন সেখানেই তাঁদের দেহ ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ময়নাতদন্ত হয়নি। বুধবার সকালে নিহতদের দেহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। সিউড়ি হাসাপাতালের সুপার শোভন দেব বলেন, “আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ফরেন্সিক সায়েন্সে এমডি বা ডিপ্লোমা না থাকলে কোনও চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করতে পারেন না। তাই এ দিন ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি।” সিউড়ি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা অংশ জানিয়েছেন, এমবিবিএস ডিগ্রিধারী কোনও চিকিৎসক দিয়ে ময়নাতদন্ত করা যায় না। সে কারণে এ দিন হাসপাতালের বেশ কয়েক জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তাঁরা নিহতদের ক্ষত পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, এই ধরনের ময়নাতদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া সম্ভব নয়। হাসপাতালের তরফে এ কথা বীরভূমের জেলাশাসককে জানানো হলে, তাঁর হস্তক্ষেপে রামপুরহাট হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ময়নাতদন্ত করে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি না আসায় এ দিন ময়নাতদন্ত হয়নি। এর পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দেহগুলি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে দেরি হয়ে যাওয়ায় এ দিন দেহ পাঠানো সম্ভব হয়নি। বুধবার সকালেই দেহগুলি বর্ধমানে পাঠানো হবে বলে সিউড়ি হাসপাতাল সূত্রে খবর।

makhra mahendra jena dayal sengupta parui
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy