Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বসিরহাটে বিজেপি জয়ী, চৌরঙ্গিতে তৃণমূল

সারদা-কাণ্ডের আবহে মানরক্ষা হল তৃণমূলের। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল বিজেপি-ও। রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ফলাফল দাঁড়াল ১-১!খাস কলকাতায় চৌরঙ্গি কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৩৪৪ ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় হয়েছেন বিজেপি-র রীতেশ তিওয়ারি। আবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূলকে ১৫৮৬ ভোটে পিছনে ফেলে জয়ী হয়েছেন বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:০০
Share: Save:

সারদা-কাণ্ডের আবহে মানরক্ষা হল তৃণমূলের। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল বিজেপি-ও। রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ফলাফল দাঁড়াল ১-১!

খাস কলকাতায় চৌরঙ্গি কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৩৪৪ ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় হয়েছেন বিজেপি-র রীতেশ তিওয়ারি। আবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূলকে ১৫৮৬ ভোটে পিছনে ফেলে জয়ী হয়েছেন বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য। এই জেলা থেকেই ১৯৯৯ সালে উপনির্বাচনে জিতে রাজ্য বিধানসভায় প্রথম বার প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল বিজেপি। তবে সে বার এনডিএ-র শরিক হিসাবে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের জোট ছিল। একক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ায় তাই আলাদা তাৎপর্য আছে।

তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দেখলে তৃণমূল এই উপনির্বাচনে হারায়নি কিছুই। চৌরঙ্গিতে শাসক দলের বিধায়ক ছিলেন শিখা মিত্র। এ বার সেই আসনেই ফের বিধায়ক হলেন নয়না। বসিরহাট দক্ষিণ আসনটি তৃণমূলের দখলে ছিল না। সিপিএমের কাছ থেকে ওই আসন এ বার গিয়েছে বিজেপি-র ঘরে। সেই দিক থেকে তৃণমূল আসন হারায়নি তো বটেই। উপরন্তু চার মাস আগের লোকসভা ভোটে ওই বিধানসভা এলাকায় বিজেপি-র থেকে ৩২ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকার ঘাটতি মেরামত করে এ বার তারা হেরেছে মাত্র দেড় হাজার ভোটে! সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্ত এবং তার জেরে বিরোধীদের লাগাতার চাপে শাসক দল যখন বিব্রত, সেই সময় উপনির্বাচনের এই ফল নিঃসন্দেহে তাদের স্বস্তি দেবে!

নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়

শমীক ভট্টাচার্য

ভাল লড়াই চালিয়ে এবং কিছু সময় এগিয়ে থেকেও চৌরঙ্গি কেন্দ্রে তৃতীয় হয়েছেন কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক। সিপিএমের ফৈয়াজ আহমেদ খান চতুর্থ হয়েছেন, জামানতও বাঁচাতে পারেননি! তবে লোকসভা ভোটে এখানে বামেরা যা ভোট পেয়েছিল, শতাংশের নিরিখে তা-ই তারা ধরে রাখতে পেরেছে। আবার বসিরহাট দক্ষিণে সিপিএমের মৃণাল চক্রবর্তী শেষ করেছেন তৃতীয় স্থানে, কংগ্রেসের অসিত মজুমদার চতুর্থ। বিরোধী শিবিরের নেতারা মনে করছেন, রাজ্যে এখন ভোটের যে ভাবে মেরুকরণ হয়েছে, তাতে তৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যেই মূল লড়াই হচ্ছে। বাকিরা পিছিয়ে যাচ্ছে। এবং সংখ্যালঘু সমর্থনের ফায়দা তুলেই তৃণমূল নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মান বাঁচাতে পারছে।

সারদা-কাণ্ডে নাম জড়ানো এবং দলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বসিরহাট দক্ষিণের উপনির্বাচনেই নজর দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। বসিরহাটেই ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন তিনি। সঙ্গী উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। প্রায় ফোটো-ফিনিশে হারের পরে মুকুলবাবুর দাবি, “নৈতিক ভাবে জিতেছি তো আমরাই! চৌরঙ্গিতে দেড় হাজার ভোটে পিছিয়ে থেকে ১৪ হাজারে জয়। আর বসিরহাটে যে ব্যবধান মিটিয়ে অল্প ভোটে হেরেছি, তার মানে আসলে ২৮ হাজার ভোটে আমরা জিতেছি!” আর চৌরঙ্গিতে জিতে নয়নার প্রতিক্রিয়া, “মানুষ মা-মাটি-মানুষের সঙ্গে আছেন। চৌরঙ্গির মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিয়েছেন।” কিন্তু বিজেপি যে এখানে দ্বিতীয় হল, সেটা কি তাঁদের কাছে চিন্তার নয়? নয়নার মন্তব্য, “ওরা দ্বিতীয়-তৃতীয়ই থাকবে!” বিধানসভায় বিজেপি-র একমাত্র মুখ হিসাবে নির্বাচিত হয়ে বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “এই জয়ের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বসিরহাটের মানুষের। বহু সংখ্যালঘু মানুষ আছেন, এমন একটি কেন্দ্র থেকে আমি জিতেছি। আমি এঁদের সকলেরই প্রতিনিধি। এর থেকে প্রমাণিত হল, আমাদের সম্পর্কে যা প্রচার চালানো হয়, তা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না!” কলকাতায় পুরভোটের আগে চৌরঙ্গিতে দ্বিতীয় হয়েও খুব অখুশি নন বিজেপি নেতৃত্ব। দু’টি আসনের ফলাফল ঘোষণা হতেই চৌরঙ্গির বিজেপি প্রার্থী তথা দলের রাজ্য নেতা রীতেশ তিওয়ারির দাবি, “এই রাজ্যে প্রকৃত বিকল্প একমাত্র বিজেপি। এই ফলাফল থেকে পরিষ্কার ২০১৬-র নির্বাচনে মানুষ বিজেপিকেই বেছে নেবে!” সেই কারণেই দলের তরফে প্রকৃত পরিবর্তনের ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই বিজেপি নেতা।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে বসিরহাটে বিজেপি জয়ী হলেও সেই কেন্দ্রে গণনা নিয়ে অবশ্য কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তৃণমূলের দীপেন্দু বিশ্বাসকে হারিয়ে শমীক জিতলেও শাসক দলের তরফে জ্যোতিপ্রিয়বাবু পুনর্গননার দাবি জানিয়েছিলেন। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর অবশ্য সেই দাবি খারিজ করে দেয়। তবে একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ভোটের ফল ঘোষণা স্থগিত রেখেই বিকাল পৌনে তিনটে নাগাদ শমীককে আনুষ্ঠানিক ভাবে জয়ী ঘোষণা করা হয়।


জয়ের পর তৃণমূলের উল্লাস চৌরঙ্গিতে। ছবি: রণজিত্ নন্দী।

প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চৌরঙ্গিতে তৃণমূল প্রার্থী নয়না পেয়েছেন মোট ৩৮৩২৮টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী রীতেশ পেয়েছেন ২৩৯৮৪ ভোট। কংগ্রেসের সন্তোষের প্রাপ্ত ভোট ২৩৩১৭ এবং সিপিএম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খান পেয়েছেন ৮৮৯০টি ভোট। অষ্টম রাউন্ড পর্যন্ত অবশ্য তৃণমূলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ছিলেন কংগ্রেসের সন্তোষ। অন্য দিকে, বসিরহাটে প্রথম থেকে দশম রাউন্ড পর্যন্ত প্রথম স্থানেই ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু। শেষ তথা একাদশ রাউন্ডে এসে তিনি বিজেপি প্রার্থীর কাছে দেড় হাজার ভোটে হেরে যান। টানা ৩৭ বছর ধরে এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন সিপিএমের নারায়ণ মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুতেই আসনটি শূন্য হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে প্রায় ৩২ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সকালের দিকে গ্রামীণ এলাকার ভোটগণনা চলছিল। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শহর এলাকার ভোটগণনা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই ব্যবধান কমাতে থাকেন শমীক। একটা সময় ছিল যখন তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ছিল ১৭০৮০।


মুখোমুখি: দীপেন্দু বিশ্বাস এবং শমীক ভট্টাচার্য। ছবি: অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য।

১৯৯৯ সালে অশোকনগর কেন্দ্র থেকে বাদল ভট্টাচার্যের হাত ধরে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি প্রথম খাতা খোলে। সে বার এনডিএ-র জোটসঙ্গী হিসেবে তৃণমূলের পাশেই ছিল বিজেপি। একক ভাবে এই প্রথম বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কের আত্মপ্রকাশ ঘটল। এর আগে গত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে দু’টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে সুরেন্দ্রসিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং আসানসোল থেকে জিতেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE