Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Abhijit Gangopadhyay

‘কথা কম’, অভিজিৎকে দলে নিয়েই বার্তা বিজেপির, মঙ্গলের পুনরাবৃত্তি হলে ‘অমঙ্গল’-এর শঙ্কা পদ্মে?

মঙ্গলবার সল্টলেকের বাড়িতে দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানেই নারদকাণ্ড-সহ বিবিধ বিষয়ে তাঁর কিছু বক্তব্য ‘অস্বস্তি’ তৈরি করেছিল বিজেপির অন্দরে।

Abhijit Gangopadhyay did not accept media questions on Thursday as on Tuesday

(বাঁ দিকে) মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলনে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৭
Share: Save:

গত দু’আড়াই বছরে তাঁর বিবিধ মন্তব্য কার্যত ‘বাণী’ হয়ে উঠেছিল বিরোধীদের কাছে। তিনি এজলাসে বসে যা বলতেন, তা নিয়ে তোলপাড় হত বঙ্গ রাজনীতি। কখনও সখনও জাতীয় রাজনীতিও। সেই প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম দিনেই বিজেপির তরফে অভিজিৎকে ‘কথা কম’ বার্তা দিয়ে দেওয়া হল! তাঁর পাশে বসে প্রকাশ্যেই সেই বার্তা দিলেন স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কী কারণে? পদ্মশিবিরের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় স্পষ্টই বলছেন, মঙ্গলবার যা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি তাঁরা বৃহস্পতিবার চাননি। ভবিষ্যতেও চান না।

বৃহস্পতিবার সল্টলেকের বিজেপি দফতরে পদ্মের পতাকা হাতে নেন অভিজিৎ। সেখানে ছিলেন শুভেন্দু, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বাংলার পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে-সহ অন্যান্যরা। অভিজিৎ বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিয়ে প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘ভয়ঙ্কর’ লড়াইয়ের কথা বলেন। কিন্তু তার পরে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করতে গেলে অভিজিতের ডান পাশে বসা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কোনও প্রশ্ন নেবেন না!’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

দেখা যায় বাধ্য সৈনিকের মতো অভিজিৎও সে কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘সে দিন (মঙ্গলবার) তো দীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। আজ (বৃহস্পতিবার) এইটুকুই থাক। এর বেশি কিছু বলছি না।’’ তার পরে আর তাঁকে প্রশ্ন করা যায়নি। পদ্মশিবিরের নেতাদের বক্তব্য, ইঙ্গিতে অভিজিৎকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, দল কী চায়।

বিজেপির রীতি অনুযায়ী মুখপাত্র ছাড়া সংবাদমাধ্যমে কেউ কথা বলতে পারেন না। বিরোধী দলনেতা পরিষদীয় বিষয়ে কথা বলতে পারেন। রাজ্য সভাপতির সার্বিক সব বিষয়ে কথা বলার এক্তিয়ার রয়েছে। তা ছাড়া সাংসদ, বিধায়ক বা বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রার্থী তাঁদের এলাকার বিষয়ে কথা বলতে পারেন। তার বাইরের কিছু নিয়ে নয়। তা-ও বলার আগে দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হয়। পদ্মশিবির সূত্রের খবর, অভিজিৎকে এখন সে সবের ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার হাই কোর্টে গিয়ে জিপিও মারফত দেশের রাষ্ট্রপতিকে বিচারপতি হিসাবে তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছিলেন অভিজিৎ। তার পরে সল্টলেকের বাড়িতে ফিরে দীর্ঘ এবং একক সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই নারদকাণ্ড, নির্বাচনী বন্ড-সহ বিবিধ বিষয়ে তার কিছু বক্তব্য ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়েছিল বিজেপির অন্দরে। কারণ, তার অব্যবহিত আগেই অভিজিৎ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। যেমন নারদকাণ্ডে অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দুর টাকা নেওয়ার ‘ফুটেজ’ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে অভিজিতের জবাব ছিল, ‘‘শুভেন্দু চক্রান্তের শিকার।’’ তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘তবে কি তৃণমূলের যে নেতাদের নারদের ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, তাঁরাও চক্রান্তের শিকার?’’ জবাবে অভিজিৎ বলেছিলেন, ‘‘অবশ্যই তাঁরাও চক্রান্তের শিকার।’’ তবে ওই ‘চক্রান্ত’ যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় করেছিলেন, অভিজিৎ সেই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন অভিষেকের নাম না করে।

বিজেপি নেতাদের অনেকের দাবি, শুরুতেই ‘চালিয়ে খেলতে’ গিয়ে বিরোধীদের হাতে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন অভিজিৎ। নারদকাণ্ড নিয়ে অভিজিতের মঙ্গলবারের প্রকাশ্য মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে বিজেপির অনেক নেতাই সে দিন ঘরোয়া আলোচনায় জানিয়েছিলেন, অভিজিৎ এটা ঠিকই বলেছেন যে, শুভেন্দুর হাতে খবরের কাগজের ভিতরে টাকা ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তা বলে ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্রদের ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ার কোনও দরকার ছিল না। কৌশলে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যেত। সেই দিন বিজেপির অনেকে এমনও বলেছিলেন যে, একা একা সাংবাদিক বৈঠক না করলেই পারতেন অভিজিৎ। পাশে দলের কোনও অভিজ্ঞ নেতা থাকলে ওঁকে ‘অস্বস্তিকর’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত রাখা যেত। এত প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হত না। যেমনটা হল না বৃহস্পতিবার।

তবে এর পরেও বিজেপি নেতাদের মধ্য এই জল্পনা রয়েছে যে, দলে যোগ দেওয়ার পরে অভিজিৎ এমন কোনও সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বসবেন কি না। তেমন হলে তাঁকে কী ভাবে দলীয় শৃঙ্খলার নিগড়ে বাঁধা যাবে, তা নিয়েও দলের নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। অভিজিৎ লোকসভা ভোটে প্রার্থী হলে সে ক্ষেত্রেও তাঁর আলাদা ‘প্রশিক্ষণ’ প্রয়োজন কি না, জল্পনা চলছে তা নিয়েও।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE