Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Abhishek Banerjee

পরিকল্পিত ব্রিগেডের পর পরিকল্পিত প্রচার, তৃণমূল সংগঠনে ক্রমশ আরও স্পষ্ট সেনাপতি অভিষেকের ছাপ

তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, ৪২ জন প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনী কেন্দ্রে ১০ দিন করে ‘যাত্রা’ করবেন। বুধবার থেকেই দুই মালদহ, মেদিনীপুর, বালুরঘাট, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে প্রচারসূচি শুরু হয়ে যাচ্ছে।

Abhishek Banerjee\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s plan in TMC\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s election campaign is working

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪ ১৫:২৫
Share: Save:

গত সাত দিনের মধ্যে শাসক তৃণমূলের সবচেয়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মুহূর্ত কোনটি? প্রকাশ্যে কিছু না-বললেও দলের নেতাদের একাংশ জানিয়ে দিচ্ছেন, যখন দীর্ঘ দিনের রীতি এবং ঐতিহ্য ভেঙে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণার জন্য মাইক্রোফোন ছেড়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। এত দিন লোকসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতেন মমতা নিজে। এবং তা করতেন কালীঘাটের বাড়ির লাগোয়া দফতর থেকে। এই প্রথম তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষিত হল ব্রিগেড সমাবেশ থেকে। এবং তা করলেন অভিষেক।

তৃণমূলের অন্দরের লোকজন এর মধ্যে দলীয় সংগঠনের ‘ব্যাটন’ দ্বিতীয় প্রজন্মের হাতে পুরোপুরি তুলে দেওয়াই দেখতে পাচ্ছেন। তবে, এ-ও ঠিক যে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেকের এটিই প্রথম লোকসভা ভোট। তিনি ওই পদে এসেছিলেন ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে। তার পরে তাঁর প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল পার্থকাণ্ডের ‘ছায়া’য় পঞ্চায়েত ভোট। যাতে তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ— এই লোকসভা ভোট।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

ব্রিগেডে ‘জনগর্জন সভা’র আয়োজন, পরিকাঠামো, র‌্যাম্পে প্রার্থীদের নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর হাঁটা, ডলবি অ্যাটমস প্রযুক্তির শব্দব্রহ্ম ইত্যাদিতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তৃণমূলের প্রজন্মান্তর ঘটছে। অতঃপর লোকসভার ৪২ জন তৃণমূল প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রচারের যে রূপরেখা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, তাতে সেনাপতি অভিষেকের ছাপ আরও স্পষ্ট।

বুধবার তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, দলের ৪২ জন প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনী কেন্দ্রে ১০ দিনের ‘যাত্রা’ করবেন। এই যাত্রার পোশাকি নাম ‘অধিকার যাত্রা’। শাসকদলের তরফে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে বাংলার মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ের বার্তা নিয়েই এই যাত্রা হবে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে। বুধবার থেকে দুই মালদহ, মেদিনীপুর, বালুরঘাট, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে শুরু হয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে বুধবার শুরুর তালিকায় ঘাটালের নাম থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয়েছে। কারণ, ঘাটালের প্রার্থী দেব তাঁর ছবির শুটিংয়ের শেষ ভাগে। দেব বৃহস্পতিবার ঘাটালে প্রচার শুরু করবেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার থেকে অভিষেকও জেলায় জেলায় প্রচার শুরু করছেন। তাঁর কর্মসূচি রয়েছে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের ময়নাগুড়িতে। ধারাবাহিক ভাবে জেলায় জেলায় লোকসভা আসন ধরে জনসভা করবেন তিনি।

লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থীদের ওই যাত্রায় কী কী করতে হবে, তা-ও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। শুরুতেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে প্রার্থীদের। তার পরে কর্মী সম্মেলন এবং সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া সেরে নিতে প্রথম দিন। এর পর জনসভা, ছোট বৈঠক এবং এলাকা ধরে ধরে প্রচার শুরু করে দিতে হবে। এই ১০ দিনের মধ্যেই ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় ‘বঞ্চিত’দের সঙ্গে দেখা করতে হবে প্রার্থীদের। রাজ্যের ৫৯ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারকে রাজ্য সরকার ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি দিয়েছে। তৃণমূলের তরফে প্রার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘বঞ্চিত’দের কাছে স্পষ্ট করে বলতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের টাকা দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই তাঁদের মজুরি মিটিয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের ভাতে মারতে চেয়েছিল। বাঁচিয়েছেন মমতা। পাশাপাশিই, ব্রিগেডে যে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল ‘জনগণের গর্জন, বাংলা-বিরোধীদের বিসর্জন’, তা-ও প্রার্থীদের সোচ্চারে বলতে হবে। অর্থাৎ, বিজেপিকে ‘বাংলা এবং বাঙালির বিরোধী’ হিসাবে তুলে ধরাকেই তৃণমূল ‘ফোকাস’ করতে চাইছে।

গত অক্টোবর মাসে রাজভবনের সামনে থেকে মমতার অনুরোধে ধর্না তুলে নেওয়ার পর অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন, নভেম্বরের গোড়া থেকে ফের আন্দোলন শুরু হবে। কিন্তু তা হয়নি। মাঝে দল ও সংগঠনের সঙ্গে অভিষেকের ‘দূরত্ব’, ‘সরে থাকা’ নিয়ে শাসকদলের মধ্যে মন্থন শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে অভিষেক-ঘনিষ্ঠেরা ঘরোয়া আলোচনায় বলেছিলেন, অভিষেকের পরিকল্পনা ছিল ফের দিল্লি অভিযানের। তার পর সারা বাংলায় ‘নবজোয়ার’-এর ধাঁচে আরও একটি যাত্রা করে ব্রিগেডে সভা করে লোকসভা ভোটে ঝাঁপানোর। কিন্তু তা হয়নি। য়ে কারণে অভিষেক এক সময় বলেই দিয়েছিলেন, ডায়মন্ড হারবারের গণ্ডি ছেড়ে তিনি বার হবেন না। তবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে অভিষেক ক্রমে সক্রিয় হতে শুরু করেন। সন্দেশখালি নিয়ে বৈঠক, নেতৃত্বকে সেখানে পাঠানো, ব্রিগেডের নীল নকশা আঁকা, ময়দানে প্রকাণ্ড র‌্যাম্পে হাঁটিয়ে প্রার্থীদের পরিচয় করানো, ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করা— সবের নেপথ্যে ছিলেন অভিষেকই।

কিন্তু লোকসভা ভোটের প্রার্থীদের প্রতি এই দলীয় নির্দেশ দেখাল, নেপথ্যে নয়। এ বার সামনে থেকেই সংগঠনে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করলেন সেনাপতি অভিষেক।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE