অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নিজের গড় থেকেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল অধীর চৌধুরীকে। তার পর থেকে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এ সবের মাঝে এ বারে লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি এবং তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী করেছে মুর্শিদাবাদের পরিচিত চিকিৎসক নির্মল সাহাকে এবং তৃণমূল প্রার্থী করেছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন তারকা ইউসুফ পাঠানকে। কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের প্রার্থীর কারণে অনেকটাই চাপে পড়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তবে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয় দলই অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে করায় রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশ অধীরকেই এগিয়ে রাখছেন। তাঁদের দাবি, বহরমপুর তো বটেই, গোটা মুর্শিদাবাদ অধীরের হাতের তালুর মতো চেনা। ফলে পাঁচ বারের সাংসদকে তাঁরা এগিয়ে রাখছেন।
বরাবরই দিল্লিতে সংসদের কাজ শেষ করে অধীর বহরমপুরে এসে যে ক’দিন থেকেছেন নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি রেখেছেন। আর লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে নিজের গড় ধরে রাখতে চেনা মাঠে ছুটে চলেছেন অধীর। প্রতিদিনই বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় তাঁর কর্মসূচি থাকছে। নওদা থেকে রেজিনগর, বেলডাঙা থেকে কান্দি, ভরতপুরে অধীর পদযাত্রা, ঘরোয়া বৈঠক, কর্মিসভা, সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। নিজের গড় আগলে রাখতে তিনি ছুটছেন। কংগ্রেসের দাবি, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি প্রচারে নেমে সাড়াও পাচ্ছেন।
এক সময় অধীরের নেতৃত্বে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস শক্তিশালী ছিল। সে কারণে বহরমপুর ‘অধীরগড়’ বলে পরিচিত ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল হলেও মুর্শিদাবাদে দাগ কাটতে পারেনি তৃণমূল। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে এ জেলায় পালে হাওয়া লাগতে শুরু করে তৃণমূলের। দল ভাঙানো সহ নানা কারণে তৃণমূল যত শক্তিশালী হয়েছে, এ জেলায় কংগ্রেস তত দুর্বল হয়েছে। এক সময় আবু তাহের খান, হুমায়ুন কবীর, নিয়ামত শেখ, অপূর্ব সরকার, তাঁর দাদা পার্থপ্রতিম সরকার (বাপি), রবিউল আলম চৌধুরী, হাসানুজ্জামান, নাডুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের মতো নেতারা অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ট বৃত্তের মধ্যে ছিলেন। তাঁরা এখন তৃণমূলের নেতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এক সময় অধীরে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অপূর্ব সরকার ডেভিডকে দিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অধীর বধে নেমেছিল তৃণমূল। সে বারে চাপে ফেলে দিলেও শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেন অধীর। ডেভিডকে ৮০ হাজার ৬৯৬ টি ভোটে পরাজিত করে নিজের গড় ধরে রাখতে পেরেছিলেন অধীর। ডেভিড এ বারে প্রার্থী না হলেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি। ফলে এ বারে তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানকে সামনে রেখে ডেভিডকেই লড়াই করতে হচ্ছে।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরী সাতটির মধ্যে চারটি বিধানসভায় হেরেছিলেন। সে বার তাঁর নৈতিক পরাজয় হয়েছিল। সে বার বড়ঞাতে আড়াই হাজার, কান্দিতে ৩৮ হাজার এবং বহরমপুরে ৯০ হাজার লিড নিয়ে তিনি জিতেছিলে। আর ২০২১ সালের নির্বাচনে বহরমপুর বিধানসভায় কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছিল। বাকি বিধানসভায় আমরা জয়ী হয়েছি। এ বারেও ২১ সালের বিধানসভার মতো ফল হবে।’
এক সময়ের ঘনিষ্ঠদের অনেকেই আজকে তৃণমূলে। তাঁদের ছাড়াই কীভাবে অধীর তাঁর গড় ধরে রাখবেন? প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা বহরমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এঁরা এক সময় কংগ্রেসে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু তাঁরা দল বদল করলেও কর্মীরা দলেই থেকে গিয়েছেন। যার ফল ২০১৯ সালেও আমরা দেখেছি এদের ছাড়া অধীর জয়ী হয়েছিলেন। এ বারেও অধীর চৌধুরী তাঁদের মুখের উপরে যোগ্য জবাব দিয়ে জয়ী হয়ে ‘ডবল হ্যাটট্রিক’ করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy