—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
এক দলের পিছনে কর্পোরেট পরামর্শদাতা সংস্থা। অন্য দলের কৌশল নির্ধারণ করছে সঙ্ঘ পরিবার। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে জোড়াফুল আর পদ্ম, দুই শিবিরের প্রার্থীই এ বার রাজনীতিতে আনকোরা। তৃণমূলে দাঁড়িয়েছেন সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সরেন। আর বিজেপি প্রার্থী চিকিৎসক প্রণত টুডু। ফলে, দুই শিবিরের লড়াইটা এখন অন্তরালের দুই সংগঠনের মধ্যে।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পরে তৃণমূল ভোট কুশলী কর্পোরেট পরামর্শদাতা সংস্থাকে দায়িত্ব দেয় প্রচার পরিকল্পনার। এ বার লোকসভা ভোটেও সেই সংস্থার ঝকঝকে কয়েক জন তরুণ এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের প্রতিনিধিরা ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকায় রয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী কোথায়, কী ভাবে, কী ধরনের প্রচার কর্মসূচি করবেন, তার পুরো দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁরা। ব্লক ও অঞ্চলস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রচারের রণকৌশলও স্থির করছেন তাঁরাই।
গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় পরামর্শদাতা সংস্থাটি ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচির আয়োজনে ছিল। দলের গোষ্ঠীকোন্দল মেটাতেও সক্রিয় ছিল তারা। তবে এ ভাবে প্রচারের
খুঁটিনাটি দেখেনি। তৃণমূলের এক অঞ্চল নেতা বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে পরামর্শদাতা সংস্থাটি কর্মসূচি নির্দিষ্ট করে দেয়নি। জেলা ও ব্লক নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়ে দল ও শাখা সংগঠনগুলি প্রচার কর্মসূচি করেছিল।’’ লোকসভা ভোটে অবশ্য সংস্থাটি হিসাব কষে প্রচার কর্মসূচি সাজাচ্ছে। তৃণমূলের শাখা সংগঠনের এক নেত্রী জানালেন, সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে বিরোধীরা সরব হচ্ছে। ফলে ছোট ছোট করে প্রচার হচ্ছে। যেমন সকালে চা চক্র, তার পর ‘মুখোমুখি উপভোক্তা’, ‘একতা ভোজ’, ‘ক্লাব সংলাপ’।
তবে কর্পোরেট সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রায় কেউই জেলার মানুষ নন। ফলে, তাঁরা মাটি বুঝে কৌশল নির্ধারণ কতটা করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার মতে, ‘‘শুধু উন্নয়নের কথা প্রচার করাই নয়, কৌশল নির্ধারণে জঙ্গলমহলের ভূগোল, ইতিহাস ও আদিবাসী-মূলবাসী সংস্কৃতি ও স্থানীয় সমীকরণ জানা জরুরি।’’ তৃণমূলের আর এক নেতার ক্ষোভ, ‘‘নির্বাচনী কমিটি গঠন করা হয়েছে, অথচ তার গুরুত্ব নেই।’’
অন্য দিকে, বিজেপির প্রার্থী ঘোষণাই হয়েছে ঢের দেরিতে। তবে সূত্রের খবর, গত চার মাস ধরে ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকায় বিজেপির ‘লভ্যার্থী সম্পর্ক অভিযান’ চলছে। মাস চারেক ধরেই জাগরণ কর্মসূচি করছে আরএসএস। ঝাড়গ্রাম লোকসভার অধীনে সাতটি বিধানসভার প্রতিটিতে ৪২ জন করে মোট ২৯৪ জনকে এই কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যুবা, মাতৃশক্তি, সামাজিক মাধ্যম, তফসিলি, জনজাতি ও প্রবুদ্ধ (সমাজকে যিনি প্রভাবিত করতে পারেন)— এই ছ’টি বর্গের ‘আয়াম’ (শাখা) তৈরি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, আয়ামের মাধ্যমে উঠে আসা তথ্য নিয়ে সঙ্ঘ আলোচনা করছে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে। তৈরি হচ্ছে প্রার্থীর কর্মসূচি।
তবে সঙ্ঘের এই জনসংযোগ পদ্ধতি কি ভোটবাক্সে সুফল দেবে বিজেপিকে, এই প্রশ্ন উঠছেই। কারণ, গত লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসনটি জিতলেও পরের বিধানসভায় ভরাডুবি হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের। সঙ্ঘের অবশ্য ব্যাখ্যা, সে বারও জেলায় বিজেপির ভোট বেড়েছে। তাই তৃণমূলের এক ব্লক নেতার কথায়, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও বিজেপি প্রচারে এগিয়ে থাকছে।’’
জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীর অবশ্য দাবি, ‘‘প্রচারে আমরাই এগিয়ে। বুথ ধরে আমাদের কাজ চলছে।’’ আদিবাসী আবেগ ছুঁতে সাহিত্যিক কালীপদ সাঁওতালি গান গেয়েও জনসংযোগ করছেন। দেওয়াল লিখনেও এগিয়ে তৃণমূল। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি এলাকার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রচার কর্মসূচি হচ্ছে। আমাদের প্রার্থী প্রতিদিন প্রচারে আছেন। আমাদের লক্ষ্য লোকসভার প্রতিটি অঞ্চল ছোঁয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy