Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

সন্তের নামে ভোট দেবে সিংগ্রা, বদল নিয়ে সংশয়

গুরুদ্বারের ঠিক পিছনেই সিংগ্রা গ্রামের মানুষ আজও সেই সন্তের কথা প্রতিপদে মনে রাখেন। ‘‘ভোটের মুখে এখানকার কিষান নেতৃত্ব চুপ করে রয়েছেন। মুখে কেউ কিছু বলছে না,’’ বললেন স্থানীয় বাসিন্দা হরশরণ রাম সিংহ।

কারনালে নানাস্কার ঠাট গুরুদ্বার।

কারনালে নানাস্কার ঠাট গুরুদ্বার। —নিজস্ব চিত্র।

অগ্নি রায়
কারনাল শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৯
Share: Save:

মকাই আর গমের যোজন যোজন খেতের মাঝখানে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র নানাস্কার ঠাট গুরুদ্বার। লাগাতার সবুজে ঘেরাও বলেই এই সাদায় যেন আরও চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ঝিম ধরা পরিবেশ, দুপুর বারোটার সময় একটিও গাড়ি নেই চত্বরে, জনা কয়েক মানুষ শুধু সংলগ্ন বাগানের বেঞ্চে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে।

কারনাল শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দুরে সিংগ্রা গ্রামের এই গুরুদ্বারে পৌঁছাতে মূল সড়ক থেকে কয়েক কিলোমিটার খেতের মাঝের সরু রাস্তা পার হতে হয়েছে। সাড়ে তিন বছর আগের সেই বিকেলটিতে নিশ্চয় এমন নিঃশব্দ ছিল না এখানকার চত্বর। অথবা সেই শোকমূর্ছনা এখনও রয়ে গিয়েছে বলেই এই গুরুদ্বার নীরব। এর প্রাণপুরুষ সন্ত রাম সিংহ দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার সিংঘুতে কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন যে বিকেলে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

‘‘আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল তার কয়েক ঘণ্টা আগেও। খুবই উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল তাঁকে। হয়তো বুঝতে পারছিলেন কৃষকদের দুর্দশা ঘোচার নয়। আমার কাছে পরিস্থিতির খুঁটিনাটি জানতে চাইলেন। কুড়ি সালের ডিসেম্বর মাস ছিল সেটা। এর পরই খবর পেয়ে দৌড়ে যাই আমরা। দেখি উনি যেন শান্ত বসে রয়েছেন দেওয়ালে হেলান দিয়ে, নাক দিয়ে সামান্য রক্ত পড়ছে। হাতে বন্দুক।’’ এখানে পৌঁছনোর আগেই জানিয়েছিলেন গুরনাম সিংহ চারগুনি। ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের হরিয়ানার শাখার কর্তা। এও জানিয়েছিলেন, কৃষি আইনের প্রতিবাদে সন্তের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে যে তুমুল তোলপাড় তৈরি হয়েছিল সেই সময় রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে, তা আজও থামেনি। কারণ, এখনও যে ন্যায় পাননি কৃষকেরা।

গুরুদ্বারের ঠিক পিছনেই সিংগ্রা গ্রামের মানুষ আজও সেই সন্তের কথা প্রতিপদে মনে রাখেন। ‘‘ভোটের মুখে এখানকার কিষান নেতৃত্ব চুপ করে রয়েছেন। মুখে কেউ কিছু বলছে না,’’ বললেন স্থানীয় বাসিন্দা হরশরণ রাম সিংহ। কয়েক বিঘা জমি রয়েছে তাঁর, ওষুধের দোকানও চালান। ‘‘এই নৈঃশব্দ বুঝতে পেরেই বিজেপি কারনাল কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে আগের সাংসদ সঞ্জয় ভাটিয়াকে সরিয়ে মনোহর লাল খট্টরকে (হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী) নিয়ে এসেছে। আদানি গোষ্ঠীকে স্থানীয় গুদাম বিক্রি করে দেওয়া, মান্ডি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্নীতি, ফসলের দাম সময়মতো না পাওয়ার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের ক্ষোভ জমা হয়েছিল এই সঞ্জয়ের উপর। সেই রাগ স্তিমিত করতেই এই পদক্ষেপ।’’

গ্রামেরই এক ভাগচাষি রোহিত দহিয়া বলছেন, যে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিকাশের জন্যই আগে কোনও কাজ করতে পারেননি, তিনি জেলার বিকাশের জন্য আর কী করবেন! সাংসদের দায়বদ্ধতা তো এখানকার মানুষের প্রতি থাকবে। কিন্তু দেখা যায় যিনিই জিতে আসেন, জেলার কথা না ভেবে দলের কথায় ওঠবস করেন। কিষানের কথা শোনার কেউ যদি এখানে থাকতেন, তা হলে বাবা রাম সিংহকে গুলি চালাতে হত না নিজের মাথায়। সেই সাংসদকে দিয়ে আমাদের কী লাভ, যিনি স্থানীয় মানুষের দাবির জন্য দিল্লিতে লড়াই করতেপারবেন না।’’

বোঝাই যাচ্ছে, সাড়ে তিন বছর আগের শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই গ্রাম। তার সঙ্গে রয়েছে অনুন্নয়নের অভিযোগ ২১ লক্ষ ভোটারের এই কারনালে। যেখানে শিখ, হিন্দু, দলিত, মুসলমান, পিছড়ে বর্গের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ‘‘অন্য রকম মানুষ ছিলেন সন্ত রাম সিংহ। শেষ দিকে বারবার বলতেন হরিয়ানা-পঞ্জাবের কৃষকেরা কত সুখে ছিল আগে। সব ছেড়ে রাস্তায় বসত করে আছে। এই দৃশ্য উনি সহ্য করতে পারছেন না। আরও একটা কথা বলতেন তিনি। দিল্লি সবসময় কুরবানি চায়।’’ বলছেন কামারজিৎ সিংহ। গ্রামের শেষ প্রান্তে যাঁর বাড়ি। সন্তের একনিষ্ঠ শিষ্যও বটে। ‘‘বাবার কাছে হিন্দু, শিখ, মুসলমানের ভেদাভেদ ছিল না। জানেন তো, হরিদ্বার থেকে স্বামী পরমানন্দ মাঝে মাঝেই এসে বাবার আতিথ্য গ্রহণ করতেন।’’

বাবা সন্ত রাম সিংহের সেই আত্মোৎসর্গের নামে, ‘ভাইচারা’র নামে ভোট দিতে চলেছে তাঁর প্রিয় এই সিংগ্রা গ্রামটি। তাতে যে গোটা হরিয়ানার তথা আন্দোলনরত কৃষকদের চিত্র পাল্টে যাবে, এমনটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছেন না অবশ্য কেউই। (চলবে)

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Karnal Farmer's Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE