Advertisement
E-Paper

কুকথার তোড়, তবু রা নেই রেজ্জাকে

কুকথা বলে বিপদ বাড়ালেও চুপ, সেমসাইড করলেও চুপ। শাসক দলের মুখে কুলুপ। বিরোধী দলের মহিলা প্রার্থীর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনের কোপে হয়তো পড়েছেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৫

কুকথা বলে বিপদ বাড়ালেও চুপ, সেমসাইড করলেও চুপ। শাসক দলের মুখে কুলুপ।

বিরোধী দলের মহিলা প্রার্থীর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনের কোপে হয়তো পড়েছেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। দলের তরফে কিন্তু তাঁকে ভর্ৎসনা করা হয়নি। রেজ্জাক সাহেব পরোক্ষে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁর দলনেত্রীর বিচারবুদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ভোটের বাজারে পর্যুদস্ত তৃণমূল নেতৃত্ব সেটা দেখেও চোখ বুজে।

বুধবার দিনভর এবিপি আনন্দে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী, বাম জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাককে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা যায়। বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে রেজ্জাককে শো-কজ করেছে নির্বাচন কমিশন। অথচ বছর কয়েক আগেও বাম নেতা অনিল বসু-আনিসুর রহমানরা যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে কুকথা বলেছেন, তা নিয়ে ছিছিক্কার কম হয়নি। সিপিএম নেতৃত্ব কিন্তু তখন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বা অভিযুক্তদের দিয়ে ক্ষমা চাওয়াতে কসুর করেননি। সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া রেজ্জাক কিন্তু কুকথা বলে পার পেয়ে যাচ্ছেন!

ওই সাক্ষাৎকারে কী বলেছেন রে়জ্জাক? হাওড়া (উত্তর) কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি বড় বড় সিগারেট খান আর এর-ওর সঙ্গে থাকেন, সব আমি জানি!’’ রূপাকে ‘দ্রৌপদী’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। কোনও প্রার্থীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা এমনিতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সামিল। এর আগে আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতি মোটে ক’দিনের বলে রেজ্জাক ভোটারদের কার্যত হুমকি দিয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছিল। সে-যাত্রা কমিশন ভর্ৎসনা করেই রেহাই দিয়েছিল তাঁকে। এ বার রেজ্জাককে শো-কজ করেছে তারা। রেজ্জাকের অবশ্য হেলদোল নেই। তিনি বলছেন, ‘‘এমন কত শো-কজ হয়। এখনও কাগজ দেখিনি।
তার পর বলব।’’

সন্ধের পরে অবশ্য তাঁকে কিছুটা ঢোক গিলতে দেখা যায়। তিনি দাবি করেন, সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তিনি সে কথাই বলতে চেয়েছেন। রূপা দ্রৌপদীর চরিত্রাভিনেত্রী বলেই তাঁকে ‘দ্রৌপদী’ বলা হয়েছে। আর ‘এর-ওর সঙ্গে থাকা’ বলতে রূপার দল বদলের দিকেই নাকি তাঁর ইঙ্গিত! বহিষ্কৃত হয়ে নিজের দল গড়া এবং আখেরে তৃণমূলের টিকিট নেওয়া রেজ্জাক নাকি বলতে চেয়েছেন, ‘‘আগে বুদ্ধবাবুর ফ্যান ছিল (রূপা), এখন বিজেপির ক্যান্ডিডেট হয়েছে!’’

এ সবের উত্তরে রূপার সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কাছে আর কতটা শালীনতা আশা করতে পারি? এটুকু বলতে গিয়েও আমার খামোখা ৩০ সেকেন্ড নষ্ট হল।’’ দলের নির্দেশে অবশ্য তাঁকে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানাতে যেতে হয়। বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায় পরে বলেন, এটা কোনও একটি দলের বিষয় নয়। এই ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে সব দল-মতের মানুষেরই প্রতিবাদ করা উচিত।

আরও পড়ুন...
নিরাপত্তার জোর কত, আজ পরীক্ষা
নিন্দা করে লাভ নেই, সব হিসেব উল্টে দেবে বাম-কং জোট: বাবুল

রেজ্জাক অবশ্য তৃণমূল সাং‌সদ দেব এবং মুনমুন সেনকে নিয়েও বিদ্রুপ করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেবকে তিনি ভদ্রলোক পদবাচ্য বলে মনে করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ওই তো দেবের মতো একজনকে দিয়ে (রাজনীতি) হচ্ছে। আপনার (প্রশ্নকর্তা) মতো ভদ্রলোককে দিয়ে নয়!’’ গ্ল্যামার ছাড়া রাজনীতিতে মুনমুনের কোনও উপযোগিতা নেই বলে মন্তব্য করে রেজ্জাকের প্রশ্ন, ‘‘আচ্ছা মুনমুন সেন কী কাজে লাগবে? চাষির কী কাজে লাগবে? মজুরের কী কাজে লাগবে? বি়ড়ি শ্রমিকের কী কাজে লাগবে?’’

২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে দেব-মুনমুনদের দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত কিন্তু নিয়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তাঁদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে মমতার সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ করা। সিপিএমে থাকাকালীনও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অভ্যাস ছিল রেজ্জাকের। ২০১১-র ভরাডুবির পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে ‘চাষার ব্যাটা’র মূল্যায়ন ছিল, ‘‘হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে গিয়েছে!’’ ক্রমাগত দল-বিরোধী কথা বলে চলার কারণেই তাঁকে বহিষ্কৃত হতে হয়। রেজ্জাক এ দিন দেখালেন, পুরনো অভ্যাসটি ত্যাগ করেননি তিনি। ক্যামেরার সামনে দিব্যি বলে দিলেন, অন্তর্দ্বন্দ্ব সামাল দিতেই তারকা প্রার্থী আমদানি করেছিলেন মমতা। এ সব শুনেও মমতা কিন্তু চুপ।
মুনমুন বা দেব— রাত পর্যন্ত তাঁদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

বামেদের অনেকে শুধু মুখ টিপে হাসছেন। বলছেন, নেত্রী নিজেই তো আজকাল নানা বেফাঁস কথা বলছেন। নারদের কথা জানলে ববি-শোভনদের টিকিট দিতেন না অবধি বলে বসেছেন। দলের মাথাই যেখানে সেমসাইড করেন, সেখানে এখন রেজ্জাককে নিয়ে মুখ খোলার জায়গা কোথায়? কিন্তু রূপাকে যে ধরনের অশালীন আক্রমণ করা হল, তা নিয়েও কি কিছু বলবে না দল? তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এখন তো সবাই ভোট নিয়ে ব্যস্ত। রেজ্জাক সাহেবের মন্তব্য নিয়ে কী করা যায়, পরে
দেখা যাবে!’’ তবে রেজ্জাক সাহেবের মন্তব্য যে ‘অস্বাস্থ্যকর’, সেটুকু অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে স্বীকার করেছেন পার্থবাবু। সেখানে তৃণমূল রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর মন্তব্য, ‘‘কে জানে, কী বলেছেন উনি! পরে টিভি দেখে না-হয় যা বলার বলব।’’ তৃণমূলপন্থী কবি সুবোধ সরকার আবার এ সবই আদতে বাম আমলের ট্র্যাডিশন বলে তির ঘুরিয়ে
দিতে চেয়েছেন।

সিপিএম নেতৃত্ব কিন্তু মনে করাচ্ছেন, অনিল বসুর কুরুচিকর মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিন্দাসূচক বিবৃতি দিয়েছিল দল। কুকথা বলে দলের নির্দেশে আনিসুর রহমানকেও ক্ষমা চাইতে হয়। এর উল্টো পিঠে মমতার নীরবতা দেখে সূর্যকান্ত মিশ্রর অভিযোগ, ‘‘উনিও (মমতা) মেয়েদের বিষয়ে বিজেপি-র মতোই মনুবাদী মানসিকতা পোষণ করেন। তাই কিছু বলছেন না।’’

assembly election 2016 BJP TMC Rezzak Molla
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy