Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নয়া একলাখি প্রকল্প নিয়ে নন্দীগ্রাম জুড়ে হাসছেন একা শুভেন্দু

প্রকল্পটা একলাখি। এবং উন্নয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।কয়েক মাস আগে নন্দীগ্রামে এসে প্রকল্পটির শিলান্যাস করেছিলেন খোদ তৃণমূলনেত্রী। তার পর থেকেই তাঁর দলের কর্মীরা সংকল্প নিয়েছেন, এ প্রকল্পকে বাস্তবের মুখ দেখাতেই হবে। যাঁর নামে এই প্রকল্প, তিনিও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। তবে, সময় কম দিতে পারছেন। তাঁর কি শুধু নন্দীগ্রামে মন! হাতে যদিও আর সময় নেই। তাতে কী! এ প্রকল্প সফল হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ওঁরা সকলেই।

প্রচারের শেষ দিনে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

প্রচারের শেষ দিনে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ২০:২৯
Share: Save:

প্রকল্পটা একলাখি। এবং উন্নয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।

কয়েক মাস আগে নন্দীগ্রামে এসে প্রকল্পটির শিলান্যাস করেছিলেন খোদ তৃণমূলনেত্রী। তার পর থেকেই তাঁর দলের কর্মীরা সংকল্প নিয়েছেন, এ প্রকল্পকে বাস্তবের মুখ দেখাতেই হবে। যাঁর নামে এই প্রকল্প, তিনিও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। তবে, সময় কম দিতে পারছেন। তাঁর কি শুধু নন্দীগ্রামে মন! হাতে যদিও আর সময় নেই। তাতে কী! এ প্রকল্প সফল হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ওঁরা সকলেই।

কী সেই প্রকল্প? এ বারের নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূল প্রার্থীকে এক লাখেরও বেশি ভোটে জেতাতে হবে। গত ডিসেম্বরে নন্দীগ্রামেই এক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর নাম ঘোষণা করেছিলেন। তার পর হলদি দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। তালপাটি খালও অনেকটা শুকিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারই সেই ‘শুভ দিন’।

পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা আবু তাহেরের ধারণা, ওই দিন নন্দীগ্রামের মানুষ দলে দলে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকেই ভোট দেবেন। ধারণা! তবে কি ঘরের মানুষ ফিরোজা বিবির বদলে সেলেব প্রার্থী শুভেন্দুকে নিয়ে তাঁরা চাপে আছেন? ‘‘চাপ?’’ হাসিটা প্রায় কান অবধি ছড়িয়ে দিয়ে জানালেন, যে দু’টি মানুষের জন্য গত পাঁচ বছর নন্দীগ্রাম খুবই ভাল কাটাতে পেরেছে তাঁদের এক জন ‘মমতাদি’, অন্য জন ‘শুভেন্দুদা’। তাঁর কথায়, ‘‘সামনে থেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দুদা। তাই সেলিব্রিটি নয়, ঘরের ছেলেই আমাদের প্রার্থী। এক লাখ ভোটে জেতাব।’’

ঘরের ছেলে? শুনেই বেশ রেগে গেলেন সবুজ প্রধান। প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য এবং নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই পুরোভাগে ছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু এক সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্বে কখনওই ছিলেন না।’’ একলাখি প্রকল্পের কথা শুনে একটু হেসে নিলেন, তার পর বললেন, ‘‘বিরোধীরা ভোট দিতে পারলে এ প্রকল্পও কিন্তু নন্দীগ্রামের অন্য সব প্রকল্পের মতো ভেস্তে যেতে পারে!’’

দেখুন নন্দীগ্রামের ভিডিও

ভেস্তে যেতে পারে? প্রশ্ন শুনেই তৃণমূলের আর এক নেতা শেখ সুফিয়ান যেন ফুঁসে উঠলেন। ‘‘কী বলছেন! নন্দীগ্রামই তো তাঁর ঘরবাড়ি। কী করেননি তিনি এখানকার জন্য! এক লাখেরও অনেক বেশি ভোটে জিতবেন।’’ তা হলে কি গুড়-বাতাসার ব্যবস্থা থাকবে? নাকি ভূতেরা দাপাবে বুথে? চেয়ারের উপর আর একটু চেপে বসলেন সুফিয়ান। হাতের মুঠোয় বাজতে থাকা মোবাইলটাকে চেপে বন্ধ করে দিলেন নিঃশব্দে। তার পর গোটা মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে বললেন, ‘‘নন্দীগ্রামে ও সব গুড়-বাতাসার প্রয়োজন হয় না। আর, কেউ কোথাও দাপাবেও না।’’

সে কি! দাপাবে না বললেই হল! প্রার্থী নিজেই তো দাপানোর কথা বলছেন। এই তো ক’দিন আগেই শোনা গেল কর্মিসভায় তিনি বলছেন, ‘‘আমি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয়। আপনাদের কথা দিতে হবে লোকসভার থেকে এ বার আমাকে বেশি ভোট দিতে হবে। যাতে আমি বাংলা দাপাতে পারি।” কথাটা মনে করিয়ে দিতেই সুফিয়ান হাসিটাকে যেন গিলে ফেললেন।

তিনি গিলে ফেললে কী হবে! নন্দীগ্রামে তো হাসির অভাব নেই! গোটা জনপদ জুড়ে এক জনই হাসছেন। তিনি শুভেন্দু অধিকারী। গাছে, পাঁচিলে, মাঠে, নলকূপের গায়ে, বাড়ির দেওয়ালে, ক্লাবের চালে— সর্বত্র তাঁর হাসি মুখ। পোস্টার, ব্যানার, দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন— সব জায়গাতেই তিনি হাসছেন। বিরোধীদের কোনও অস্তিত্বই নেই যেন! তিনি একাই প্রার্থী। বাকিরা কোথায়?

‘‘মানুষের মনে আছি।’’—বলছেন নন্দীগ্রামের সিপিআই প্রার্থী কবীর মহম্মদ। তৃণমূলের নতুন এই একলাখি প্রকল্পের কথা শুনেছেন? ‘‘কত প্রকল্পের কথাই তো শুনেছি এই ক’বছরে। নতুন আর একটা যোগ হল, আর কি!’’ কী মনে হচ্ছে? ‘‘দেখুন, সেই সময় যারা বলল ভুলতে পারি আমার নাম, ভুলব নাকো নন্দীগ্রাম, তারা অনেক প্রতিশ্রুতি মানুষকে দিয়েছিল। আশাও বেঁধেছিল মানুষ। কিন্তু, সে সব কিছুই হয়নি। অথচ এখানকার মানুষের চাহিদা কিন্তু কমই ছিল।’’

আরও পড়তে ক্লিক করুন
উন্নয়নের কোনও ট্রেনই আসলে এসে পৌঁছয়নি পরিবর্তনের নন্দীগ্রামে

কী চাহিদা?

কবীর মহম্মদ বললেন, ‘‘কৃষকদের বাঁচানোর তাগিদে আমাদের এখানে আগে চাষযোগ্য জলের দরকার ছিল। বিকল্প চাষের ক্ষেত্রে তা ছিল খুবই প্রয়োজনীয়। এতে সব্জি হতে পারত, ধান হতে পারত, গম বা সর্ষেও হতে পারত। তা হলে মানুষ বাঁচত।’’ এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘নদীর মিষ্টি জল ধরে রেখে তাকে চাষযোগ্য করে তোলার কাজটাই আর করে উঠতে পারল না কেউ। বামফ্রন্টের আমলেও যেমন হয়নি। পরিবর্তনের আমলেও হল না।’’

বাংলা দাপানোর প্রত্যয় নিয়ে যিনি নন্দীগ্রাম জু়ড়ে হাসছেন, সেই শুভেন্দু শুধু বলছেন, ‘‘দেখুন উন্নয়ন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’’ আপাতত টিম-শুভেন্দু ব্যস্ত তাঁর একলাখি প্রকল্প নিয়ে। পূর্ব মেদিনীপুরের ‘যুবরাজ’ এই প্রকল্প গড়েই আসলে টেক্কা দিতে চাইছেন গোটা বাংলায় তাঁর সহযোদ্ধাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE