Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিরদাঁড়া সোজাই রাখুন, বাহিনীকে নির্দেশ সৌমেনের

দু’দিন আগেই ভোট-পরবর্তী হামলা দেখেছে শহর। তাতে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পাটুলি থানার ওসি-র ভূমিকা। সেই ঘটনাকেই উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে বাহিনীকে ফের মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করতে নির্দেশ দিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

দু’দিন আগেই ভোট-পরবর্তী হামলা দেখেছে শহর। তাতে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পাটুলি থানার ওসি-র ভূমিকা। সেই ঘটনাকেই উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে বাহিনীকে ফের মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করতে নির্দেশ দিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। পাশাপাশি, বিভিন্ন ঘটনাকে ‘ছোট ঘটনা’ বলে দেখানোর যে রেওয়াজ ইদানীং রাজ্য রাজনীতিতে চালু হয়েছে, তাকে নস্যাৎ করে সিপি-র পরামর্শ, ‘‘সামান্যতম অভিযোগকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তবেই যে কোনও বড় ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।’’

গত ২১ এবং ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যে দু’দফার ভোট হয়ে গেল, সেখানে কোন থানা কী ভাবে কাজ করেছে, তা পর্যালোচনার জন্য মঙ্গলবার লালবাজারে বৈঠক ডেকেছিলেন পুলিশ কমিশনার। সেখানে ছিলেন বিভাগীয় ডিসি এবং তাদের ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারেরা। নির্বাচনের দিন এত সুন্দর ভাবে পরিস্থিতি সামলানো সত্ত্বেও কেন তার পরে হরিদেবপুর, বালিগঞ্জ, পাটুলি এবং কসবা থানা এলাকায় শাসক দলের হামলা ঠেকানো গেল না, কেনই বা কিছু মানুষের মনে আস্থা ফেরানো গেল না, সে প্রশ্নও বৈঠকে ওঠে।

লালবাজারের এক কর্তা বলেন, কলকাতায় দু’দফার নির্বাচনে মানুষ যে ভাবে অবাধে ভোট দিয়েছেন, তার জন্য সিপি বেশ কিছু থানার ওসি-কে নিজে ফোন করে বাহবা দিয়েছিলেন। কলকাতা পুলিশের ভূমিকায় পঞ্চমুখ হয়েছিল নির্বাচন কমিশন, সন্তোষ প্রকাশ করেছিল বিরোধী দলগুলিও। এর পরেও শনিবার রাত থেকে চারটি থানা এলাকায় যে সব হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে ফের প্রশ্নের মুখে কলকাতা পুলিশের ভাবমূর্তি। এর মধ্যে পাটুলি থানার ওসি-র ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন লালবাজার।

ওই চার থানা এলাকায় যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কোথাও না হয়, সে নিয়ে ডিসি-দের এ দিন সতর্ক করে সিপি বলেন, ‘‘পাটুলির মতো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক হামলার সামান্যতম ঘটনাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’’ পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা চলে যেতে পারে, এমন কাজ যাতে বাহিনী না করে, সে বার্তাও প্রতি থানায় পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

ডিসি-দের কেউ কেউ বলছেন, দায়িত্ব নিয়েই বাহিনীকে প্রতিটি বল সোজা ব্যাটে খেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন কমিশনার। তা মেনে চলায় প্রথম দফার ভোটের পরে শহরে নির্বাচনোত্তর গোলমালও হয়নি। বাহিনীর উপরে আস্থা বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচনের পরে টহল দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীও চায়নি কলকাতা পুলিশ। যদিও বিধাননগর পুর-এলাকায় এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হয়েছে টহলদারির জন্য। সেখানে কোনও হামলা হয়নি। কিন্তু কলকাতায় পাঁচটি হামলার ঘটনা ঘটে যাওয়ায় কেন পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখল না, সেই প্রশ্নও এখন উঠছে।

যেখানে যেখানে হামলা হয়েছে, সেখানে পুলিশের উপরে আস্থা ফেরাতে ২৪ ঘণ্টা টহলদারির নির্দেশ দেন সিপি। তবে এক বার হামলার পরে হরিদেবপুর, বালিগঞ্জ ও কসবা থানা এলাকায় নতুন করে গোলমাল হয়নি। অনেক অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করেছে থানাগুলি। ব্যতিক্রম শুধু পাটুলি থানা। শনিবারের তাণ্ডবের ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও কেউ গ্রেফতার হয়নি সেখানে। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৬ জন এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনও পেয়ে যান।

কেন অভিযুক্তদের কাউকে পাটুলি থানা ধরতে পারল না, সেই প্রশ্ন এ দিন ডিসি-দের বৈঠকে ওঠে। সোমবার রাতে কেন ফের হামলা হল, উঠেছে সেই প্রশ্নও। বিভাগীয় ডিসি সন্তোষ পাণ্ডে জেরবার হন সহকর্মীদের প্রশ্নে। কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিভাগীয় ডিসি-রা নিজেদের মধ্যে আলাদা ভাবে কথা বলেন। সেখানেই পাটুলি থানার ওসি-র ভূমিকা নিয়ে এক ডিসি-র মন্তব্য, ‘‘উনি আমাদের ভুল খবর দিয়েছিলেন। তাই বাড়তি ফোর্স পাঠাতে সময় লেগেছে।’’ তবে কলকাতা পুলিশের ডিসি-দের মতে, রবিবার রাতে বাঘা যতীনে হামলার ঘটনায় প্রথমেই যদি পাটুলি থানা যথাযথ ব্যবস্থা নিত, তা হলে কলকাতা পুলিশের মুখ এমন ভাবে পুড়ত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE