Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

সমবায়ে বহু কোটি তছনছ, অভিযুক্ত তৃণমূলের প্রার্থী

ভোটের মুখে ঝুলি থেকে বেরলো দুর্নীতির আর এক নজির। এ বার সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল পূর্ব মেদিনীপুরের এক তৃণমূল প্রার্থীর।

সমরেশ দাস

সমরেশ দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও এগরা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

ভোটের মুখে ঝুলি থেকে বেরলো দুর্নীতির আর এক নজির। এ বার সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল পূর্ব মেদিনীপুরের এক তৃণমূল প্রার্থীর।

অভিযুক্ত সমরেশ দাস এগরার বিদায়ী বিধায়কও বটে। পাশাপাশি তিনি বলাগেড়িয়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান। অভিযোগ, ওই সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তিনি কয়েক কোটি টাকা তছনছ করেছেন। এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিল সমবায়ের কর্মচারী সংগঠন। শুক্রবার তার শুনানি ছিল হাইকোর্টে। প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্য রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটিসকে নির্দেশ দিয়েছে, সমরেশবাবুর বিরুদ্ধে ফের তদন্ত করে আগামী তিন মাসের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নিতে।

সারদা কেলেঙ্কারি থেকে নারদ-ভিডিও, তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে ভোট-বাজার এমনিতেই সরগরম। বিরোধীরাও এ সব নিয়ে রোজ আক্রমণ শানাচ্ছে। সমরেশবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও সরব হয়েছে বিরোধীরা। সদ্য তৃণমূল ছেড়ে আসা মামুদ হোসেন এ বার সমরেশবাবুর বিরুদ্ধে এগরায় বাম প্রার্থী। তিনি বলেন, “জনগণের টাকা তছনছ করতে তৃণমূল নেতারা যে সিদ্ধহস্ত তা সারদা-নারদে মানুষ আগেই দেখেছে। এ বার সমবায়ের দুর্নীতি সামনে আসায় বোঝা গেল সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে এরা কী কাণ্ডটাই না করছে।”

অভিযোগটা ঠিক কী?

জানা গিয়েছে, অভিযোগ এক নয়, একাধিক। প্রথমত, মেয়াদ ফুরনোর পরেও পদে থেকে গিয়েছেন সমরেশবাবু। পর পর দু’বারের বেশি যেখানে সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হওয়া যায় না, সেখানে ১৯৮৮ সাল থেকে বলাগেড়িয়া সমবায়ের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন সমরেশবাবু। দ্বিতীয় অভিযোগ আরও গুরুতর। এই সমবায় ব্যাঙ্কের তিন কোটি টাকা ‘এস আর গ্রিন কোম্পানি’ নামে এক বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী এ রকম সংস্থায় কোনও সমবায় তার টাকা বিনিয়োগ করতে পারে না। তবু ওই সমবায় ৩২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল মিউচুয়াল ফান্ডে। যার মধ্যে ২২ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তা ছাড়া, ওই অর্থলগ্নি সংস্থাকে বন্ড কেনার জন্য ১০ কোটি টাকাও দেয় বলাগেড়িয়া সমবায়।

এই সমবায় কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে সারদার নামও। অভিযোগ, বলাগেড়িয়া সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে সারদার একটি চ্যানেল ও আর একটি সংস্থা ‘পিনকন’-কে চার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। সেই সংস্থা দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণের ২১ শতাংশ অনাদায়ী থেকে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই দু’টি সংস্থা ঋণ পেতে যে সম্পত্তি গচ্ছিত রেখেছিল, টাকা অনাদায়ী থাকা সত্ত্বেও সেই সম্পত্তি হাতে নেয়নি সমবায়। সমবায়-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সমরেশবাবুর ছেলে পার্থসারথি দাসও। অভিযোগ, এই সমবায়ের ১২টি শাখায় ভুয়ো সংস্থা খুলে নিরপত্তারক্ষী সরবরাহ করতেন পার্থসারথি। এই ভুয়ো সংস্থাকেও ১৮ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, পার্থসারথির সংস্থার নামে নেওয়া ঋণের টাকা সমবায় ব্যাঙ্কের বিভিন্ন আনক্লেমড ডিপোজিট, মার্জিন মানি ও সরকারি ভর্তুকির টাকা দিয়ে শোধ করা হয়েছে, যা আমানতকারী ও গরিব কৃষকদের প্রাপ্য টাকা।

ওই সমবায়ের কর্মচারী সংগঠনের আইনজীবী সৌমেন দত্ত জানান, কর্মীদের অভিযোগ পেয়ে নাবার্ড এবং জয়েন্ট রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটিস তদন্ত করে চেয়ারম্যান-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পদক্ষপ করতে বলেছিল। কিন্তু সেই সব কিছুই হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কর্মচারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE