Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

গোপীকুল

পুরনো মাস্টারমশাইরা লুপ্ত কে বলল! হায়দরাবাদের ব্যাডমিন্টন গুরুকুলে পুলেল্লা গোপীচন্দ-কে দেখে গৌতম ভট্টাচার্য-র মনে হল, তপস্যা না করলে সিদ্ধি সম্ভব নয়অ্যাকাডেমির অফিস ঘরের লাগোয়া কোনার ওই রুমটার আলাদা কোনও নাম নেই। কিন্তু ঢুকেই ফ্রেমে বাঁধানো যে বড় ছবিটার মুখোমুখি হতে হয় সেটাই তো অদৃশ্যে বিড়বিড় করে বলছে, আমার নামটা বুঝতে পারলে না, ইডিয়ট কোথাকার?

ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য

ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

অ্যাকাডেমির অফিস ঘরের লাগোয়া কোনার ওই রুমটার আলাদা কোনও নাম নেই। কিন্তু ঢুকেই ফ্রেমে বাঁধানো যে বড় ছবিটার মুখোমুখি হতে হয় সেটাই তো অদৃশ্যে বিড়বিড় করে বলছে, আমার নামটা বুঝতে পারলে না, ইডিয়ট কোথাকার? ছবিগুলো পরপর দ্যাখো। একটু মন দিলেই বুঝবে...

আর কে নারায়ণন (১৯৯৭-২০০২), এ পি জে আব্দুল কালাম (২০০২-২০০৭), প্রতিভা পাটিল (২০০৭-২০১২), প্রণব মুখোপাধ্যায় (২০১২- )।

ভারতের বর্তমান ও প্রাক্তন চার রাষ্ট্রপতিকে এক বন্ধনীভুক্ত করে দিতে পেরেছেন ঘরের অধিকারী। কোনও ছবিতে তিনি রাজীব খেলরত্ন পুরস্কার নিচ্ছেন। কোনওটায় দ্রোণাচার্য। কোনওটায় অর্জুন, কোনওটায় পদ্মভূষণ। পুলেল্লা গোপীচন্দকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রথম নাগরিকদের চারটে পরপর ছবি যেন সময়কে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে! আর অস্ফুটে বলছে, দ্যাখ, কুড়ি বছর ধরে আমার খেলা আমাকে ছেদহীন কুর্নিশ জানিয়ে যাচ্ছে! আমি এতটাই ধারাবাহিক!

গোপীচন্দ অ্যাকাডেমিতে এক ঘণ্টা কাটিয়ে মনে হচ্ছিল এ তো জীবন্ত শিবাজি পার্ক। দাদার থেকে তুলে এনে কেউ হায়দরাবাদ শহরতলিতে বসিয়ে দিয়েছে। এর পর এখানকার রমাকান্ত আচরেকরের ঘরের নামও বুঝে নিতে অসুবিধে নেই!

ধারাবাহিকতা!

ইন্টারভিউয়ের জন্য চেয়ার টেনে বসতে গিয়ে আবিষ্কার করা গেল ঘরের দক্ষিণ কোণে বিবেকানন্দর বিশাল ফ্রেম বাঁধানো ছবি। দেশীয় ব্যাডমিন্টনের সর্বকালের সেরা আঁতুড়ঘরের মধ্যে বিবেকানন্দ কী করছেন?

• স্বামী বিবেকানন্দর এত বড় ছবি? আপনি নির্ঘাত ভক্ত!

আমি ওঁর দর্শনের বড় অনুসারী। যেখানে উনি বলছেন নিজের লক্ষ্যে না পৌঁছনো অবধি কখনও থেমে যেও না।

• মনে বিশেষ দাগ কেটে যাওয়া কোনও লাইন?

অনেক! একটা তো সবার মুখে মুখে ফেরে যে, গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেললে তোমরা ঈশ্বরের অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, ওই ভাবে বলতে পারা যে, ভারত থেকে আমরা তোমাদের বাকি বিশ্বের সমকক্ষই শুধু নই। আমরা আরও উন্নত। শিকাগোতে গিয়ে যখন উনি বললেন, সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অব আমেরিকা। উফ, ভাবা যায় কী বুকের পাটা! একটা মানুষ ১৮৯৩ সালে কলকাতা থেকে আমেরিকায় গিয়ে অকুতোভয়ে বলছে সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অব আমেরিকা। তুলনাহীন! তুলনাহীন!

• সুপারম্যান?

না, সুপারম্যান বলব না। আমার মনে হয় ওঁকে স্বর্গ থেকে ওই কম সময়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল এটা বোঝাতে যে তুমি ঈশ্বরের কাছে যে সাহায্য চাইছ, সেটা দেওয়ার ক্ষমতা তোমার নিজের মধ্যেই রয়েছে। নিজেকে জাগাও। নিজের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে শেখো। দেখবে বিশ্ব তোমার পায়ের তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।

• আপনার ব্যাডমিন্টন শিক্ষার দর্শনও কি তাই যে নিজের ওপর বিশ্বাস আনো। তুমিও বিশ্বসেরাকে হারাতে পারবে।

চেষ্টা তো করি। আর বিউটি এটাই যে, ওদের কেউ কেউ মনেপ্রাণে তাই বিশ্বাস করে। আসলে প্রতিদ্বন্দ্বীকে কোর্টে হারাবার আগে তাকে মনে হারাতে হয়। সেটাই আসল শিক্ষা।

• একটা ব্যাপারে প্রচুর কৌতূহল রয়েছে। সরাসরি জিজ্ঞেস করছি।

ইয়েস।

• সিন্ধুর সঙ্গে ক্যারোলিনা মারিনের এর পর কোর্টে দেখা হলে কী হবে?

নির্ভর করবে আমাদের প্রস্তুতির ওপর। কোথায় খেলা হচ্ছে সেই পরিবেশের ওপর। তবে একটা কথা বলতে পারি যে, অলিম্পিক্সের পর এই সিন্ধু কিন্তু নতুন সিন্ধু। অনেক বেশি কনফিডেন্ট। এখনও আপনারা ওর বেস্টটা দেখেননি। যেটা এক বছরের মধ্যে দেখবেন।

• এই সিন্ধু তাঁর সম্ভাবনার কত পার্সেন্ট? সিক্সটি? সেভেনটি?

সেভেনটি। বাকি থার্টি পার্সেন্ট এ বার আপনারা দেখতে চলেছেন।

• একটা কথা বলুন। কাল ক্যারোলিনা আর সিন্ধুর খেলা হলে আপনার ছাত্রীর কী লক্ষ্য হওয়া উচিত? এই বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্যক্তিগত লড়াইয়ে হারিয়ে বদলা নেওয়া? না কি স্রেফ ম্যাচটা জেতা?

এটা যদি বিশ্বের এক আর দু’নম্বরের মধ্যে ম্যাচ হয় তা হলে ওই বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে এক নম্বর র‌্যাঙ্কিং পাওয়াটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে যায়। কিন্তু সিন্ধু তো দুই নয় — দশ নম্বর।

তবে আপনি কী বলতে চাইছেন আমি বোধহয় ধরতে পারছি। সেই জবাবটা দিই। প্রতিহিংসা নিয়েটিয়ে বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার মতো সব মশলা সিন্ধুর মধ্যে রয়েছে।

• আপনার মেয়ে শোনা যাচ্ছে খুব সম্ভাবনাময়। এখনই দেশে অনূ্র্ধ্ব তেরো চ্যাম্পিয়ন। ওর ব্যাপারে কী বলবেন?

টু আর্লি। এখনও বলার সময় আসেনি।

• কী বলছেন? অনূর্ধ্ব তেরো হয়েও সে অনূর্ধ্ব পনেরো-তে দেশের এক নম্বর। আর আপনি বলছেন সময় আসেনি?

টু আর্লি।

• কেউ কখনও আপনাকে বলেছে ভারতের এক ক্রিকেট নক্ষত্রের সঙ্গে আপনার অদ্ভুত মিলের কথা?

না তো। কে?

• রাহুল দ্রাবিড়। চূড়ান্ত উচ্ছ্বাসের মধ্যেও নিজেকে সংযত অথচ কঠিন রাখার ব্যাপারে দ্রাবিড়ের সঙ্গে আপনার মিল অলিম্পিক্স চলাকালীন টিভি ক্যামেরায় বারবার ধরা পড়েছে।

হাঃ হাঃ


রিও-র সংবর্ধনা: সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট চামুণ্ডীশ্বরনাথ।

• দ্রাবিড়কে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন?

হ্যাঁ, অনেক বছর চিনি। বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। রাহুল মানুষ হিসেবে খুব ফ্রেন্ডলি। তবে কোচ হয়ে এই সদ্য ও শুরু করল।

• না, দ্রাবিড় তো রাজস্থান রয়্যালস-কে কোচিং করাচ্ছিলেন। তারপর দিল্লি টিমে গেলেন।

হ্যাঁ, দ্যাটস রাইট।

• ফাইনালে ওই রকম উত্তেজক ম্যাচেও আপনাকে অদ্ভুত বরফ-শীতল দেখাচ্ছিল। আপনি কি ধ্যান করেন?

অবশ্যই। অ্যাথলিট আর প্লেয়ার থাকার সময় নিয়মিত করতাম। এখন যেটা সব সময় পারি না। কোচিংয়ের জন্য এত ভোরে এখন উঠতে হয় যে ধ্যানের সময় পাই না।

• গোপীচন্দ-র জীবনে একজন গোপীচন্দ থাকলে কী হত?

(সামান্য সময় নিয়ে) স্পোর্টসম্যান হিসেবে শুরুর দিকের বছরগুলো অন্য রকম হতো। তেরো থেকে আঠারো — ওই সময়টা ভাইটাল। তখন আপনাকে পিছন থেকে পুশ করাটা জরুরি। ঠিকঠাক সাপোর্ট জরুরি।

• সেই সময় কী কী ঠিক মতো শিখতে পারেননি মনে হয়?

ফিটনেস নিয়ে যথেষ্ট ধারণা ছিল না। ডায়েট কী হওয়া উচিত জানতাম না। ঠিকঠাক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে পারিনি। সবচেয়ে বড় কথা, ট্রেনিংয়ের একটা স্ট্রাকচার গড়তে হয়, যা রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড। সংক্ষেপে — ফল দেওয়ায় অব্যর্থ। আমার সে সব কিছুই ছিল না।

• ব্যাডমিন্টন মহল বিশ্বাস করে সিডনি অলিম্পিক্সে কোচের পথনির্দেশ চেয়েও আপনি উপযুক্ত টিপস পাননি। পেলে অলিম্পিক্স পদক জিততেন।

একেবারে পাইনি তা নয়। সহ-খেলোয়াড়রা একটা সময় হেল্প করেছে। প্রকাশ পাড়ুকোন সব সময় হেল্প করেছেন।

• অবশ্য তেমন কোনও কোচ না থেকেও অল ইংল্যান্ড বিজয়ী। মন্দ কী?

ঈশ্বরের করুণা।

• কোচ হিসেবে এই জীবনে আপনি শোনা যায় ভীষণ কড়া। মোবাইল ফোন নাকি আপনার সবচেয়ে অপছন্দের সামগ্রীর মধ্যে পড়ে?

হ্যাঁ, আমি খুব কড়া। আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত একটা লক্ষ্য বুকে নিয়েই বেঁচে থাকা উচিত।

• আপনি সৈয়দ নইমুদ্দিনের নাম শুনেছেন?

সৈয়দ নইমুদ্দিন?

• হ্যাঁ, হায়দরাবাদেরই মানুষ। বিখ্যাত ফুটবলার, পরে কোচ।

অফ কোর্স জানি। সরি, প্রথমে বুঝতে পারিনি।

• নইম কোচ থাকার সময় ফুটবলারদের লম্বা চুল নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, চুলের পরিচর্যা করতে গিয়ে ফুটবলারদের খেলা থেকে মন সরে যেতে পারে। আপনি তো সে রকমই বলছেন।

সাফল্যের রাস্তায় পৌঁছনো এমনিতেই এত কঠিন। তার মধ্যে চান্স না নিয়ে সব রকম চান্স ফ্যাক্টরকে নির্মূল করে ফেলাই ভাল নয় কি?


ওয়াল অব ফেম: চার রাষ্ট্রপতি, পাঁচ পুরস্কার। গোপীচন্দ অ্যাকাডেমিতে।

• কিন্তু মোবাইল কী দোষ করল? সোশ্যাল মিডিয়াতে শিক্ষার্থীদের থাকাও আপনি নাকি পছন্দ করেন না। এ তো পুরো নইম!

করি না। ওই একটু টুইট করল। ফেসবুক পোস্ট করল। এগুলো প্রচুর সময় নিয়ে নেয়। অনর্থক ডিস্ট্র্যাকশন। মন সরে যাবে। আমি নিজেও করি না।

• ট্রেনিংয়ের সময় তো আর কেউ মোবাইল সুইচ অন করছে না। ট্রেনিং করে উঠে অন করলে দোষ কী?

ডিসিপ্লিনটা ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট জীবনে। তেমনই ইম্পর্ট্যান্ট হল ফোকাস। আপনি আমার অ্যাকাডেমিতে হয়তো ট্রেনিং করছেন ছ’ঘণ্টা। সেই ছ’ঘণ্টার মতোই ভাইটাল হল হাতে থাকা বাকি আঠারো ঘণ্টা নিয়ে আপনি কী করছেন? কী খাচ্ছেন? কতটা রেস্ট নিচ্ছেন? কী ভাবছেন? কোথায় মিশছেন?

• আপনি এত গোঁড়া। কাল যদি আচমকা খবর পান পিভি সিন্ধুর জীবনে বয়ফ্রেন্ডের আবির্ভাব ঘটেছে। কী করবেন?

(কোনও উত্তর নেই। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে)

• আরে এত গম্ভীর হয়ে গেলেন কেন? আমি তো একটা কাল্পনিক পরিস্থিতির কথা বলেছি মাত্র। তা ছাড়া ইয়ং মেয়ে। হতেই তো পারে।

এমন যদি কিছু হয়, উই উইল ডিল উইথ ইট (একই রকম গম্ভীর)।

• শুনেছি এই বিয়াল্লিশ বছরেও আপনি খুব ফিট আর নিয়মিত খেলেন। কী হবে যদি গোপীচন্দ ভার্সেস সিন্ধু একটা সিঙ্গলস ম্যাচ হয়?

হাঃ টাফ ম্যাচ হবে।

• মাথার চুল এত ছোট হয়ে গেল কী করে?

তিরুপতিতে চুল দিয়ে এলাম যে (হাসি)।

• খুব রোগাও লাগছে। শুনলাম দশ কেজি ঝরিয়েছেন?

ইয়েস, অলিম্পিক্স পার্টিসিপেন্টের সঙ্গে লেগে থাকতে হলে সবার আগে কোচকে সুপার ফিট হতে হবে।

• আপনি নাকি মনে করেন ভারতীয় কোচেরা খুব সফট। তাদের অনেক কঠিন হওয়া উচিত।

আমি মনে করি টপ লেভেল ট্রেনিং ইজ ভেরি ভেরি টাফ।

• সিন্ধু বলছিলেন, স্বাভাবিকভাবে মোটেও অ্যাগ্রেসিভ ছিলেন না। আপনি বাধ্য করেছেন কোর্টের মধ্যে চিৎকার করতে।

হ্যাঁ, ওই ধাক্কাটা ওকে দেওয়া দরকার ছিল। এত ফ্রেন্ডলি, মুখচোরা মনোভাব ছিল ওর শুরুতে, যে তা দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস সম্ভব হতো না।

• সিন্ধুর পিছনে খাটতে গিয়ে, সিন্ধুকে তুলতে গিয়ে আপনার এক প্রিয় ছাত্রী আপনাকে ছেড়ে গিয়েছেন। সাইনা নেহওয়াল। আপনার সম্পর্কে অপ্রীতিকর কিছু কথাও বলেছেন। অপমানিত লাগেনি?

সাইনাকে আমি রেসপেক্ট করি। বলে থাকলে বলেছে। আমি কী করব?

• গোপী, এত সাফল্যের পাশাপাশি আপনি কিন্তু তীব্রতম আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন। কী প্লেয়ার হিসেবে। কী কোচ হিসেবে। কখনও মনে হয় না এত ঈর্ষা সামলানোটাই মস্ত চাপ?

আমি নিজের মধ্যে ঈর্ষা সামলানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ এনার্জি বরাবর মজুত রাখতে পেরেছি। এটাই আমার উত্তর।

• এই যে একটা মাস সংবর্ধনা আর প্রশস্তির জোয়ারে ডুবিয়ে দেওয়া হল সিন্ধুকে। সেটাও তো ক্ষতিকারক হতে পারে। এত ফাংশনে আপনারা গেলেন। এত সব আর্থিক নিরাপত্তা পেলেন। সেটাও তো লড়াইয়ের আগুন কমিয়ে দিতে পারে।

ফোকাসটা পুরোপুরি ফিরিয়ে এনে আমরা তো ট্রেনিংয়ে নেমে পড়েছি। লাস্ট বারো দিন ধরে একটু একটু করে ট্রেনিংয়ের ইনটেনসিটি বাড়াচ্ছি। কিন্তু এত খাটাখাটনি আর চোখ ধাঁধানো সাফল্যের পর সেলিব্রেশনটা জরুরি ছিল। ব্যালেন্সটা তো রাখতে হবে। তবু আমরা সব সময় খেয়াল রেখেছি পরিস্থিতি যেন আয়ত্তের মধ্যে থাকে। বিগড়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিতে যাইনি।

• এত বছর ধরে আপনি ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে জড়িয়ে। প্লেয়ার হিসেবে এক নম্বরে পৌঁছনোর জন্য দীর্ঘ এত বছরের প্রাণপণ ট্রেনিং। তার পর আবার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সারা দিন অ্যাকাডেমিতে। নিঃসঙ্গ লাগে না যে অন্য কিছুর জন্য হাতে কার্যত কোনও সময়ই নেই।

নির্ভর করে নিঃসঙ্গতাকে আপনি কী ভাবে দেখেন তার উপর।

• শুনেছি আপনার স্ত্রী-কে তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অ্যাকাডেমিতে আসতে হয়। রোববার বাদ দিয়ে ভোর থেকে রাত — সারাক্ষণ তো আপনি এখানে।

(হাসি) আমার স্ত্রী, আমার বাবা-মা, বাচ্চারা — এরা আমার মস্ত বড় সাপোর্ট সিস্টেম। ওরা চারপাশ ঘিরে না দাঁড়ালে আমি এত কিছু করতেই পারতাম না।

• শেষ কবে বাজারে গিয়েছেন?

নেভার।

• সে কী! মুদির দোকানটোকান?

বললাম তো। আমার বাবা বা স্ত্রী ওরাই সব দ্যাখে। আমি তো সারাদিন এখানে।

• বলছেন কী? হায়দরাবাদের মাছের দোকানে ঢোকেননি? আলু হাতে দোকানদারের সঙ্গে কিলো কত, সেই দর করেননি?

(হাসি) বললাম তো।

• কখনও মনে হয় না স্রেফ একটা শাটল কক নিয়ে আঠাশ-তিরিশ বছর পড়ে রয়েছি। সঙ্গী বলতে কক আর ব্যাডমিন্টন কোর্ট। তার বাইরে জীবন কী জানি না। নিজেকে গারদের ভেতর দেখতে পান না?

প্রশ্নটা খুব ভাল লাগল। এর মধ্যে একটা দর্শন আছে। কিন্তু আমি সেই দর্শনকেই তো অস্বীকার করতে চাই। প্রতিদিন আমি নিজেকে মনে করাই তুমি যেটা করছ, ক’জন মানুষ সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পারে? ক’জন স্রোতের উল্টে সাঁতার কাটার সাহস দেখাতে পারে? ক’জন একটা তফাত তৈরি করার অসম্ভব লক্ষ্যে সাগরে নিজের ডিঙি নৌকো ভাসাতে পারে?

পুনশ্চ: ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার আগেই বুঝলাম পুলেল্লা গোপীচন্দের ঘরের নাম আর যা-ই হোক ধারাবাহিকতা নয়। ঘরটার একটাই নামকরণ হতে পারে — তপস্যা!

অন্য বিষয়গুলি:

Pullela Gopichand Interview Ananda Plus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE