Advertisement
২১ মে ২০২৪

‘আপ তো একদম হামারে স্যর বন গয়ে’

আজকের বলিউডের অন্যতম সেরা চরিত্রাভিনেতা তিনি। এক সময় ট্যাক্সি চালাতেন কলকাতায়। আজকে সলমন, অক্ষয়, বিদ্যা বালনের সঙ্গে আড্ডা মারেন। রাজেশ শর্মা। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়আজকের বলিউডের অন্যতম সেরা চরিত্রাভিনেতা তিনি। এক সময় ট্যাক্সি চালাতেন কলকাতায়। আজকে সলমন, অক্ষয়, বিদ্যা বালনের সঙ্গে আড্ডা মারেন। রাজেশ শর্মা। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০২
Share: Save:

‘এম এস ধোনি...’ ছবিতে ধোনির কোচ হিসেবে তাঁর প্রশংসা সর্বত্র। এমনিতেই ডেট ডায়েরি ভর্তি। তার মধ্যেই পুজোতে কলকাতায় এসেছেন শুধু বউ আর মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে। দশমীর দুপুরে ‘এম এস ধোনি’র কোচ আড্ডা মারতে বসলেন ক্যাপুচিনো হাতে নিয়ে...

• চারিদিকে ‘এম এস ধোনি’ নিয়ে হইচই। বক্স অফিস কালেকশন একশো কোটি ছাড়িয়ে গেল। ফিল্মেও সেঞ্চুরি করল তা হলে আপনার ছাত্র?

(হাসি) ছাত্র যখন ধোনি, তখন সেঞ্চুরি করাটাই তো স্বাভাবিক। দারুণ লাগছে ‘এম এস ধোনি’র এই সাফল্য। সবাই প্রচুর খেটেছিলাম ছবিটা নিয়ে। সবচেয়ে খেটেছিল সুশান্ত সিংহ রাজপুত। কী প্রিপারেশন নিয়েছিল সেটা না দেখলে বুঝতে পারবেন না।

• ডিরেক্টর নীরজ পাণ্ডে সব জায়গায় সেটা বলেওছেন।

নীরজ শট ওকে করে দিলেও সুশান্ত বলত আর একটা শট নিতে। ও একটা জোনে ছিল।

• ছবিটা দেখে ধোনি আপনাকে কী বললেন?

ধোনির সঙ্গে আমার আগে আলাপ হয়েছিল। ও সেটে এসেছিল এক-দু’বার। আমার একটা ছবি ওর ফেভারিট।

• কোনটা? ‘খোসলা কা ঘোসলা’?

সেটা ও বলেনি। ওর খুব ভাল লাগার ছবি ‘লাভ শুভ দে চিকেন খুরানা’। ও ফ্লাইটে দেখেছিল। সেটা নিয়ে আমাকে কনগ্র্যাচুলেট করল। বলল, ‘‘আমি তোমার ফ্যান।’’

সিনেমায় আমার অভিনয় নিয়েও খুব প্রশংসা করল। ‘‘আপ তো একদম হামারে স্যর বন গয়ে,’’ এটা ধোনির কাছ থেকে শুনে ভাল লেগেছিল।

• কেশব রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাস্তবে যিনি ধোনির কোচ, তাঁর সঙ্গে আপনি শ্যুটিংয়ের আগে দেখা করেছিলেন?

না, আমি ইচ্ছে করেই শ্যুটিংয়ের আগে মিট করিনি। আমার বেশির ভাগ শ্যুটিংটাই হয়েছিল রাঁচিতে। উনি পরের দিকে একদিন এসেছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। রাঁচির প্রবাসী বাঙালি। আমার সঙ্গে বিহারি হিন্দিতে
কথা বললেন।

• শ্যুটিংয়ের আগে ওঁর সঙ্গে দেখা করেননি। তা হলে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাকে রেখেছিলেন?

রেফারেন্স ছিল আমার স্কুল ‘আদর্শ হিন্দি হাই’-এর স্পোর্টস টিচার, মিস্টার সিংহ। ওঁর অভ্যেস ছিল জোরে কথা বলার। প্র্যাকটিস করাতে করাতে এ রকম অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল। নর্মাল কথাবার্তাও উনি চেঁচিয়ে বলতেন। সেটাই ছবিতে রেখেছিলাম।

• এ বার একটু অন্য কথায় যাই। পুজোতে ঠাকুর দেখলেন ওলা-উবেরে, নাকি হলুদ ট্যাক্সিতে?

(হাসি) না, এখন আর ট্যাক্সি চড়তে হয় না। নিজের গাড়ি করেই ঠাকুর দেখলাম। আজও আমার ড্রাইভার নেই। বউ সঙ্গীতাকে বলছিলাম, আমি সেই ড্রাইভারই থেকে গেলাম।


এম এস ধোনি-দ্য আনটোল্ড স্টোরি

• আনন্দplus-এর অনেক তরুণ পাঠক-পাঠিকা আছেন, যাঁরা অনেকেই হয়তো জানেন না, এক সময় আপনি কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সি চালাতেন।

কারেক্ট, চার বছর চালিয়েছি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭।

• আপনার নিজের ট্যাক্সি ছিল?

না। বচ্চন সিংহ ধাবা যাঁদের, তাঁদের ট্যাক্সি চালাতাম। সকালবেলা বেরোতাম, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নাটকের রিহার্সালে ঢুকতাম। এটাই ছিল ডেইলি রুটিন। তখন তো এত সুযোগ ছিল না, আইটি সেক্টর ছিল না, চাকরি পাওয়া খুব ডিফিকাল্ট ছিল। তাই ট্যাক্সিটা মন দিয়ে চালাতাম।

• স্টার হয়ে যাওয়ার পরে কারও সঙ্গে দেখা হয়েছে যিনি আপনার ট্যাক্সিতে বসেছিলেন?

(হাসি) ট্যাক্সি ড্রাইভারকে কি কেউ মনে রাখে বলুন? নাহ্, ও রকম কাউকে মিট করিনি। তবে ভবানীপুর কলেজ থেকে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। স্টেটসম্যান পড়তাম গাড়ি চালানোর ফাঁকে। একদিন দু’জন মেয়ে উঠেছিল লোরেটো যাবে বলে। উঠে দেখলাম তারা ইংরেজিতে কলকাতার ট্যাক্সি ড্রাইভারদের খুব গালাগালি করছে। লোরেটোর সামনে দাঁড়িয়ে যখন টাকা দিতে গেল, আমার পাশে রাখা পেপারটা চোখে পড়ে ওদের। জিজ্ঞেস করল, এটা কার পেপার? আমি বললাম, আমার। তারপর ইংরেজিতে বলেছিলাম, ‘‘তোমরা যা বললে সেটা ঠিকই, কিন্তু সব ট্যাক্সি ড্রাইভার এক হয় না।’’ মনে আছে, ট্যাক্সি ড্রাইভার ইংরেজি বলছে — এটা দেখে দু’জনই খুব লজ্জা পেয়েছিল।


বজরঙ্গি ভাইজান

• কত টাকা কামাতেন সেই সময়?

কত হবে? কোনও দিন ৫০-৬০। একেক দিন ৮০-৯০। শুধু জানতাম এটা আমাকে করে যেতে হবে আমার বাড়ির জন্য আর নিজের জন্য। ওই টাকাতে তখন সংসার চলত। আর ট্যাক্সি চালালে আমি রিহার্সালের সময়টা বার করতে পারতাম।

• একটা গল্প শুনছিলাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। আজকে মুম্বইয়ের সবচেয়ে বড় কাস্টিং ডিরেক্টরের নাম মুকেশ ছাব়়ড়া। সৃজিত যখন ওঁর হিন্দি ছবির জন্য আপনার কথা মুকেশকে বলেন, মুকেশ নাকি বলেছিলেন, ‘‘রাজেশ শর্মা আজকের বলিউডে কোন লিগে আপনি জানেন? রাজেশ শর্মাকে অ্যাফর্ড করা চাট্টিখানি কথা নয়...’’

হ্যাঁ, আমাকে সৃজিত বলেছিল গল্পটা। তবে ওর ছবি আমি প্রায় বিনা পয়সায় করে দিয়েছি। আমি টাকাপয়সা নিয়ে কোনও দিনই ভাবি না। আমি থিয়েটার করা লোক। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের মাতামাতি আমাকে এফেক্ট করে না।

তুমি আমার অভিনয় দেখে হাততালি দাও, গালাগালি দাও — আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু গ্ল্যামার বা টাকার জন্য হাততালি চাই না।

আরে, আমার বাউল জানা আছে, শান্তিনিকেতন জানা আছে। প্রেমচন্দ পড়েছি, মান্টো পড়েছি। বঙ্কিম-শরৎ মেরে দিল মে হ্যায়। যে শরৎচন্দ্র পড়েছে, তার সামনে বলিউডি গ্ল্যামার কী?

• আপনার এই ট্যাক্সি চালানো, অমানুষিক স্ট্রাগলের দিনগুলোর কথা মুম্বইয়ের সুপারস্টাররা জানেন? সলমন খান জানেন?

সলমন জানে না। কিন্তু অক্ষয় জানে। সঞ্জয় দত্ত জানে। আর্শাদ ওয়ার্সি, নাসির, অনুপমজিও শুনেছেন।

• অনেকে আজকাল বলা শুরু করেছেন, উৎপল দত্তের পর বলিউডের টপ ব্র্যাকেটে এত সহজে যাতায়াত আর কোনও চরিত্রাভিনেতার হয়নি আপনি ছাড়া। আপনি মানেন?

উৎপল দত্তের সঙ্গে আমাকে প্লিজ তুলনা করবেন না।

• তুলনা করছি না তো।

বুঝেছি কী বলতে চাইছেন। বাট এ সব আমাকে অ্যাফেক্ট করে না।

• কিন্তু একটা হিন্দি ছবিতে আজকে আপনি যে টাকা পান তাতে তিনটে বাংলা ছবি হয়ে যায়।

টাকাটা পাই কারণ ইন্ডাস্ট্রিটা বড়।

• বিনয় করবেন না। টাকা পাচ্ছেন, কারণ অভিনয়টা ভাল করেন...

সেটা ঠিক। মুম্বইতে আমাকে অসম্ভব সম্মান দেওয়া হয়। আমার জন্য ওখানে তত বড় ভ্যানিটি ভ্যান থাকে, যত বড় সলমন খানের জন্য। দেখে ভাল লাগে, এই পর্যন্তই।

• এখন তো সেক্রেটারিও রেখেছেন শুনলাম। পার্সোনাল মেক আপ ম্যানও রয়েছে?

হ্যাঁ, সেক্রেটারি রাখতে বাধ্য হয়েছি এত দিন পর। ডেটস-টেটস সব গুলিয়ে যাচ্ছিল। তবে আমার সেক্রেটারি, আমার পার্সোনাল বয়, আমার মেক আপ ম্যান — সবাই বাঙালি। কলকাতার পঞ্জাবি হতে পারি। তবে বাঙালি ছাড়া আমার চলবে না (হাসি)।


দ্য ডার্টি পিকচার

• বলিউডের মেহবুব স্টুডিয়ো আর টলিউডের ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর মধ্যে তফাতটা কোথায় একটু বলবেন?

তিনটে তফাত। প্রথমেই বলি, কাজের পরিবেশ। মেহবুব স্টুডিয়োতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আপনি বুঝতে পারবেন এখানে কাজের প্রতি সবাই কী রকম সিরিয়াস। কেউ ইয়ার্কি, ফাজলামি মারছে না। কলকাতায় এই সিরিয়াসনেসটা দেখি না। সেকেন্ড, মুম্বইতে ইউনিয়নের ঝামেলা নেই। কলকাতায় সিপিএম আমলের ইউনিয়নের প্রবলেম আজও চলছে। সেটে যারা কাজ জানে না, তারাও কলকাতায় কাজ পায়। মুম্বইতে কাজ না জানলে আপনাকে সেটে কেউ এক মুহূর্তও দাঁড়াতে দেবে না।

• আর?

মুম্বই অ্যাক্টরদের সম্মান দেয়। ওদের ওখানে অ্যাক্টর ভগবান। আপনি ওয়ান সিন অ্যাক্টর হতে পারেন, কিন্তু তবুও সেটে গেলে মুম্বই আপনাকে সেটা বুঝতে দেবে না। ওখানে অ্যাক্টর ঠান্ডা জল চাইলে, ঠান্ডা জল দেওয়া হবে। গ্রিন টি চাইলে গ্রিন টি। এখানে একবার গ্রিন টি চেয়ে দেখুন না? হয় গালগালি শুনবেন, না হলে ‘না’ ।

• এই যে আজকে মুম্বই গিয়ে সেক্রেটারি রাখছেন, বয় রেখেছেন, পিআর হিসেবে কি কাউকে রেখেছেন? ওখানে তো আপনি কী খাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন, পিআর সব খবর মিডিয়াকে পাঠিয়ে দেয়?

না। পিআর এখনও রাখিনি। ধুর, পারি না ও সব। পিআর-এর সঙ্গে আধ ঘণ্টা বসার থেকে একটা গল্পের বই পড়লে অনেক বেশি কাজে দেবে। কোথায় কী বেরোল, কোন পার্টিতে যাব, কোথায় যাব না — এ সব না ভেবে যদি আমার অ্যাক্টিংটায় ধার দেওয়ার চেষ্টা করি আমার মনে হয় সেটা অনেক উপকারী হবে। আর কাগজে ছবি বেরোনো নিশ্চয় ভাল, কিন্তু শুধু পার্টিতে মুখ দেখালে অভিনয়টা করব কখন। একজন অ্যাক্টরের তো নিজের জন্যও সময় দরকার।

• বলিউডে আপনি ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ করলেন, ‘স্পেশাল ২৬’ করলেন, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ করলেন, ‘এম এস ধোনি’ করলেন, কিন্তু টলিউড আপনাকে সে রকম ভাবে ব্যবহারই করল না। খারাপ লাগে না?

টলিউড আমাকে ব্যবহার করেছে। আমার কোনও কমপ্লেন নেই।

• কেন মিথ্যে বলছেন? কোথায় ব্যবহার করল আপনাকে?

আমি আশাবাদী। না করলে ভবিষ্যতে করবে। তবে আমি কিন্তু এখানে সবার সঙ্গে কাজ করেছি। হরনাথ চক্রবর্তী, স্বপন সাহার সঙ্গে ছবি করেছি। পাশাপাশি অপর্ণা সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, ঋতুপর্ণ ঘোষ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত — সবাই আমার ডিরেক্টর। তবে টালিগঞ্জের কিছু ব্যাপার দেখে খারাপ লাগে...

• কী রকম?

আজকাল টালিগঞ্জে সবাই কী রকম বক্স অফিসে সাফল্যের দিকে ছুটছে। বক্স অফিসে ভাল করলে সেটাই ভাল ছবি — এই ধারণাটাই আমি মানি না।

• আপনি মানেন না, কিন্তু বক্স অফিসে ছবি টাকা না তুললে তো ইন্ডাস্ট্রি ডুববে, প্রোডিউসর টাকা ফেরত পাবেন না।

সে তো প্রোডিউসর সত্যজিৎ রায় কী মৃণাল সেনের সময়েও টাকা ফেরত পেত না। যে সব ছবি তখন চলেনি, যে সব ছবিকে ফ্লপ বলা হত, আজও তো সেই ছবি নিয়েই আমরা ড্রয়িং রুমে বসে আলোচনা করি। বক্স অফিসে কোন ছবি কত টাকা কামালো, সেটা কেউ মনে রাখে না। বক্স অফিস ইজ রাবিশ। কিন্তু টালিগঞ্জ শুধু বক্স অফিসের পিছনেই ছুটছে। ভাল ছবির দিকে নয়।

• বলছেন বক্স অফিসে কিছু এসে যায় না। কিন্তু আপনার অভিনয় করা ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ যখন ২০০ কোটির ব্যবসা করে, কী ‘এমএস ধোনি’ ১০০ কোটি কামায়, খুশি তো হন?

ওটা একটা অন্য স্যাটিসফ্যাকশন। মনে হয় বেশি লোক আমার কাজটা দেখল। টাকা কত কামালো তা নিয়ে ভাবি না।

• শুনেছিলাম ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর শ্যুটিংয়ের সময় সলমনের সঙ্গে আপনার দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছিল।

হ্যাঁ, সলমন ভীষণ ডাউন টু আর্থ। মনে আছে যে দিন ছবির শ্যুটিং শেষ, সে দিন লাস্ট শটটা ওর আর আমার ছিল। শটের পর কাছে এসে বলল, ‘রাজেশ আজ পার্টি হ্যায়, প্লিজ আনা।’ পার্টি ছিল সলমনের পানভেল-এর ফার্ম হাউজে। পরের দিন সকালে ফ্লাইট ছিল। পার্টিতে গিয়ে কী করব এটাই ভাবছিলাম। কিন্তু না গেলে অপমান করা হবে ভাইকে। ফ্রেশ হয়ে যখন সলমন বেরোচ্ছে, আমি ওকে বললাম আমি গিয়ে কী করব? আমি এমনিই শুধু বিয়ার খাই। শুনে বলল, ‘গা়ড়ি মে বৈঠ, ম্যায় বিয়ার কা ইনতাজাম করতা হু।’ ওর দুর্দান্ত ফার্ম হাউজে গিয়ে দেখি, একটা বিরাট নীল রঙের টাব। তাতে কম করে দেড়শো বোতল বিয়ার। পরে শুনেছিলাম ফোনে ও ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছিল বিয়ার-এর ব্যবস্থা করার। আমি বিয়ার নিচ্ছি, এমন সময় দেখি সলমন পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি বললাম, এত বিয়ার কী হবে, আমি তো একটা দু’টো খাব। আমাকে বলল, ‘বিয়ার পিকে আউট হোনে কে বাদ তেরা অ্যাক্টিং দেখনা চাতা হু।’ এই হল সলমন।

• আর অক্ষয়? অক্ষয় তো নিশ্চয়ই আপনাকে বিয়ার খেতে বলবেন না?

না, অক্ষয় আড্ডা মারবে। অক্ষয়কে দেখে আমি ডিসিপ্লিন কাকে বলে সেটা বুঝেছি।


স্পেশাল ২৬

• কী রকম ডিসিপ্লিন?

ওটা আমি-আপনি পারব না। ওটা সম্ভব নয়। একটা মানুষ লাস্ট দশ বছর কোনও খাবারে নুন খায়নি। নো সল্ট মানে নো সল্ট।

• কী বলছেন!

ইয়েস। না ডাল, না সব্জি — কোনও কিছুতে নুন নেই। এ রকম ডিসিপ্লিন আছে বলেই অত ফিট রাখতে পেরেছে নিজেকে। এবং ও কিন্তু বাইসেপ, ট্রাইসেপ নিয়ে ভাবে না। ওর ফিটনেসটা অন্য রকম।

• একসময় ট্যাক্সি চালাতেন কলকাতার রাস্তায়। আজকে ধোনি, সলমন, অক্ষয়-এর সঙ্গে ওঠাবসা। বড় ভ্যানিটি ভ্যান, মোটা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স — একা থাকলে কী মনে হয় রাজেশ শর্মার?

মনে হয় কোনও কিছুই পার্মানেন্ট নয়। জীবনে ট্যাক্সি চালানোটাও ওপরওয়ালার ইচ্ছেতে হয়েছিল। আজকে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে ঘোরাঘুরিটাও ওঁর ইচ্ছেতেই। আমার বাবা মোটর পার্টসের ব্যবসা করতেন। আমার আর বোনের জন্য সিঁড়ির নীচে মা স্টোভে রুটি বানাতেন। ওই জীবনটা আমি ভুলি না। আর একটা কথা। নিজেকে বার বার বলি, ‘‘রাজেশ, মাটিতে পা-টা যেন সব সময় থাকে। যাদের ছিল না তাদের জীবনে পরিণতি বড় করুণ হয়েছে।’’

• আচ্ছা ইন্টারভিউ-এর পরে ক্রিকেটার এম এস ধোনির সঙ্গে আপনার একটা ছবি আমাকে মেল করবেন। ওটা পাতায় থাকলে ভাল লাগবে।

কিন্তু আমি তো ছবি তুলিনি। আমি সলমন, অক্ষয়, ধোনি কারও সঙ্গে ও রকম ছবি কী সেলফি তুলতে পারি না। আমার কী রকম অদ্ভুত লাগে।

• এটা কোনও কথা হল?

সত্যি পারি না। ও সব ছবি তুললে কী বেটার অভিনেতা হওয়া যায়? যায় না তো (হাসি)...যে দিন সেলফি তুলে বেটার অভিনেতা হওয়া যাবে সে দিন নিশ্চয়ই তুলব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajesh Sharma Interview MS Dhoni Biopic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE