Advertisement
০২ মে ২০২৪

সন্ধ্যা-সুরের রেশেই শেষ সঙ্গীত মেলার সূচনা-সন্ধ্যা

উদ্বোধনী সঙ্গীতের পর তাঁর গলায় সেই বিখ্যাত গানটি। তাও আবার পুরোটা নয়। তাতেই উপস্থিত নবীন-প্রবীণ শিল্পী থেকে শ্রোতা, সবাই মিলে রায় দিলেন— আর গান নয়! কেউই গাইবেন না! বরং তাঁর সম্মানেই সঙ্গীত মেলার প্রথম দিনটা উৎসর্গ করা হোক।

পরশ: বাংলা সঙ্গীত মেলা ও বিশ্ব বাংলা লোকসংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শনিবার উত্তীর্ণ মুক্তমঞ্চে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

পরশ: বাংলা সঙ্গীত মেলা ও বিশ্ব বাংলা লোকসংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শনিবার উত্তীর্ণ মুক্তমঞ্চে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

সন্ধ্যাতেই ভেসে গেল বাংলা সঙ্গীত মেলার প্রথম সন্ধ্যা।

উদ্বোধনী সঙ্গীতের পর তাঁর গলায় সেই বিখ্যাত গানটি। তাও আবার পুরোটা নয়। তাতেই উপস্থিত নবীন-প্রবীণ শিল্পী থেকে শ্রোতা, সবাই মিলে রায় দিলেন— আর গান নয়! কেউই গাইবেন না! বরং তাঁর সম্মানেই সঙ্গীত মেলার প্রথম দিনটা উৎসর্গ করা হোক।

শেষে তা-ই হল। মঞ্চে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী থেকে সমস্ত শিল্পী, শ্রোতা সবাই মিলে তাঁর জন্য গাইলেন, ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে...।’ অনেকের চোখের কোণে তখন জল চিকচিক করছে। মধ্যমণি হয়ে তিনি তখন মঞ্চে সবার মাঝে।

তিনি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ৮৬ বছরে পা দিয়েছেন। অশক্ত শরীর।

নিজেই বললেন কিছু দিন আগেই সর্দি-কাশি-জ্বর থেকে উঠেছেন। কিন্তু তাতে কী! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়েই ধরলেন, ‘ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা...।’ ‘উত্তীর্ণ’ মুক্তমঞ্চে তখন সবাই মন্ত্রমুগ্ধ। সবাই যেন ফিরে গিয়েছেন সেই স্বর্ণালী যুগে। নিজেও আর পারলেন না। শরীর বা গলার জন্য নয়! আবেগ তাঁর গলাকেও চেপে ধরল। হয়তো তিনিও কেঁদে ফেলেছিলেন। গান থামিয়ে দিলেন সন্ধ্যা। মুক্তমঞ্চে তখন হাততালির ঝড়। আর তিনি চেয়ারে বসেই মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে তাঁর কোমরে মুখ গুঁজে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তত ক্ষণে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছেন শ্রোতা-শিল্পীদের দিকে— ‘‘সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের এই গানের পর আর কি গান হবে?’’

শ্রোতারা একবাক্যে জানিয়ে দিলেন— না।

সঙ্গীত শিল্পী অজয় চক্রবর্তী বললেন, ‘‘আজ এটুকুই থাক। কোনও ক্ষতি হবে না।’’ সরোদ শিল্পী তেজেন্দ্রনারায়ণ বললেন, ‘‘বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি আমরা সবাই। তাঁর গানের রেশটুকু নিয়েই আমরা ফিরতে চাই।’’ সব শেষে প্রবীণ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ‘‘যে সুর তিনি আজ শোনালেন, তার পর আর গাইতে ইচ্ছে করে না। আজ তাঁর গানই শেষ কথা।’’

শনিবার বাংলা সঙ্গীত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তার পরে শেষই হয়ে যায়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছিলেন— সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা ছাড়া এ বাংলার কোনও সঙ্গীতানুষ্ঠানের সূচনা সম্পূর্ণ হয় না। যে সমস্ত শিল্পীরা নিজের সঙ্গীত প্রতিভা ও কৃতিত্বের জন্য রাজ্যের ‘সঙ্গীত সম্মান’ পেলেন তাঁরাও বলে গেলেন, অনেক বড় পুরস্কার পাওয়া গেল আজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE