‘সংঘর্ষ’ ছবির একটি দৃশ্য
মাস তিনেক আগে এক বিয়েবাড়িতে তাপস পালের সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল পরিচালক অনুপ সেনগুপ্তের। ‘‘হাত ধরে আক্ষেপ করে বলল, ‘আমি কাজ চাই।’ সেই খিদে নিয়ে চলে গেল তাপস,’’ ভারাক্রান্ত শোনাচ্ছিল পরিচালকের কণ্ঠ। তাপসের সঙ্গে অনুপের প্রথম পরিচয় ‘পারাবত প্রিয়া’ ছবিতে, যেখানে তিনি সহ-পরিচালক ছিলেন। ন’টি ছবিতে পরিচালনা করেছেন অভিনেতাকে। অনুপ বললেন, ‘‘সাধারণ পরিবারের ছেলে ও। চন্দননগরের বাড়িতে যাওয়ার জন্য দিনের পর দিন মুখে রুমাল বেঁধে লোকাল ট্রেনের ভেন্ডারে উঠত। দিনগুলো মনে ছিল ওর। আমরা একে অন্যের বাড়িতে নিয়মিত যেতাম। আমার স্ত্রীর বৌভাতের বেনারসিটাও তাপসেরই দেওয়া।’’ অনুপ আর তাপস একটা সময়ে মুম্বইয়ে ছিলেন একসঙ্গে। ‘ঘায়েল’-এর অডিশনের গল্প বলছিলেন অনুপ, ‘‘তাপস ‘ঘায়েল’-এর অডিশনে গিয়েছিল। ওকে দেখেই পরিচালক বলে উঠল, ‘আপনাকে তো ডাকাই হয়নি।’ অপমানিত বোধ করেছিল তখন। তার পরেই আসে ‘অবোধ’-এর অফার।’’ দুঃখের দিনেও অনুপের স্মৃতিতে মজার ঘটনা ভিড় করছে... ‘‘মুম্বইয়ে থাকার সময়ে একবার রাত দুটোয় রেখার বাড়ির কাছে গিয়ে তিনবার ‘রেখা রেখা রেখা...’ বলে চিৎকার করল তাপস। তার পরে ঘরের আলোগুলো জ্বলে উঠতেই আমরা দুদ্দাড় পালিয়ে আসি। এতটাই দিলখোলা ছিল তাপস।’’
অনুপের মতোই হরনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেতা। এ দিন তাঁর স্মৃতিতে উঠে এল গোড়ার কথা, ‘‘কেরিয়ারের শুরুতেই সেরা জায়গায় গিয়ে পড়েছিল তাপস, তনুবাবু (তরুণ মজুমদার) ও সন্ধ্যাদির (রায়) স্কুলিংয়ে। ‘দাদার কীর্তি’তে ওর লুক সেট করে দিয়েছিলেন সন্ধ্যাদি। তাপস এসে প্রথম থেকেই বক্স অফিস ধরে নিয়েছিল। তার পরে ওর সমসাময়িক হিসেবে উঠে এল প্রসেনজিৎ। ‘সংঘর্ষ’য় ওদের দু’জনকেই কাস্ট করেছিলাম।’’ তাপসের কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে হরনাথ বলছিলেন, ‘‘তাপস দুম করে রাজনীতিতে না ঢুকলে আজ ওর স্থান আরও উঁচুতে হত। গায়ে যে কালো দাগটা পড়েছিল, ইন্ডাস্ট্রিতে থাকলে সেটা হত না।’’
মৃত্যুর খবর পেয়ে পুরনো বন্ধুকেই বেশি করে মনে পড়ছে হরনাথের, ‘‘প্রত্যেক বছর ৩১ ডিসেম্বর তাপসের বাড়িতে বিশাল আড্ডা বসত। আমি, অনুপ সেনগুপ্ত এবং আরও অনেকেই যেতাম। খেতে খুব ভালবাসত তাপস। হয়তো আমি কোনও দিন বাড়ি থেকে অফিসে নিয়ে গিয়েছি কলাইয়ের ডাল, আলু পোস্ত। ও সেটা দেখেই খেতে শুরু করে দিত। খুব প্রাণবন্ত ছিল ছেলেটা। খারাপ সময়ে অবশ্য বন্ধুদের বেশির ভাগই সরে গিয়েছিল ওর পাশ থেকে। কিন্তু ওর ওই একগাল হাসিটা কোনও দিন ভোলার নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy