Advertisement
১৮ মে ২০২৪

লোকে তবে মাদকের জন্যই চেনে? ‘উড়তা পঞ্জাব’ নিয়ে প্রশ্ন হাইকোর্টের

কোনও রাজ্যের মাদক চক্রের রমরমা নিয়ে গল্প বললেই বুঝি তার ভাবমূর্তি চুরমার হয়ে যায়! সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) তথা সেন্সর বোর্ড ‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবির নাম থেকে যে যুক্তি দেখিয়ে ‘পঞ্জাব’ বাদ দেওয়ার কথা বলেছে, তাতে স্তম্ভিত বম্বে হাইকোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

কোনও রাজ্যের মাদক চক্রের রমরমা নিয়ে গল্প বললেই বুঝি তার ভাবমূর্তি চুরমার হয়ে যায়! সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) তথা সেন্সর বোর্ড ‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবির নাম থেকে যে যুক্তি দেখিয়ে ‘পঞ্জাব’ বাদ দেওয়ার কথা বলেছে, তাতে স্তম্ভিত বম্বে হাইকোর্ট। ‘‘তা হলে আপনারা কি বলছেন পঞ্জাবকে লোকে মাদকের জন্যই চেনে?— প্রশ্ন আদালতের।

শুধু নাম বাদ দেওয়া নয়, সেন্সর বোর্ডের প্রধান পহলাজ নিহালনি ছবিতে ৮৯টি ‘কাট’ও সুপারিশ করেছেন। সব মিলিয়ে বোর্ডের এই হইচইয়ে বিস্মিত বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি এস সি ধর্মাধিকারী বৃহস্পতিবার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মাদকাসক্তির বিপদ নিয়ে কি আগে চর্চা হয়নি সেলুলয়েডে? তার কোনওটা হয়তো কখনও শৈল্পিক, কোনওটা বা মোটা দাগের! এই (উড়তা পঞ্জাব) ‘সাইনবোর্ড’ তবে কী ভাবে কারও অবমাননা করল? এই প্রজন্ম পরিণত কিছু চায়। এটা নিয়ে এত হইচইয়ের দরকার ছিল না।’’

গত কয়েক দিন ধরেই সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে ‘উড়তা পঞ্জাব’ নিয়ে তরজা চলছে। বুধবার ছবির প্রযোজক অনুরাগ কাশ্যপ সরাসরি আদালতের শরণাপন্ন হন। বৃহস্পতিবার তারই শুনানিতে বিচারপতি ধর্মাধিকারী ছবিটির সৃষ্টিশীলতা অটুট রাখার পক্ষে সওয়াল করলেন। এই সূত্রে ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর সঙ্গে তিনি তুলনা টানেন ‘গো গোয়া গন’ ছবিটির। বিচারপতি ধর্মাধিকারী বলেন, ওই ছবিটিতে গোয়াকে এমন ভাবে দেখানো হয়েছিল যেন সে রাজ্যে গিয়ে লোকে খালি পার্টি করে আর নিষিদ্ধ মাদক নেয়। তাঁর কথায়, ‘‘যদি সেই ছবিতে গোয়াকে ওই ভাবে দেখানো যায়, তা হলে ‘উড়তা পঞ্জাব’-এ পঞ্জাবকে দেখানো হলে অসুবিধের কী আছে?’’

সেন্সর বোর্ডের আইনজীবী যুক্তি দেন, পঞ্জাবের মানুষের কথা ভেবে এবং যে ভাষা ছবিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে মূলত আপত্তি উঠছে। কিন্তু বোর্ডের এই যুক্তি ধোপে টেকেনি। উল্টে বম্বে হাইকোর্ট ছবিতে ৮৯টি ‘কাট’-এর যথাযথ কারণ দর্শাতে বলেছে।

আজ হাইকোর্টের এই অবস্থানের জেরে মুক্তির প্রাক্‌-মুহূর্তে সেন্সর-জটিলতায় কাবু ‘উড়তা পঞ্জাব’-নির্মাতারা খানিকটা অক্সিজেন পেলেন, সন্দেহ নেই।

শুধু শিরোনামে কাঁচির কোপেই শেষ নয়। গোটা ছবির অঙ্গে-অঙ্গে অজস্র অংশেই অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছে সেন্সর বোর্ড। গোটা ছবি জুড়ে পঞ্জাব, জালন্ধর, চণ্ডীগড়, অমৃতসর, তারান্তারন, জশনপুরা, আম্বেসর, লুধিয়ানা বা মোগার মতো যে কোনও জায়গার নামই ছেঁটে ফেলার নিদান মিলেছে। এ প্রসঙ্গে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি ধর্মাধিকারীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘পঞ্জাবের মোগা জেলাকে একটি ছবিতে ‘ক্যানসার-নগরী’ বলা হয়েছিল। সেটা জেলাটিকে খাটো করার জন্য নয়, সমস্যার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্যই।’’

গত কাল ছবিটি দেখানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সেন্সর বোর্ড সংস্কার-সংক্রান্ত কমিটির কর্তা তথা বর্ষীয়ান চিত্রপরিচালক শ্যাম বেনেগালকে। সেন্সর-জটিলতা নিয়ে বিরক্তি কার্যত গোপন করেননি তিনিও। ‘উড়তা পঞ্জাব’কে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছবি আখ্যা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, গোটা বিতর্কটা ছড়িয়েছে কারণ অনেকে মনে করছেন এটা পঞ্জাবের বিরুদ্ধে। সেটা ভুল। বেনেগালের কথায়, ‘‘ছবিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তুলে ধরেছে। রাজ্যের সঙ্গে তার কোনও সংঘাত নেই। আমার মতে, তা হলে ছবিটাকে একেবারেই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হবে।’’

সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে এই লড়াইয়ে নেমে মনে হচ্ছে তাঁকে যেন ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে— নিজের ফেসবুক পোস্টে আজ এ ভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনুরাগ কাশ্যপ। তাঁর বক্তব্য, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সরকার বা সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে নানা রকম টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাঁর কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, এমনটা মনে হয়নি। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা। ‘‘এটা একেবারেই ব্ল্যাকমেল। পাহাড়প্রমাণ মিথ্যে ছড়ানো হচ্ছে।’’

ছবির কোন কোন প্রসঙ্গে ৮৯টি কাট-এর সুপারিশ করা হয়েছে, তার কিছু কিছু আজ সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে। ছবির নায়ক শাহিদ কপূর কেন কথায়-কথায় গালাগালি দিচ্ছেন, তা নিয়ে সরব নিহালনি। সংবাদমাধ্যমের কাছে নিহালনির মন্তব্য, ‘‘মাদকাসক্তির ঘোরে গালাগালি দিলে না-হয় বোঝা যায়। সুস্থ অবস্থায় কেন চরিত্রটি এত গালাগাল দেবে!’’ ছবিতে একটি কুকুরের নাম ‘জ্যাকি চ্যান’। হলিউডি অ্যাকশন-হিরোর অমর্যাদা হয়েছে বলে সে-নামটিও বদলাতে বলা হয়েছে! ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর ক্ষেত্রে সমকালীন রাজনীতির সামান্যতম আভাস মেলে এমন শব্দও নিহালনি সহ্য করতে পারছেন না। অতএব ‘ইলেকশন’, ‘এমপি’, ‘এমএলএ’, ‘পার্লামেন্ট’, ‘পার্টি’র মতো আপাত নিরামিষ শব্দও সেন্সর বোর্ডের কানে বেজেছে। তাই ওই সব শব্দ ছেঁটে ফেলার নির্দেশ এসেছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ ও রাজ্য সরকার লড়াই করছে— এমন কথাও ছবির শুরুতে স্বীকার করতে হবে বলেও সেন্সর বোর্ড কর্তা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।

বিজেপি ও পঞ্জাবের শাসক শিরোমনি অকালি দলের কথাতেই যে নিহালনি এতশত কাটছাঁটের কথা বলেছেন, তা নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল আপ এবং কংগ্রেস। এ বার সেন্সর বোর্ডের আর এক সদস্য চন্দ্রমুখ শর্মার মন্তব্য, ‘‘বোর্ড প্রধান তাঁর ক্ষমতার বাইরে গিয়ে এ ধরনের কাটছাঁটের কথা বলছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

udta punjab
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE