Advertisement
১৮ জুন ২০২৪
Kaushik Ganguly

বায়নার জন্য আর ঘুরতে ভাল লাগে না: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়

উইনডোজের ব্যানারে ‘লক্ষ্মীছেলে’র পরে নতুন ছবির প্রস্তাবনা থেকে আজকের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অকপট কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

‘কেদারা’ ছবির একটি দৃশ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

‘কেদারা’ ছবির একটি দৃশ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৪১
Share: Save:

আনন্দবাজার ডিজিটালকে তাঁর আগামী ছবি ‘কেদারা’ নিয়ে বলতে গিয়ে বললেন অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। উইনডোজের ব্যানারে ‘লক্ষ্মীছেলে’র পরে নতুন ছবির প্রস্তাবনা থেকে আজকের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অকপট তিনি।

ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের প্রথম ছবি। শুধু চিত্রনাট্যের জন্যই কি এই ছবিতে অভিনয় করা?

না। ওর সঙ্গে অনেক দিনের সঙ্গ। ওর হাতেই ‘অপুর পায়ের ছাপ’, ‘অসতো মা সতগময়’, ‘আমার তো গল্প বলা কাজ’। এ রকম আমার ছবির কত গান ওর হাতে তৈরি। আমার ছবির সঙ্গেই থেকেছে ও বহু দিন। শুধু আমি নই। সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী— সকলের সঙ্গে ও কাজ করেছে। কিন্তু ও যখন ছবি বানাতে গেল তখন এমন একটা রাস্তা বেছে নিল যা আমাকে আনন্দ দিয়েছে। এটা আমার চেনা ছবির রাস্তা। জনপ্রিয় ছবির পথ বাছলো না ও। এটা আমায় মুগ্ধ করেছে। আমি বহু দিন ধরে যে ধরনের ছবির গল্প বলার জন্য কষ্ট করেছি সেটা যে আর কাউকে প্রভাবিত করল এটাই আমার পাওয়া। এটা আমি নিজেই নিজেই ভেবেছি। মনে মনে নিজেকে গর্বিত করেছি এই ভেবে। হয়তো আমি ওকে প্রভাবিতই করিনি। আমার ভ্রান্ত ধারণা এটা! কিন্তু ও আমার ছবির সঙ্গে তো থেকেছে! তাই এই ভাবনা এসেছে আমার। আর ‘কেদারা’ চরিত্র যখন এল আমার কাছে, সেটা এক জন অভিনেতা করবে না ভাবাই যায় না!

আপনি কি অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন?

আমি মেধাবী ছাত্র হিসেবে নয়, অভিনেতা হিসেবে নরেন্দপুরে ক্লাস ফাইভ থেকে স্কলারশিপ পেতাম। সেই সময় প্রত্যেক মাসে পঁচিশ টাকা পেতাম অভিনয়ের জন্য। সেটা যে কী পাওয়া! এখন পঁচিশ লক্ষ টাকা পেলেও সেই আনন্দ হবে না। অভিনয় করব বলে স্টুডিয়ো পাড়ায় নানা মুখের ছবি তুলে ঘুরতাম। কেউ চরিত্র দেয়নি। তখন যে হিরোদের দেখেছি তারা সবাই সুদর্শন। হিরোরাও হিরোইনের মতো সুন্দর। তারা রুজ ব্যবহার করছে। তখন নিজেকে আয়নায় দেখে কিশোরবেলার অভিনয় করতে চাওয়া ছেলেটার মনে হত, আমি কী চরিত্র পাবো? হিরোর বন্ধুর বন্ধু? ভিলেন? সময় বদলেছে। চরিত্রাভিনেতাদের মাঠে নেমে রান তোলার সময় এখন। তাই ‘কেদারা’ আমার জুটে গেল।

‘কেদারা’-র শুটিংয়ে পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সঙ্গে কৌশিক।

আরও পড়ুন:জুতো পালিশ করা থেকে ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চ, সানির জার্নি যেন এক হার না মানা রূপকথা

ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত প্রথম ছবিতেই আপনার কথা ভাবলেন...

খুব গর্ব হয় আমার এটা ভেবে।

আপনি বলছিলেন এই চেহারা নিয়ে আপনার হিরো না হওয়ার ভাবনা। কিন্তু ‘কেদারা’ দেখে বুঝেছি আপনার শরীরটা এই গণেশ চরিত্রকে অন্য মাত্রা দিয়েছে!

এই ছবিটা অভিনেতার জন্য খুব চাপের কিন্তু। একটা মনোনিবেশের ব্যাপার আছে। ধ্রুপদী সঙ্গীতে যেমন আলাপ না জমলে খেয়াল ঠিক করে হয় না। এর ধরতাইটাও সে রকম। খুব সুরে বলতে হয়েছে। এত ভাল ভাবনা! চেষ্টা করেছি প্রাণ দিয়ে।

আপনি হরবোলার শব্দ তো নিজেই করেছেন এ ছবিতে...

হ্যাঁ। শুধু হরবোলার শব্দ নয়। বাচ্চাদের গলা, মহিলার গলা, সব নিজে করেছি। আইডি-কে (ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত) বলেছিলাম এগুলো আমায় করতে দিতে। আমি শব্দ নিয়ে খুব পজেসিভ!

একাকিত্বের উদযাপনের এমন ভিন্ন ছবি জাতীয় পুরস্কার না পেলে বেশ ঝুঁকির বিষয় হয়ে যেত না?

আমি এতগুলো জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু আমার পরের ছবি তৈরিতে রিস্ক তো আজও আছে। সিনেমা একেবারেই আনপ্রেডিক্টেবল সঙ্গী। কখন সে ভালবাসবে? বিগড়ে যাবে? কখন অভিমান করবে বলা যায় না। তবে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত কেদারার জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়াতে নতুন পরিচালক হিসেবে ওকে মুখ ফুটে বলতে হচ্ছে না, আসুন আমার ছবি দেখুন। পুরস্কার বলে দিচ্ছে ওর কথা।

এটা কি সাধারণ মানুষের দেখার ছবি?

হ্যাঁ। সব সাধারণ মানুষই তো আছে এখানে। আমরা তো দেখেছি পরিবারে, ঘরে ঘরে কোনও এক ছোটকাকা, মামা থেকে গেল ঘরের এক কোণে। বিয়েই করল না! বাড়ির সব ফরমাশ খাটল। কিন্ত সর্বোপরি সে একা। সাধারণ মফসসলে ছোট্ট বাড়ির গল্প ‘কেদারা’। একা থাকার মানুষের গল্প ‘কেদারা’। একাকিত্ব না থাকলে এই ব্যস্ত সমাজে মানুষের থাকাই হবে না। একা থাকার মাধুর্য মানুষকে অনুভব করতে হবে। সেটা না থাকলে আর কী থাকল? ‘মি টাইম’টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ছবি লোকে দেখবে। যেমন ‘নগরকীর্তন’ দেখছে। ‘ছোটদের ছবি’ দেখছে।

‘কেদারা’ ছবিতে এক ভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করছেন কৌশিক।

এখন গল্প বড়। অভিনেতা নয়। মানেন?

পেশিওয়ালা অভিনেতা বাঁচতে পারবে না বেশি দিন। যারা চরিত্রাভিনেতা তারাই এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকবে।

যেমন?

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। টাক মাথা বা বয়স্ক চরিত্র করতে যিনি ভয় পান না। তিনি আর স্টারডম নিয়ে ভাবিত নন। সেই সমস্ত স্টার টিকে থাকবেন যাঁরা চরিত্রাভিনেতা হয়ে উঠছেন।

‘লক্ষ্মীছেলে’ কবে দেখা যাবে?

খুব ভাল ছবি তৈরি হচ্ছে। পরের বছর দেখা যাবে।

আরও পড়ুন: শাহরুখ কী এমন করলেন যে বাবার উপর রেগে গেলেন আব্রাম?

আচ্ছা, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় উইনডোজ-এ গেলেন কেন?

আপনি বলুন তো যাবেন না কেন? আলো তো জানলা দিয়েই ঢোকে। বাতাস জানলা দিয়েই ঢোকে। আমার দিকে সেই আলো এসে পড়লে আমি সাড়া দেব না কেন? খুব ভাল যে উইনডোজ অন্যদের ছবি করানোর কথা ভাবছে। শুধু নিজেরা ছবি করছে না। মানে উইনডোজ হাউজ হিসেবে বড় হয়ে উঠছে। বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছে। আমি নন্দিতাদি ও শিবুর কাছে কৃতজ্ঞ। কোনও দিন শুটিং দেখতে আসেনি ওরা। স্বাধীন ভাবে কাজ করা যাচ্ছে। মন দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে। এক দিন স্ক্রিপ্ট শুনেছিল মাত্র। ওই টেবিলেই যা রিঅ্যাকশন দিয়েছিল ওরা তাতেই আমার ছবি হিট হয়ে গিয়েছে! শুধু তাই নয়, ওরা বলছে এর পরের ছবিটা কবে হবে? আর আমারও সময় পেরিয়েছে অনেক! এখন ওই দুয়ারে দুয়ারে ফিরিল শ্রীমতি লয়ে অর্ঘ্যের থালি... আমারও ভাল লাগে না। বায়নার জন্য আর ঘুরতে ভাল লাগে না আমার। বাড়ি এসে বায়না করে গেলে যাবো গাইতে, বাজাতে। আর সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে সম্মান পাব সেখানেই আমি ছবি করব। এই বেশ আছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE