ইন্দ্রাণী হালদারের ঋতু-স্মরণ।
তোমাকে নিয়ে আমার অনেক আফসোস, ঋতুদা। তোমার মাত্র দু’টি কাজের সাক্ষী আমি। ‘দহন’ আর ‘বাহান্ন এপিসোড’। ১৯৯৭ সালের ছবি ‘দহন’। পটভূমিকায় সুচিত্রা ভট্টাচার্যের গল্প। এই ছবির দৌলতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে যৌথ ভাবে আমিও সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলাম। ঋতুদা, তুমি না থাকলে তো আমার এই সম্মান পাওয়াই হত না! এখনও মনে পড়ে, আমি আর ঋতুদা এক সঙ্গে পুরস্কার আনতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগে আমি ওঁর পোশাকে সেফটিপিন আটকাচ্ছি। ঋতুদা আমার পোশাকে! পরে ঋতুপর্ণা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। ঋতুদার ছোট পর্দার ধারাবাহিক ‘বাহান্ন এপিসোড’-এ কাজের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। গুনে গুনে ৫২ পর্বেই শেষ হয়েছিল ধারাবাহিকটি। এই সুবাদে অনেকগুলো দিন ওঁর মতো পরিচালকের সঙ্গে কাটাতে পেরেছিলাম।
পরিচালক ঋতুদা আমার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করতেন। প্রতি দিন শ্যুট শুরুর আগে বলতেন, ‘‘তোকে বলে দেওয়ার কিচ্ছু নেই। তুই তো সবই জানিস, পারিস। তুই তোর মতো করেই করবি।’’ এত বড় একজন পরিচালকের থেকে এই শংসাপত্র যে কোনও অভিনেতার মনোবল বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তা ছাড়া, যে কোনও চরিত্র ঋতুদা খুব ভাল বর্ণনা করতে পারতেন। ওঁর বর্ণনা মন দিয়ে শুনলে আর কোনও কিছুর দরকার পড়ত না। আসলে নিজে অভিনয়টা খুবই ভাল বুঝতেন, পারতেন। সেটা তাঁর এবং আমাদের পক্ষেও বাড়তি সুবিধে। পরে একাধিক ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রমাণও করেছেন।
‘ব্যক্তি’ ঋতুদাও বড্ড ভাল ছিলেন। ওঁর থেকে কত কী যে শিখেছি! ওঁর সাজসজ্জার আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। সেগুলো আমিও ধীরে ধীরে আত্মস্থ করেছিলাম। অভিনয়ের ধারা ওঁকে দেখে বদলেছি। আর শিখেছি বাড়ি সাজানো। ঋতুদার বাড়িটা এত সুন্দর সাজানো ছিল! পুরো বাড়ি জুড়ে সাবেকি বনেদিয়ানার ছাপ। ঋতুদা নিজের হাতে সাজাতেন। আমিও বাড়ি সাজাতে ভালবাসি। আমার বাড়ি তাই ঋতুদার মতো করে সাজানোর চেষ্টা করেছি। এক সঙ্গে কত কাজ যে করতেন! লেখা, আঁকা, পরিচালনা, অভিনয়, সাজানো, নিজের সজ্জায় বদল আনা, বাড়ি সাজানো— ঋতুদা আসলে ক্ষণজন্মা। তাই এক জীবনে এত গুণের সমাহার!
তার পরেও একটা অনুযোগ থেকে গেল। তুমি নিজেকে নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন করতে গেলে? না করলে অকালে চলে যেতে না ঋতুদা! একে ডায়াবেটিস এতটা বেশি। তার উপরে প্লাস্টিক সার্জারি-সহ শরীরে একাধিক কাটাছেঁড়া। এত ধকল নেওয়া যায়! এক দিন আর ঘুম থেকেই উঠলে না! আমি তখন কলকাতার বাইরে। আসতে পারিনি। কিন্তু দূর থেকে অভিমান করেছি, এত তাড়াতাড়ি না গেলে তো এই প্রজন্মও তোমায় পেত। তোমার আরও অনেক কাজ ছিল। বিনোদন দুনিয়াকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী তৈরি করার ছিল। সে সব না করেই হুট করে এ ভাবে যেতে হয় ঋতুদা?
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy