Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Koneenica Banerjee

Koneenica Banerjee: শুনেছিলাম আমি নাকি ভবিষ্যতের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান তারকা, তবু কেউ ডাকল কি: কণীনিকা

একুশ বছরে কাজের সংখ্যা বেশ কম। কেন? আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে খোলাখুলি ধরা দিলেন কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে খোলাখুলি ধরা দিলেন কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে খোলাখুলি ধরা দিলেন কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরমা দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:১৬
Share: Save:

একুশ বছর পরেও আপনি সেই ‘এক আকাশের নীচে’র পাখি। কেমন লাগে?

ভাল তো লাগেই। সত্যিই মানুষ এখনও আমায় ‘পাখি’ বলেই সবচেয়ে বেশি চেনেন। তবে ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’র মেঘ, ‘অন্দরমহল’-এর ‘পরমেশ্বরী’, ইদানীং ‘সইমা’ বলেও চেনেন অনেকেই। ‘হামি’ বা ‘মুখার্জিদার বউ’ও আমায় অনেকখানি পরিচিতি দিয়েছে।


একুশ বছরে হাতেগোনা কিছু ধারাবাহিক আর ছবি। অনেকটাই কম নয় কি?

খুবই কম। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আমি কাজের সুযোগই পেয়েছি খুব কম। এক একটা ধারাবাহিকে কাজ। তার পর অনেকগুলো বছরের বিরতি। আবার একটা কাজ। মাঝে কেউ ডাকেনি। রবি ওঝার ছবি ‘আবার আসব ফিরে’ করার সময়ে শুনেছিলাম আমি নাকি ভবিষ্যতের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান তারকা। তবু কেউ ডাকল কি? আসলে সময় আর ভাগ্য একটা বড় ব্যাপার। আমার লড়াইটা বেশি হয়ে গিয়েছে। কাজ কম। বলিউডে কিছু দিন গিয়েছিলাম। সেখানেও একই তো হাল হল।

তবু তো দর্শক আপনাকে মনে রাখেন, ভালওবাসেন?

সত্যি! একুশ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কেটে গেল বটে, কিন্তু কাজ করার সুযোগ পেয়েছি মাত্র সাত-আট বছর। তবু কিন্তু মানুষ আমায় এক ডাকে চেনেন। এত ভালবাসেন। ফেসবুকে আমার বন্ধু তালিকায় এত মানুষ, পুরোটাই কিন্তু তাঁরা নিজেরা আমায় ভালবেসে জুড়ে থাকতে চেয়েছেন বলে। আমি টাকা দিয়ে ফলোয়ার বাড়াইনি। এতখানি ভালবাসার জন্য সত্যি আমি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।


ধারাবাহিক কম করেছেন, ছবি বেশি। সে ভাবেই কাজ বাছাই করেছেন?

পাগল নাকি! ‘বেগারস ক্যানট বি চুজারস’! খেয়ে-পরে বাঁচতে হলে টাকা চাই তো। তার জন্য রোজগারটাও নিয়মিত হতে হবে। আগে পছন্দের চরিত্র বাছাই করতে চাইতাম। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০২২, এই সময়টায় জীবন বুঝিয়ে দিয়েছে প্রতিভা দিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু হবে না, টিকে থাকতে হলে চাকরির মতো করে অভিনয়টা করে যেতে হবে। এখন তাই শুধু দেখি অভিনয়ের সুযোগ কেমন। সেটা থাকলে বড় বা ছোট, যে চরিত্রই হোক, আমি কাজ করব। নিজের সংসার নিজে চালাতে টাকা তো লাগে।

ভাল অভিনয় করেন। তা-ও আপনাকে কেউ ডাকে না বলছেন?

(হাসি) ইন্ডাস্ট্রি তো বলে আমি নাকি বড্ড নাকউঁচু, ভীষণ অহঙ্কারী। তাই হয়তো কাজ দিতে চায় না। আসলে আমি খুব স্পষ্টবক্তা ধরনের। কোনও কিছু পছন্দ না হলে সেটা সোজাসুজি বলি, দরকারে সটান বেরিয়েও আসি। আর তেল-টেলও দিতে পারি না একদম। সেটাই হয়তো আমায় অপছন্দের কারণ। তবে যাঁরা আমায় মনে রেখে কাজ দেন, যেমন রবি ওঝা, শিবপ্রসাদ-নন্দিতা, ইন্দ্রাশিস আচার্য— ওঁদের কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। আমার খারাপ সময়ে ওঁরা পাশে থেকেছেন। আমায় মনে রেখে ছবিতে কাজ দিয়েছেন। ওঁদের জন্যই আমি ভেসে থাকতে পেরেছি। অবসাদে ভেঙেচুরে তলিয়ে যেতে হয়নি।

কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আর ধারাবাহিক? সেখানে কী অবস্থা?

সত্যি কথা বলব? আমি শুরু করেছিলাম ‘স্বপ্ননীল’, ‘এক আকাশের নীচে’র মতো ধারাবাহিকে। তখন ধারাবাহিক ছিল জীবনের কাছাকাছি। এখন তো সব গল্পই জীবনের চেয়ে অনেকটা বড় ফ্রেমে গাঁথা, অতিরঞ্জিত কাহিনি। মুম্বইয়ের ধাঁচে এই মেগা ধারাবাহিকগুলোতে কাজ করে মনের খিদে মেটে না। এক একটা ধারাবাহিকে কাজ করে তাই অনেকটা করে বিরতি নিতে ইচ্ছেও করে। আমার শুরুটা তো একেবারে অন্যরকম স্বাদে। রবি ওঝার মতো পরিচালক, একঝাঁক বলিষ্ঠ অভিনেতা। আমি আজ যা পারি, যতটা পারি, তার অনেকখানিই শিখেছি ‘এক আকাশের নীচে’ পরিবারের কাছে। সেখানে এখনকার ধারাবাহিকে সেই ছকে বাঁধা গল্প, নিত্য কুটকচালির দৃশ্য করে কেমন যেন হাঁপিয়ে উঠি।

ওটিটি তো বরং ‘জীবনের কাছাকাছি’ গল্প বলে। তাতে কাজ করছেন?

ওই যে বললাম, আমায় ডাকে না কেউ! কেন জানি না। একটাই মাত্র কাজ করেছি এ পর্যন্ত। আর সুযোগ আসেনি।


আপনি কি তা হলে রাজনীতির শিকার? কোনও প্রযোজক বা পরিচালকের সঙ্গে ঝামেলা হয়নি তো?

সে তো বিস্তর হয়েছে। তবে তা নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভাল। কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই খুব ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। আমায় তো করেকম্মে খেতে হবে।

আর রাজনীতির ময়দান? ইন্ডাস্ট্রির অনেকে আছেন, আপনি তো সেখানেও নেই!

না, পেরে উঠব না। আমি একেবারেই রাজনীতির দুনিয়ার উপযোগী নই। রাজনীতি করার মতো বোধবুদ্ধিও আমার নেই। মানুষের পাশে থাকতে ভালবাসি, স্পষ্ট কথা বলি। সেটা নিয়ে নিজের মতো থাকাই তো ভাল।


কিন্তু কাজের মাঝে মাঝে এত দিন করে বসে থাকলে অবসাদ হয় না?

হবে না কেন? কিন্তু আমার পাশে কিছু মানুষ আছেন, আমার পরিবার— মা, বাবা, কাকা, বোন। এখন আমার মেয়ে কিয়া। এরাই আমায় অবসাদে তলিয়ে যেতে দেয়নি। আর এই পরিবারের জোরটা আছে বলেই এখনও টিকে রয়েছি। যখন পোষায়নি, কাজ ছেড়ে বা কাজ না করেও জীবন চালিয়ে নেওয়ার সাহস পেয়েছি। আর্থিক কষ্টে পড়তে হয়নি। সে সৌভাগ্য তো সবার থাকে না। তবে এর আগে মা-বাবার ছত্রচ্ছায়ায় ছিলাম। এখন মেয়েটাকে ঘিরেই আমার ভাল করে বাঁচার তাগিদ। ওর জন্যই সব।

‘আয় তবে সহচরী’র আগে কত দিনের বিরতি ছিল?

বছর চারেক। ‘অন্দরমহল’ ছাড়লাম অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। পারছিলাম না আর। কিয়া হওয়ার পরে ‘টনিক’ করেছি। তার পর তো কোভিড। আবার এই সবে কাজে ফিরলাম।


প্রযোজককে বিয়ে, তিনি ডিভোর্সী এবং এক সন্তানের বাবা। চর্চা সামলালেন কী করে?

চর্চা তো হবেই। ও সব পরের কথা। আমি তো নিজেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছি অনেক পরে। বুঝতে পারছিলাম না এই সম্পর্কটায় যাওয়া উচিত হবে কি না। কারণ সুরজিতের জীবনে ওর দশ বছরের ছেলে দ্রোণ ছিল। তখন আমার মা বোঝালেন, দ্রোণকে কৃষ্ণরূপে সেবার সুযোগ পাব আমি। আমি তো কৃষ্ণভক্ত। এই কথাটা তাই নাড়া দিয়েছিল খুব। মায়ের কথাতেই এই বিয়েতে রাজি হওয়া।

দ্রোণ আপনাকে মেনে নিতে পেরেছিল?

ও আগে আমার বন্ধু ছিল। কণী বলে ডাকত আমায়। আমি ওকে পড়াতাম। কিন্তু ওর বাবাকে বিয়ে করলে ওর তো সমস্যা হবেই। বড় হচ্ছে তো তখন। আর একটা মেয়ের বড় হওয়া আর ছেলের বড় হওয়ার মধ্যে অনেকটা ফারাক। ছেলেদের বোঝা বা বোঝানো অনেকটাই কঠিন। কিন্তু আস্তে আস্তে দ্রোণ আর আমি বন্ধু হয়ে গিয়েছি। ওকে স্কুলে আনা-নেওয়া, ম্যাজিক শেখানো, গল্প করা। পাঁচ বছর পরে এখন ও আমায় মা বলেই ডাকে। বন্ধুর মতো গোপন কথাও ভাগ করে নেয় আমার সঙ্গেই। সবচেয়ে বড় কথা, কিয়াকে ও মেনে নিতে পেরেছে। কিয়াও নিজের গুণে ওর ভালবাসা আদায় করে নিতে পেরেছে। এ ব্যাপারটা নিয়ে আমি সত্যি খুব ভয়ে ছিলাম। সম্পর্কগুলো আবার নতুন কোন খাতে বইবে, তা নিয়ে ভাবনায় ছিলাম খুব।


স্বামী প্রযোজক। কাজ পেতে সুবিধে হবে, এমন কোনও চর্চা হয়নি?

একটা জিনিস কিন্তু হয়েছিল। লোকে ধরেই নিয়েছিল, আমার সঙ্গে কথা বললেই সুরজিৎ ছবি প্রযোজনায় রাজি হয়ে যাবে। কিন্তু তা তো বাস্তব নয়। আমি অভিনেত্রী, ও প্রযোজক। আমরা দুটোকে মেলাই না, একে অন্যের বিষয়ে জড়াইও না। আমি ওর থেকে আর্থিক কোনও সাহায্য নিতেও ভালবাসি না। স্বামী হিসেবে পাশে থাকে, ব্যস। আমি বরাবরই এই ইন্ডাস্ট্রিতে লড়াই করে পায়ের জমি শক্ত করা মানুষ, এখনও তাই। সুরজিৎ ছবি করলে আমায় হয়তো ডাকবেও না! আমি যে ভাবে কাজ করি, সেটাই আমার চরিত্র। তাকে ভাঙার দরকার পড়েনি।


আপনার বোন এক সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন। আপনাদের মধ্যে তুলনা হয়নি?

সেই সময়টায় আমি মুম্বইতে ছিলাম। ও ভাল অভিনেত্রী, দেখতে সুন্দর, নাচটাও ভাল পারে। কিন্তু ও নিজের প্রতিভাটা কাজে লাগাল না সে ভাবে। টলিউডের ইন্ডাস্ট্রিতে রাজনীতি আছে, র‌্যাগিং আছে, প্রচণ্ড কুটকচালি আছে। ধারাবাহিকের কুটকচালি বোধহয় এ পাড়ার মানুষদের জীবনেও ঢুকে পড়ে। সেটা ও মানিয়ে নিতে পারেনি। ছেড়েছুড়ে চলে গিয়েছে। আমিও তো একই কারণে পালিয়েছি অনেক বার, আবার ফিরেও এসেছি। ও আর ফেরেনি। এখন বিদেশে স্বামী-সন্তান নিয়ে গুছিয়ে সংসার আর চাকরি নিয়ে দিব্যি ভাল আছে।

কাজ থেকে বিয়ে নিয়ে অকপট কণীনিকা।

কাজ থেকে বিয়ে নিয়ে অকপট কণীনিকা।

ইন্ডাস্ট্রিতে এত বার আপনি যাওয়া-আসায় কাটিয়েছেন। কতটা বদল দেখলেন?

অ-নে-ক-টা। এখন তো আমাকে টলিপাড়ার ‘বড়’দের দলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি তো আসলে তা নই। একুশ বছরে কাজ তো করেছি মাত্র সাত-আট বছর। বাকিটা বিরতি আর অপেক্ষা। আর সেই ফাঁকগুলোতে ইন্ডাস্ট্রি অনেকখানি বদলে গিয়েছে। ধারাবাহিকের চরিত্র বদলেছে। শ্যুটিংয়ের চরিত্রও। এখন দেখি অনেক ক্ষেত্রেই পরিচালকের চেয়ে গল্পলেখক, প্রযোজক বা চ্যানেলের কথার বা সিদ্ধান্তের গুরুত্বই বেশি। আগে তো পরিচালকই ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। চ্যানেলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বেড়েছে, এখন অভিনেতার সংখ্যাও অঢেল। তবু ভাল কাজের সংখ্যা কম। তবে হ্যাঁ, ক্যামেরা অনেক আধুনিক আর উন্নত হয়েছে, ধারাবাহিকের সেটে সাজপোশাকের জন্য আলাদা দফতর হয়েছে, কাজের তত্ত্বাবধানের জন্য লোক থাকছেন— এই বদলগুলো কাজের সুবিধে বাড়িয়েছে।

অভিনেত্রী হিসেবে আগামীতে কোনও স্বপ্ন আছে?

কিয়া হওয়ার পরে স্বপ্নের সংজ্ঞাটা পাল্টে গিয়েছে। এখনও আমি কাজ করতে চাই। তবে সবটাই কিয়ার জন্য, কিয়াকে ভাল রাখার জন্য। ওর মুখের হাসিটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা। তবে এখন কত ভাল ভাল কাজ হচ্ছে মুম্বইতে, ওটিটিতে এত ভাল কাজ হচ্ছে, কেউ যদি আমার কথা ভাবেন, খুব ভাল লাগবে। এত কিছু শিখে এসে অনেক কিছু দেওয়ার সুযোগ ছিল এই জগৎটাকে। আর কবে করব সে সব? অভিনেতাদের তো বয়স বলে কিছু হয় না। নিশ্চয়ই এক দিন দারুণ কোনও চরিত্র পাব।


টলিউডে ইদানীং তো রিল ভিডিয়োর রমরমা! অবসর সময়ে রিল বানান?

হ্যাঁ বানাই। তাতেও আমার মেয়েটাকে ঘিরেই সব কিছু। এখন রিল ভিডিয়োর বড্ড হিড়িক। আসলে নেটমাধ্যমে দর্শকের নজরে সব সময়ে থাকাটাও তো অভিনেতাদের টিকে থাকার লড়াইয়েরই একটা অঙ্গ। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে। অভিনয় করতে এলে অভিনয় জানাটা কিন্তু বাধ্যতামূলক। আমি সারাক্ষণ রিল ভিডিয়ো বানাচ্ছি, এ দিকে শ্যুটিং ফ্লোরে কিছুই করে উঠতে পারছি না, তাতে লাভ হবে না। মানুষ দু’দিন চিনবে, তার পরে মুখ ফিরিয়ে নেবে। রিল তো আসলে বিজ্ঞাপন, অভিনয় বা তারকা ইমেজ বেচার। প্রোডাক্টটাই যদি ভাল না হয়, চলবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Koneenica Banerjee Actress Interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE