Advertisement
০৫ মে ২০২৪

গুজব হল পার্ট অফ সেলেব্রিটি লাইফ

নতুন ছবি, সংসার... সব মিলিয়ে কেমন আছেন কোয়েল মল্লিক? ওর সঙ্গে মেশার পর মনে হয়েছিল প্রচণ্ড ডিপেন্ডেবল একজন মানুষ, যাকে বিশ্বাস করে অনেক কিছু বলা যায়। আর সব কথা তো মা-বাবার সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। ওই একমাত্র মানুষ ছিল যার কাছে সব কথা নিশ্চিন্তে বলতে পারতাম।

কোয়েল

কোয়েল

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

রাত তখন সাড়ে ন’টা। আনন্দ প্লাসের জন্য শ্যুট সেরে সাক্ষাৎকারে বসলেন কোয়েল মল্লিক। বিয়ের চার বছর পরও কোয়েল একই রকম পারফেক্ট। নির্মেদ, সুন্দরী। হোটেলে ঢুকতেই হাসিমুখে সেলফি তুলেছেন ভক্তদের আবদার মেনে। দু’বছর ব্রেক নেওয়ার পরও তাঁর জনপ্রিয়তায় কিন্তু টান নেই। শ্যুট শেষে গাউন ছেড়ে জেগিংস আর টপ পরে বসলেন। কেমন সংসার করছেন? ‘‘ফুল ফ্লেজেড সংসার করছি। আনন্দে, সুখে।’’ মানে সোজা কথায় কোয়েল মল্লিক এখন পাকা গিন্নি। তা কন্যা থেকে গৃহিণী হওয়ার পর কিছুটা পরিবর্তন স্বাভাবিক ভাবেই আসে। বিয়ের চার বছরে কোয়েল তেমনটা অনুভব করেছেন কি না, জানতে চাওয়ায় ভারী সুন্দর উত্তর দিলেন, ‘‘পরিবর্তন হয়েছে বলতে দায়িত্ব বেড়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মা-বাবার সঙ্গে আমার নতুন সংসারের কথাও ভাবতে হয়। আসলে কী জানেন তো, বিয়ের পর এই পরিবর্তনটুকু হবেই। এ ব্যাপারে আমরা মেয়েরা এক বিনি সুতোর মালায় গাঁথা। তবে মানুষ হিসেবে কতটা বদলেছি, তার উত্তর বাকিরা দিতে পারবে।’’ সাইকোলজি অনার্সের ছাত্রী ছিলেন তো, তাই তাঁর কথায় মাঝেমধ্যে বিষয়টা উঁকি দিয়ে যায়। প্রযোজক স্বামী নিসপাল সিংহের সঙ্গে কোয়েলের বন্ধুত্ব ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার বছর দুয়েকের মধ্যে। তার পর প্রেম। কিন্তু দিনে কয়েক ঘণ্টা একসঙ্গে কাটানো আর এক ছাদের তলায় থাকা যে এক নয়, সে কথা বড় ক্লিশে হলেও নিখাদ সত্য। চেনা গতটা বুঝেই সুখী দাম্পত্যের রহস্যটা শোনালেন, ‘‘আমাদের ফ্রেন্ডশিপ খুব তাড়াতাড়ি ক্লিক করে গিয়েছিল। রানে প্রচণ্ড অনেস্ট। এবং ওর একটা একটা সলিড পার্সোনালিটি আছে। ওর সঙ্গে মেশার পর মনে হয়েছিল প্রচণ্ড ডিপেন্ডেবল একজন মানুষ, যাকে বিশ্বাস করে অনেক কিছু বলা যায়। আর সব কথা তো মা-বাবার সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। ওই একমাত্র মানুষ ছিল যার কাছে সব কথা নিশ্চিন্তে বলতে পারতাম। আমি জানতাম, উত্তরটা আমার ভালর জন্য আসবে...’’ কথা শেষ হল না, কোয়েলের ফোন বেজে উঠল। ‘রানে ফোন করছে’ বলে ফোন ধরে কর্তাকে বললেন, ‘একশো হাজার বছর বাঁচবে, বলো...’

আরও পড়ুন: বিরতি কাটিয়ে পরিচালনায়

অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, গিন্নি ফেরেনি বলে কর্তার ফোন আসা দেখে, দাম্পত্যের স্বাভাবিক ছন্দ চোখে পড়ল। কিছু দিন আগে তাঁদের সম্পর্কে ফাটল নিয়ে বেশ কিছু কথা শোনা যাচ্ছিল। সেগুলো কি কোনও ভাবে তাঁকে এফেক্ট করে? ‘‘গুজব হল পার্ট অফ সেলেব্রিটি লাইফ। এটা আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে। তবে এ সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। রিউমার যদি আমাকে প্রভাবিত করে, তা হলে কাজের পর বাকি সময়টা শুধু চিন্তা করতে থাকব, কে কী বলল, কোথায় কী লেখা হল তা নিয়ে! জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো পাব না।’’ বলেই হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘তবে আমার মনে হয় সবাই আমাকে এতটাই মিস করেছে যে, কী করে আমাকে পেপারে আনা যায়, তার উপায় খুঁজছে!’’

অবশ্য এ বার তিনি আবার খবরে। কিছু দিন পর মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি ‘ছায়া ও ছবি’। সেখানে তিনি স্টার ‘রাই চ্যাটার্জি’র ভূমিকায়। রাই ভীষণ বদরাগী, সেটাই ইন্ডাস্ট্রির ধারণা। লম্বা ব্রেকের পর এ হেন জটিল চরিত্র দিয়ে কোয়েলের আবার বড় পরদার সঙ্গে সাক্ষাৎ। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন ওঠে, সাংসারিক ব্যস্ততাই কি বিরতির কারণ? উত্তরে বললেন, ‘‘না সেটা নয়। একটা ভাল গল্প, নতুন ধরনের স্ক্রিপ্টের অপেক্ষায় ছিলাম। নিজেকে আরও নতুন করে কী ভাবে প্রেজেন্ট করা যায়, সে ভাবনাটা ছিল। চ্যালেঞ্জ না থাকলে কাজের মজাটা চলে যায়। শুধু মনে হত, কমফর্ট জোন থেকে কী ভাবে বেরোব? তা না হলে নিজেকে এক্সপ্লোর করতে পারব না।’’ তার মানে মিষ্টি নায়িকা কোয়েল মল্লিক এ বার আউট অ্যান্ড আউট নেগেটিভ চরিত্রের জন্যও রেডি? ‘‘ডেফিনিটলি। তবে চরিত্রটা বিশ্বাসযোগ্য হওয়া চাই। আসলে সেলেব্রিটিদের সমাজের প্রতি অনেক দায়িত্ব থাকে। যখন ছেলেমেয়েরা আপনাকে অনুসরণ করছে, তখন ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হয়। তা ছাড়া এখন মানুষের অ্যাটেনশন স্প্যান কমে গিয়েছে। তাই দর্শক যে আমাকে মিস করেছে, সেটা জেনে আই ফিল ব্লেসড।’’

সেটা তো গেল পরদার নায়িকা কোয়েল মল্লিক। কিন্তু এর বাইরে ক্যামেরা অফ হয়ে গেলে যে মানুষটা বেরিয়ে আসেন, তিনি প্রচণ্ড রকম প্রাইভেট পার্সন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট তাঁর কাছে ব্যক্তিগত জীবনের ছবি পোস্ট করার জায়গা নয়, সেখানেও শুধু কাজটুকুই দেখাতে চান। তাঁর জীবনে পরিবার এবং পেশা সমান্তরাল লাইনে বহমান, যাদের তিনি কখনওই মেলান না। এবং খুব ভাল করেই জানেন এই কারণে তাঁকে নিয়ে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল আছে, বাঁকা প্রশ্ন আছে। অবশ্য এর আরও একটা কারণ তাঁর যে কোনও রকম নেগেটিভিটিতে সায় না দেওয়া। কী করে পারেন এ রকম থাকতে, সব সময় পারফেক্ট? রাগ হয় না?

উত্তর দিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড হেসে ফেললেন, ‘‘রাগ আবার হয় না! এটা তো ইমোশন। ইমোশনটাই যদি না থাকে, তা হলে তো ডেফিনিটলি আমার ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট আছে। প্রত্যেকের রাগের এক্সপ্রেশন আলাদা। আমি রাগ হলে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করি, বই পড়ে, সিনেমা দেখে যে ভাবে হোক। মনে হয় আমার শান্তি চলে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকে এটাই আমার স্বভাব। তাতে কেউ যদি বলে আমি কী ভাবে এত পারফেক্ট থাকি, সব সময় পজিটিভ বলি, তা হলে বলব, আই লাইক স্পিকিং পজিটিভ। কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে, সেটা চিরকালের জন্য থেকে যাবে। আমি জীবনের আর্কাইভে সেই নেগেটিভ জিনিস রাখতে চাই না। সেটা আমাকে শান্তি দেয় না। আমি যদি কাউকেও সাময়িক ভাবেও বকাবকি করি, তার কতটা লাগে জানি না আমার খারাপ লাগে। তাই সহজে টেম্পার লুজ করি না, যদি না কেউ আমাকে ভীষণ ভীষণ কর্নার করে।’’

ইন্টারভিউ শেষে বললাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, রাত হয়েছে বলে ট্যানট্রাম দেখিয়ে যে চলে যাননি। হেসে বললেন, ‘‘হ্যাঁ অনেকবার চেষ্টা করেছি ট্যানট্রাম দেখানোর। পারিনি। ওটা আসলে আমার দ্বারা হয় না।’’ এটাই কোয়েল। সে যে যাই বলুক... সব সময় পজিটিভ থাকাটা কিন্তু বড় সহজ নয়।

ছবি: আশিস সাহা, মেকআপ: প্রসেনজিৎ বিশ্বাস

পোশাক: সস্যা, লোকেশন: হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE