প্রিয়জনদের মৃত্যুর খবর নিয়ে রোজ বেঁচে আছি আমরা।
আজও তেমন এক সকাল। ওর কাছে তো পৌঁছতেও পারলাম না। আমার স্বামীকে নিয়ে নার্সিং হোমে এখন। শরীরের সব পরীক্ষার দিন ছিল আজ। কী করে যাই?
খুব সুন্দর সম্পর্ক ছিল আমাদের। আমি, উত্তমবাবু, সুপ্রিয়া দেবী। তখন শিল্পীদের মধ্যে একটা আন্তরিক হৃদ্যতা ছিল । এখনকার মতো না। এখন তো সব ওপর ওপর। যন্ত্র নির্ভর। এমন কত দিন গেছে আমার আর উত্তমবাবুর শুট চলছে, সুপ্রিয়া দেবীর কোনও ভূমিকাই নেই। তাতে কী! উনি হাজির প্রচুর রান্না করে। আর রান্না করে এনেছেন যখন, খেতে তো হবেই! রেঁধে খাওয়াতে পারলে আর কিছু চাইতেন না। আমি, উত্তমবাবু, সুপ্রিয়া দেবী শুটের ফাঁকে তিনজনে গল্প করতে করতে খেলাম! এখন এ সব কেউ ভাবতে পারে?
খেলাচ্ছলে, রসিকতায় দিন কেটেছে। সোনালি সব ঝলমলে দিন।
আরও পড়ুন:
উত্তমের আকাশে ডানা মেললেন সুপ্রিয়াও
‘আন্টি দিদুর কাছে দাদুর গল্প সে ভাবে শোনা হয়নি’
কয়েক দিন আগেই ওর নাতির বিয়েতে গেলাম। খুব খুশি হয়েছিল। তার বেশ কিছু দিন পরে অসুস্থ শুনে দেখতে গেলাম। মনে হল যেন চোখের মধ্যে এক বিন্দু জল।
সবটাই তো চোখের সামনে দেখা। ৩ নম্বর ময়রা স্ট্রিটের বাড়ির সেই রোশনাই ঢালা সুপ্রিয়া দেবী আর আজকের ফ্ল্যাটের সুপ্রিয়া দেবীর অনেক অনেক তফাত। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তা আর সম্মান তিনি পেয়েছেন এটা ঠিক। চিকিৎসা থেকে বাসস্থান সব ক্ষেত্রেই সরকার ওর পাশে ছিলেন। কিন্তু মনের হাহাকার তো আর কিছুতেই মেটে না। গ্ল্যামার দুনিয়ার ঝকঝকে ঐশ্বর্য থেকে একলা দুনিয়ার আলো আঁধারির রাস্তা কেমন করেই বা পেরোতেন উত্তমপ্রিয়া? আমার তো মনে হয়, ওর নিঃসঙ্গতা ওকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল! একটু যদি গ্ল্যামার দুনিয়ার বাইরে এসে, সাধারণের সঙ্গে যদি নিজেকে মেলে ধরত, আমার মনে হয় ওর জীবনের পরিবর্তনগুলো সহজে নিয়ে আরও কিছু দিন আমাদের সঙ্গে থাকতে পারতো।
লিখতে গিয়ে আবার মনে আসছে আর এক মজার গল্প। একবার শুটের জন্যই আমি আর অনুভা ঘোষ একটা ঘরে আছি আর উত্তমবাবু, সুপ্রিয়া দেবী আমাদের ঠিক পাশের ঘরে। ওদের হাব ভাব দেখে বুঝলাম ওরা দুজনে ঘরে একটু বেশি 'ঠিকঠাক' আছে। আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। পাশেই নয়নতারা গাছ ছিল। সেখান থেকে খান কতক ফুল পেড়ে ওদের জানলা দিয়ে ছুড়তে ছুড়তে বললাম , "তোমার পতি সেবায় তুষ্ট হয়ে দেবতা পুষ্প বৃষ্টি করছেন!" সুপ্রিয়া দেবী তেড়ে এসে বললেন, " উফ! এই মাধুটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। এত দুষ্টু ওটা!"
ফুরিয়ে যাচ্ছে অধ্যায়। খাতার পাতা ফুরিয়ে যাচ্ছে, মৃত্যু নামক জীবনের ডাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy