Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ: জীবনের সব ভালবাসা নিংড়ে নিল অক্টোবরের ক্যানভাস

ছবির গল্প বলে পাঠকদের ছবি সমালোচনার একঘেয়ে ধারা থেকে মুক্তি দিতে চাই। হয়তো সুজিতের ছবি এ ভাবে লিখতে উদ্বুদ্ধ করল। এই ছবিতে প্রকৃতি নিয়ে এক আকিঞ্চন খেলা খেললেন সুজিত। শিউলি তাঁর ছবির কেন্দ্রে।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:০৫
‘অক্টোবর’-এর দৃশ্য।

‘অক্টোবর’-এর দৃশ্য।

শেষ চৈত্রের ভোর রাতে এক ফোঁটা শিউলি ঝরল।

সেই শিউলি উন্মনা। নয়নে তার হিমকণা।

সুজিত সরকারের ‘অক্টোবর’-এর বাস্তব কথা দেখতে দেখতে মনে হল যেন এক কবিতার শরীর দেখতে পাচ্ছি।

সেই শরীর মৃত্যু, মায়া আর নৈঃশব্দের প্রেম গন্ধ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে পর্দা জুড়ে।

‘ভিকি ডোনার’ থেকে ‘পিকু’— সুজিত সরকারের ছবি মানেই মন ছোঁয়া এক গুচ্ছ মুহূর্ত। এ বারের সেই মুহূর্তের মোড়ে সুজিত দাঁড় করিয়েছেন বরুণ ধবনকে। নাহ্, এই বরুণ সেই ‘বদ্রীনাথ কি দুলহানিয়া’-র বরুণ নন। তাঁর ‘বদলাপুর’-এর রূপ বদলে গিয়েছে। তিনি এক জন জাত অভিনেতা হিসেবে সুজিতের এই ছবিতে যেন প্রথম আত্মপ্রকাশ করলেন। তাঁর এক ফোঁটা অশ্রুজলে কেঁপে উঠল সকালের প্রথম শোয়ের বেশ কিছু দর্শক। কেন তার চোখ ভরে এল? ছবি বলবে।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: কনটেন্টের থেকেও ‘ব্ল্যাকমেল’-এর সম্পদ ক্রাফট

নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকা, অথচ বন্ধু মহলে জনপ্রিয় এক মানুষ ‘দান’। খুব বেশি সংলাপ নেই এ ছবির। হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের দুনিয়ার দেখনদারি কোথাও নেই। আজকের প্রজন্মের ছবি তো? কই, সব কিছু দ্রুত চলে না তো তাদের জীবনে? শপিং মল, বিকিনি টপ বা কথায় কথায় বয়ফ্রেন্ড বদলায় না আসলে সকলে। বরং না বলা প্রেমের অপেক্ষা করে, শিউলি গাছের তলায় চাদর বিছায়, ঝরা শিউলির গন্ধে নিজের এক টুকরো জীবনকে রাঙিয়ে নেবে বলে। নিজের কাছের এই ছোট আনন্দই যে সব চেয়ে বড় করে দেখার সময় এখন, সুজিত বুঝিয়ে দিলেন তাঁর ‘অক্টোবর’-এ।

ছবির গল্প বলে পাঠকদের ছবি সমালোচনার একঘেয়ে ধারা থেকে মুক্তি দিতে চাই। হয়তো সুজিতের ছবি এ ভাবে লিখতে উদ্বুদ্ধ করল। এই ছবিতে প্রকৃতি নিয়ে এক আকিঞ্চন খেলা খেললেন সুজিত। শিউলি তাঁর ছবির কেন্দ্রে। কম সময়ের জন্য ফুটে ওঠা এই ফুল, থেকে থেকেই সুজিতের ছবিতে বিদায়ের সুর লাগায়। সে কি ফেরে? ছবি বলবে।


ছবিতে মনে হয় না কেউ অভিনয় করেছেন! সবটাই এত বাস্তবের রাস্তায় ধরা ফ্রেম!

তবে শিউলি একা নয়। তার রক্তমাখা জীবনে ফোটে বৃষ্টিভেজা চাঁপা বা ফাগুনের গোলাপি বোগেনভেলিয়াও। আসলে শুধু ফুল মাত্র নয়। সুজিত এই দৃশ্যের পরতে পরতে জন্ম দিয়ে তাঁর ছবির সামনের মুহূর্তগুলোর সঙ্কেত দিতে দিতে চলেন।

তাঁর পাশাপাশি জুহি চতুর্বেদী লেখেন মন কাড়া হাসি বেদনার শব্দ, কথা। আজকের বলিউড ছবির সংলাপ হয়ে ওঠে এ রকম— বরুণ তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষকে (প্লিজ, প্রেমিকা পড়বেন না) বলে, “অনেক জায়গায় তো বেড়াতে যাবে ভেবেছিলে? কোনও দিন ভাবতে পেরেছিলে কোমায় যাবে?’’ মারাত্মক মানসিক টানাপড়েনে মানুষ খুব সহজ কথা বলে ওঠে। জুহি সেই জায়গায় সুজিতের কাজ সহজ করলেন। কিন্তু যাঁর কাছে এই প্রশ্ন সে নিরুত্তর! আকস্মিক এক কালো ঝড় তাঁর বাঁচার স্বাভাবিকতা ফুরিয়ে দিয়েছে। শিউলি ফোটা প্রায় শেষ, তখন শীতের ধূসরতা গ্রাস করছে সুজিতের অক্টোবরের ক্যানভাস!

শিউলির চরিত্রে নবাগতা বানিতা সাধু জীবন্ত হয়ে থেকে গেলেন। শিউলির মায়ের চরিত্রে ঘন হয়ে দর্শকদের মনে ধরে গেলেন গীতাঞ্জলি রাও! অনেক মায়ের গল্প বললেন যেন তিনি।

আরও পড়ুন, পর্ণমোচী নতুন কোনও ভাবনায় ভাবাল কি?

ছবিতে মনে হয় না কেউ অভিনয় করেছেন! সবটাই এত বাস্তবের রাস্তায় ধরা ফ্রেম!

ছবিতে গান নেই। কিন্তু সুর বাঁধা মন্দ্রকে। নিখাদে। সপ্তকে। ছবির আবহেও নৈঃশব্দের চেতনা। আর সেই চেতনার নাম শান্তনু মৈত্র। বিষাদের অশ্রজলে এমন নরম অডিয়োগ্রাফি বহু দিন পর হিন্দি ছবিতে। তাই দীপঙ্কর জোজো চাকী, বিশ্বদীপ চট্টোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন সামালকে ধন্যবাদ।

এ ছবির আলোচনা করা যায়। সমালোচনা নয়। কারণ, এ ছবি সম্পর্ককে নতুন করে দর্শকদের সামনে এনে বলে, দুই মানুষের মনের সুতোয় হিসেব চলে না। কাছের পর্দা আড়াল করলেও মনের দরজার সবচেয়ে গভীরে তারা বড় কাছাকাছি। তাই এক মানুষ একলা এক অব্যক্ত অবয়বের অচল নিস্তব্ধতায় জীবনের সব ভালবাসা নিংড়ে নেয়।

আমরা হল থেকে রাস্তায় নামি।

কিছু ক্ষণ চুপ করি। থেমে যাই...

Movie Review Film Review মুভি রিভিউ Bollywood Celebrities Varun Dhawan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy