সৌমিত্রকে ফিরে দেখলেন পরমব্রত
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভিযান’ নিয়ে বাঙালির অনন্ত কৌতূহল। এটা কি নিছক তথ্যচিত্র? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কোন কোন দিক দেখানো হবে? সুচিত্রা সেন থাকছেন? তা হলে সেই পাঞ্জাবি ছেঁড়ার দৃশ্যটা থাকবে? কিছু কৌতূহল মিটেছে। অনেকটাই অজানা। সেই সব নিয়ে রবিবার আনন্দবাজার অনলাইন মুখোমুখি ছবির পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং ‘অল্পবয়সী সৌমিত্র’ যিশু সেনগুপ্তের।
রবিবার ম্যারাথন প্রচারে ছবির দুই তারকা। সারা দিন ধরে ছবি নিয়ে বলতে গিয়ে খাওয়ার সময়টুকুও পাননি। দিনের শেষে তাই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডা খেতে খেতেই। যিশু, পরমব্রতর খাবারের ‘অভিযান’-এর তালিকায় গ্রিলড স্যান্ডউইচ, ফিশফ্রাই। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত থাকলে কী করতেন? স্যান্ডউইচে কামড় বসিয়ে সপ্রতিভ পরমব্রত— ‘‘জেঠু থাকলে আরও তিন রকম পদের অর্ডার দিতেন।’’ দুই তারকারই দাবি, কিংবদন্তি অভিনেতা খেতে খুবই ভালবাসতেন। তাই কোথাও যাওয়ার আগে জেনে নিতেন, ওই জায়গার বিখ্যাত খাবার কী? হাতেগরম উদাহরণও হাজির। পরমব্রত জানালেন, নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ‘সংস্কার’ ছবিতে তিনি আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন। হাবড়ার অশোকনগরের শ্মশানে শ্যুট। বিকেলের টিফিন ছিল কড়া ভাজা সিঙাড়া আর গজা! দেখে আঁতকে উঠেছিলেন পরমব্রত। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নাকি পরম তৃপ্তির সঙ্গে দুটো সিঙাড়া, গজা খেয়েছিলেন!
এক জন মানুষের গোটা জীবন মাত্র দু’ঘণ্টার থেকে কিছু বেশি সময়ের মধ্যে তুলে ধরা যায়?
পরমব্রতর দাবি, তিনি সেই চেষ্টাই করেননি। পর্দার ‘অপু’র জীবদ্দশার বয়স ৮৭ বছর। কর্ম জীবনের বয়স ষাটোর্ধ্ব। এই বিশাল সময়, অভিজ্ঞতাকে ধরতে যাওয়াই মূর্খামি। তাই এত লম্বা জীবন, অভিনয়, তার থেকে তৈরি অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ মানুষটির জীবনবোধকেই তিনি ধরার চেষ্টা করেছেন। যে মানুষের মধ্যে রাজনীতি, নাট্যকার, কবি, শিল্পী এবং অভিনেতা— এতগুলো সত্তা মিলেমিশে বসবাস করে গিয়েছে। সেই থেকে তৈরি হওয়া জীবন দর্শনও জায়গা করে নেবে ছবিতে।
কিংবদন্তির অল্পবয়সকে ধারণ করার আগেই ছোট্ট মজার ভ্রান্তি। যিশুকে ফোন করেছিলেন সৌমিত্র। ‘‘কেন সময় দিচ্ছিস না পরমকে?’’ এই ছিল তাঁর বক্তব্য। যিশু ভেবেছিলেন অন্য চরিত্রের কথা। সঙ্গে সঙ্গে জানান, তিনি সময় দিয়েছেন। মিনিট দশেক পরেই যিশুকে পরিচালকের ফোন। সবিস্তার বর্ণন। শুনে মাথায় হাত অভিনেতার! আড্ডায় অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘আমি নিজেকে তৈরি করার একটুও সময় পাইনি। তাই পুরোপুরি নির্ভর করেছিলাম পরমের উপর। ও যেমন বলেছে, আমি সে ভাবেই ফোটানোর চেষ্টা করেছি।’’
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-সুচিত্রা সেন (পাওলি দাম অভিনীত)যখন থাকবেন, পাঞ্জাবি ছেঁড়ার দৃশ্যও নিশ্চয়ই থাকবে? আর প্রেমিক সৌমিত্র, তাঁকেও কি ধরা হয়েছে?
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে পরম-যিশু সম্মিলিত ভাবে হেসে উঠেছেন। তাঁদের মৌনতায় যেন সম্মতির লক্ষ্মণ। যেন, এমন বিরল দৃশ্যকে কি বাদ রাখা যায়? হাসির আড়ালে যেন নীরব পাল্টা প্রশ্ন তাঁদের। বাকি প্রেমিক সৌমিত্র। দুই তারকারই দাবি, প্রেম ছাড়া কোনও মানুষই থাকতে পারে না। কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এ সবের ঊর্ধ্বে তাঁর কাজের বিস্তৃতিতে। সেই বিশালতাকেই ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ‘অভিযান’ ছবিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy