Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Movie Review

A Thursday: আ ওয়েডনেসডের অক্ষম অনুকরণ

ইয়ামি চেষ্টা করেছেন, কিন্তু চিত্রনাট্য তাঁকে মজবুত জমি দিতে ব্যর্থ।

ইয়ামি চেষ্টা করেছেন, কিন্তু চিত্রনাট্য তাঁকে মজবুত জমি দিতে ব্যর্থ। ছবির একটি দৃশ্য।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৮
Share: Save:

নাম থেকে গল্প, মিল রয়েছে সবেতেই। কিন্তু কাল্ট ছবির ছায়া অনুসরণ করলেই আর একটা মাস্টারপিস তৈরি করা যায় না। ‘আ থার্সডে’ও সেটা হতে পারেনি। ডিজ়নি প্লাস হটস্টারে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি শুরু হওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যেই দর্শক বুঝে যাবেন, কাহিনি কোন পথে চলবে। থ্রিলার ছবিতে অপ্রত্যাশিত কিছু মোচড় প্রয়োজন হয়। বেহজ়াদ খামবাট্টা পরিচালিত এই ছবি সেটা দিতে ব্যর্থ। অথচ যে বিষয়টি তিনি ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন, তা জ্বলন্ত এবং স্পর্শকাতর। কিন্তু বেহজ়াদের ছবি পদে পদে নীরজ পাণ্ডের ‘আ ওয়েডনেসডে!’-কে মনে করিয়ে দিতে থাকে। যদিও দুটো ছবির তুলনা টানা বাতুলতা মাত্র।

এ ছবির কেন্দ্রচরিত্র নয়না জয়সওয়াল (ইয়ামি গৌতম)। সে বাচ্চাদের প্লে স্কুল চালায়। নয়নার বাড়ির মধ্যেই স্কুল। প্রেমিক রোহিত মীরচন্দানির (করণবীর শর্মা) সঙ্গে লিভ-ইন করে সে। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নয়না তিন সপ্তাহের ছুটি নেয়। তার হবু বর এবং স্কুলের বাকি কেউ ঠিক মতো জানে না, সে কোথায় গিয়েছিল বা তার কী হয়েছিল। ছুটি শেষ হওয়ার এক দিন আগেই সে ফিরে আসে। বাচ্চাদের সঙ্গে এবং অভিভাবকদের সঙ্গে নয়নার কথোপকথন বুঝিয়ে দেয়, সে সকলের ভারী প্রিয়। ছবির কয়েক মিনিট গড়াতে না গড়াতেই নয়নার মুখোশ খসে যেতে দেখেন দর্শক। কায়দা করে সে প্লে স্কুলের অন্যান্য কর্মীদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ির দরজা এঁটে, পাশে বন্দুক নিয়ে পুলিশকে ফোন করে জানায়, ১৬টি বাচ্চাকে সে হস্টেজ করেছে। মুক্তিপণ হিসেবে তার কিছু শর্ত মানলে শিশুদের ছেড়ে দেবে। নতুবা তাদের মারতে দ্বিধা করবে না।

এ বার কাহিনিতে আগমন ঘটে দুই পুলিশ অফিসার ক্যাথরিন আলভারেজ় (নেহা ধুপিয়া) এবং জাভেদ খানের (অতুল কুলকার্নি)। নয়না ও পুলিশের মধ্যে চাপানউতোর চলতে থাকে। নয়নার একাধিক দাবি। সে পাঁচ কোটি টাকা চায়, পাশাপাশি রাকেশ মাথুর ও চরণ কুমার নামের দুই ব্যক্তিকে ধরে তার কাছে হাজির করার কথাও বলে। ঘটনাচক্রে ওই দিন মুম্বইয়ে উপস্থিত দেশের প্রধানমন্ত্রী মায়া রাজগুরু (ডিম্পল কাপাডিয়া)। তার সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিও করে বসে নয়না। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ও দর্শকের মনে নয়নার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। জানা যায়, গোটা বিষয়টির সঙ্গে নয়নার অতীতের একটি ঘটনা জড়িত।

ছবিটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, নির্মাতারা কাহিনিতে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারেননি। ১৬টি বাচ্চাকে বন্দি করে দাবিদাওয়া আদায় করছে যে, তার কার্যকলাপে একবারের জন্যও দর্শক শিউরে ওঠেন না। প্রধান চরিত্রের নির্মাণ এতটাই ঠুনকো। পরিচালক তাঁর ছবির কাঠামো হিসেবে ধর্ষণ ও তার চূড়ান্ত শাস্তির যে বিষয়টি রেখেছিলেন, সেটি প্রশংসনীয়। কিন্তু কাঠামোর উপরে প্রলেপ দিতে গিয়ে এত অযত্ন করলেন, তাতে ছবিটির ভাবনার গভীরতা দর্শককে স্পর্শ করতে পারল না। গতিপ্রকৃতিতে ‘আ ওয়েডনেসডে’র অক্ষম অনুকরণ হয়ে গেল মাত্র।

ইয়ামি গৌতম চেষ্টা করেছেন, কিন্তু চিত্রনাট্য তাঁকে মজবুত জমি দিতে ব্যর্থ। দুর্বল কাহিনিকে একার জোরে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো জোরালো কাঁধ তাঁর নয়। ডিম্পল কাপাডিয়া আরও একবার প্রমাণ করলেন স্ক্রিন প্রেজ়েন্সেই তিনি বাজিমাত করতে পারেন। পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অতুল কুলকার্নি প্রশংসনীয়। ছবিটি তৈরির সময়ে নেহা ধূপিয়া বাস্তবেও অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ফলে চরিত্রটিতে মানিয়ে গিয়েছেন তিনি।

এই ধরনের ছবিতে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে একটা অংশ সাধারণত থাকে। এই ছবিতেও আছে। নির্মাতাদের উদ্দেশে একটাই প্রশ্ন, মিডিয়ার ভূমিকাকে কদর্য ভঙ্গিতে তুলে ধরাটাই কি এখনকার ট্রেন্ড?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Review yami gautam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE