সিনেমায় যেমন হয়: ‘কি অ্যান্ড কা’ ছবিতে অর্জুন ও করিনা
সাধারণত পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে আমরা লেখা থাকতে দেখি, ফর্সা, সুশ্রী, গৃহকর্মে নিপুণা পাত্রী চাই। কিন্তু ধরুন একদিন আপনি দেখলেন, ওই ফর্সা লম্বা ইত্যাদি একই আছে। শুধু পাত্রীর জায়গায় লেখা পাত্র চাই। খুব অবাক হবেন বুঝি? আর বাল্কি পরিচালিত ফিল্ম ‘কি অ্যান্ড কা’তে পরিচালক দেখিয়ে দিয়েছেন, কী ভাবে স্বামী নিলেন গৃহকর্ত্রীর ভূমিকা, আর স্ত্রী তখন গৃহকর্তার ভূমিকায়। আজকের কাপলরা মজেছেন এই নতুন জীবন যাপনে।
কত ধানে কত চাল
বাড়ির কাজ? এ আর এমন কি? এই ধারণা আমাদের মনে একেবারে বদ্ধমূল। কিন্তু যিনি হোমমেকার হন, তিনি কার্যত জুতো সেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ সবই করেন, এবং হাসিমুখে। অফিসে একটু বেশি কাজ এসে পড়লে আপনি অধৈর্য হয়ে পড়েন, ভাবেন এই মাইনেতে এত কাজ!, জাস্ট নট ফেয়ার। কিন্তু হোমমেকার? তার যতই বাড়তি চাপ পড়ুক না কেন, তাকে তো পারতেই হবে। অনুযোগ করার কোনও জায়গাই নেই তার। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘এটা খুব ব্যাকডেটেড ভাবনা, যেহেতু আমি পুরুষ, তাই আমি ঘরের কাজ করব না।’’ তিনি মনে করেন, ছেলেদের হাউস হাজব্যান্ড হওয়ার অনুশীলন করা উচিত। তবেই বুঝবেন কত ধানে কত চাল। খুব স্বাভাবিক ভাবে মোটেও কোনও ছেলে ব্যাপারটা মেনে নিতে চাইবে না। কৌশিক নিজে একটা সময় বাড়ি সামলেছেন, স্ত্রী চূর্ণী একা রোজগার করেছেন। কিন্তু তাতে এতটুকু সমস্যা হয়নি, ইগো আঘাত প্রাপ্ত হয়নি। “চূর্ণী তখন চেন্নাইতে চুটিয়ে কাজ করছে, আমি ঘরে বেবি সিটিং করতাম, রান্না করতাম। বাচ্চা বেশি কান্নাকাটি করলে মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যেতাম।” কিন্তু কৌশিক যা অবলীলায় করেছেন, আর পাঁচজন কি তা পারবেন? সমাজতাত্ত্বিক অভিজিৎ মিত্রের মতে, আমাদের দেশের ছেলেদের মধ্যে এতটা উদার মানসিকতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে আগের চেয়ে ছেলেদের মানসিকতা অনেক বদলেছে। এখন ছেলেরা বাড়ির কাজে এগিয়ে আসেন। তবে তিনি এটাও মানছেন যে ফুল টাইম হাউজ হাজব্যান্ড হওয়ার মতো সাহস এখনও কেউ দেখায় না।
নিজের জন্য প্রচুর সময়
এক মাস হল বিয়ে করেছেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার কামব্যাক ফিল্মের পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। নতুন সংসার, আবার এদিকে ‘প্রাক্তন’য়ের মতো বহুপ্রত্যাশিত ফিল্ম। তার ফাঁকেই নববধূকে নিজের হাতে জলখাবার বানিয়েও খাইয়েছেন। বাড়িতে থেকে বাড়ির কাজকর্ম দেখাশোনা করতে তাঁর বেশ ভাল লাগবে, বলছেন শিবপ্রসাদ। “সকালে ব্রেকফাস্ট, বউয়ের টিফিন। তারপর রান্না, ঘরদোর পরিষ্কার। এর পরও কত সময় থাকে বলুন তো, কত কী করার স্পেস পাবেন।” কিন্তু আমাদের দেশে ঘরজামাই হলে, তো কেউই খুব একটা ভাল চোখে দেখে না সেই ছেলেকে। সামনে যদি বা কিছু না বলেন পেছনে পেছনে আপনার মুণ্ডপাত হবে। এই মানসিকতার বদল জরুরি মনে করছেন সমাজতাত্ত্বিকরা। আসলে আমাদের দেশে হয়ত এই কনসেপ্ট নতুন কিন্তু বিদেশে ছেলেরা দিব্যি বাড়ির কাজ করেন, বাচ্চা সামলান। আর যেমনটা ‘কি এন্ড কা’ তে পরিচালক দেখিয়েছেন, পুরুষ গৃহকর্তা হলে, তার ফ্যান ফলোয়ার্স কমে না, বরং বাড়ে।
বেশিদিন হলে দমবন্ধ
বান্ধবী ইকার সঙ্গে দেখা করতে মাঝে মাঝে লম্বা ছুটি নিয়ে কিছু দিন বিদেশে কাটান অভিনেতা পরমব্রত। তখন তাঁর কোনও কাজ থাকে না, তাই চুটিয়ে বাড়ির কাজ করেন। আসলে ভালবাসার মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে একটা দারুণ আনন্দ আছে। আপনার স্ত্রী বা বান্ধবী যখন কাজ থেকে ফিরে এসে দেখবেন, আপনি তার জন্য নিজের হাতে রেঁধেছেন, তখন তার মুখের এক্সপ্রেশন দেখেই বুঝতে পারবেন, কী গর্বিত তিনি আপনাকে নিয়ে। এখন অনেক দম্পতিই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। মনোবিদরা বলছেন, এমনিতেই আজকাল ওয়ার্কিং কাপলরা সময় দিতে পারেন না বলে, বিয়ে টাল খেয়ে যায়। তাই চাকরি এবং আর্থিক ব্যাপারটি নিশ্চিত করে অনেক ছেলে বা মেয়ে কিছুদিন শুধুই সংসার করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু এই জীবনেরও তো একঘেয়েমি আছে। বেশিদিন যদি ভাল না লাগে? পরমব্রত যেমন খেয়াল করেছেন, ১৫-২০ দিন হলেই ছটফট করতে থাকেন, তাঁর ব্যস্ত শেডিউলে ফিরে আসার জন্য। তাই হাউজ হাজব্যান্ডশিপ তাঁকে কিছু দিনের ছোটাছুটি থেকে মুক্তি দেয় বৈকি, কিন্তু বেশিদিন হলে আদৌ ভাল লাগবে না।
হাউজ হাজব্যান্ড হতেই হবে
আজ যখন নারী-পুরুষ সমান দায়িত্ব নিয়ে উপার্জন করছেন, তখন বাড়ির সব কাজ শুধুই কর্ত্রী করবেন, এই ধারণা বদলে ফেলা উচিত। অভিনেত্রী পায়েল, যেমন ছোট থেকে দেখেছেন, বাবা, বাড়ির কাজে মাকে সবসময় সাহায্য করেছেন। দুজনেই চাকরিও করতেন, বাড়িও সামলাতেন। তাই পায়েলের মতে, প্রত্যেক পুরুষকে হাউজহাজব্যান্ড হতেই হবে। এই বছরের শেষ বা পরের বছরের শুরুতে বিয়ে করছেন পায়েল। বিয়ের পর তিনি এবং তাঁর স্বামী বাড়ির দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন। তাঁর হবু জীবনসাথি পরিচালক আবীর। পায়েল বললেন, ‘‘যে যখন বাড়িতে থাকব, বাড়ির কাজ সামলাব।’’ অর্থাৎ ঘর আর বাইরে একজন মেয়ে যে ভাবে সামলান, ছেলেদেরও তা পারতে হবে। আর এই কাজটা অবলীলায় করেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তাই ‘সিনেমাওয়ালা’ রিলিজের শত ব্যস্ততার মাঝেও কৌশিক ঠিক সময় বের করেন রান্নার জন্য। তার হাতের মটন চূর্ণীর খুব পছন্দের যে। কী ভাবছেন? কাজ থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে, বেড়াতে না গিয়ে বাড়িতেই কটা দিন থেকে গৃহকর্মে নিপুণ হয়ে উঠবেন? মন্দ হবে না কিন্তু। তবে প্রথম প্রথম আপনার সিদ্ধান্তে হয়তো সকলেই অবাক হবেন। বিশেষ করে আপনার স্ত্রী বা বান্ধবী। তবে ভেতরে ভেতরে তিনি খুশিও হবেন। আপনার বাড়তি নজর, আপনার যত্ন, ভালবাসা সম্পর্ক আরও মধুর করে তুলবে। রব নে বানাদি জোড়ি-র মতই আপনিও চমকে দিন না পার্টনারকে আপনার সুপ্ত প্রতিভা দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy