ঊষসী রায়
আমার আত্মীয়-বন্ধুরা সকাল থেকে আমাকে একের পর এক মেসেজ করে চলেছেন। ‘কী ব্যাপার? কী হয়েছে রে’? কিন্তু সবাই কি ভুলে গেলেন, আক্রমণ করা হয়েছে এক নারীকে। তাঁর পোশাকের পছন্দ-অপছন্দের উপর ভিত্তি করে। তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে। তার পরেও প্রশ্নটা শুনতে হচ্ছে আমায়! আমি আমার সমস্ত পরিজনদের উদ্দেশে বলতে চাই, কী হচ্ছে, সেটা আমায় জিজ্ঞেস না করে, তাঁদের আচরণের প্রতিবাদ করুন, যাঁরা আমার সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য করেছেন।
আমার মনে হয়, পরিচিত হোন বা অপরিচিত, কোনও নারীকে অপমান করা হলে সকলের উচিত এক জোটে প্রতিবাদ করা। আমি কেবল নিজের কথা বলছি না। সমস্ত নারীর হয়েই কথা বলছি।
রবিবার আমি একটি ছবি দিয়েছিলাম। নিজের পছন্দের পোশাক পরা ছবি। সেখানে একের পর এক অশ্লীল মন্তব্য ভিড় জমায়। সচরাচর আমি চোখ এড়িয়ে যাই। কারণ, মানুষের মানসিকতা তো আর বদলাতে পারব না। তাই চুপ করে থাকাই শ্রেয়। পাত্তা না দেওয়াই একমাত্র উপায় বলে মনে করি আমি। কিন্তু সে বিষয়ে খবর প্রকাশ পাওয়ার পরেই আমি কলম ধরার সিদ্ধন্ত নিলাম।
না, আমার হাতে কোনও অস্ত্র নেই, যা দিয়ে এই মানুষগুলোর মুখ বন্ধ করা যায়। তবে শ্রাবন্তীদি (চট্টোপাধ্যায়) যে ভাবে নিজের প্রোফাইলের মন্তব্য বাক্সকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন, সেটা অবশ্যই একটা পথ। সে চিন্তা আমার মাথায় আসেনি, তা নয়। কিন্তু মাঝে মধ্যে মনে হয়, কয়েকটা মানুষের নেতিবাচকতার দায় আমার অন্য হাজার অনুরাগীর ঘাড়ে কেন ফেলব? ধরা যাক, ৪০০টা মন্তব্য করা হয়েছে আমার ছবির তলায়, তার মধ্যে ৫০টা মন্তব্যে চোখ রাখা যায় না। কিন্তু বাকি ৩৫০ জন মানুষ আমাকে ভালবাসা জানিয়েছেন। যা আমার মন ভাল করায়। এমনকি তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ অশ্লীল আচরণের প্রতিবাদ জানান। সেই অনুরাগীদের জন্য আজ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দ্বিতীয় আর একটি পথ রয়েছে। বলিউডের কয়েক জন অভিনেত্রী ও অভিনেতা এক জোট হয়ে অনলাইন হেনস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিলেন আবেদন জমা দিয়ে। কিন্তু সে প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তবে এই ইন্ডাস্ট্রির কেউ যদি সে রকম পদক্ষেপ করতে চান, আমি সবার আগে হাজির হব।
আমি গত বছর একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলাম। গলাবন্ধ পোশাক পরেছিলাম। তখনও এই অশ্লীল চোখগুলো আমার পিছু ছাড়েনি। এ বারও যে ছাড় পাব না, তা জানতাম। আমার সাম্প্রতিকতম ছবিতে এক জন আমায় ‘দেবী পার্বতী’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার পরে বলেছেন, যে পোশাক আমি পরেছি, তা সুন্দর নয়। আমাকে বাঙালি সাজে সেজে ওঠার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যক্তির উদ্দেশে বলতে চাই, আমাকে দেবীর সঙ্গে তুলনা না করে বাড়ির মহিলাদের সম্মান জানান। আমরা কেউ দেবী নই। সাধারণ মানুষ। আমাকে পুজো করেও লাভ নেই। আমি অতিলৌকিক পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যেতে পারব না। এক জন মহিলা হিসেবে আমার কেবল সম্মানের প্রয়োজন। যতটুকুর অধিকার আছে, ততটুকু সম্মান। আমার পোশাকের ভিত্তিতে আমি ‘দেবী’ বা ‘ডাইনি’ হয়ে যাই না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy