ঊষসী চক্রবর্তী।
একুশ শতকের মাঝামাঝি পৌঁছে গিয়েছে সভ্যতা। এখনও কি হিজাবে, পর্দা প্রথায় বন্দি হয়ে থাকবে নারীত্ব? এই ভাবনা থেকেই বিশ্বজুড়ে হিজাবের বিরুদ্ধে সরব মুসলিম মহিলারা। ২০১৩ থেকে প্রতি ফেব্রুয়ারিতে পালিত হচ্ছে হিজাব দিবস। সেখানেই ব্যতিক্রম খোদ শহর কলকাতা। তারকার জৌলুস ঢেকে আম জনতার মধ্যে নিজেকে মিশিয়ে দিতে স্বেচ্ছায় হিজাবে মুখ ঢাকেন টলিউডের জনপ্রিয় তারকা-অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী! নিজের এই পছন্দের স্বপক্ষে আনন্দবাজার অনলাইনকে যুক্তিও দিয়েছেন তিনি।
ঊষসীর বক্তব্য কী? তেজ কমে রোদটা যখন কমলালেবুর কোয়ার মতো মিঠে-কড়া তখন হাতিবাগান চত্বরের ভিড়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ঊষসীর। ইচ্ছেমতো রাস্তায় হাঁটতেও ভালবাসেন। কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে ফুচকার দোকান দেখলে কথাই নেই। সবার সঙ্গে মিশে গিয়ে হাতে শালপাতার বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে প্রাণ চায়। কিন্তু বাদ সাধে তাঁর জনপ্রিয়তা, ‘স্টারডম’। অতঃকিম? অভিনেত্রী কিন্তু সব কিছুই করেন। অথচ কাকপক্ষীতেও টের পায় না! তাঁর দাবি, সবটাই ঘটে হিজাবের কল্যাণে!
নায়িকারা সাধারণ চোখ ঢাকা বড় টুপি, রোদচশমা এবং স্কার্ফ দিয়ে সবার থেকে আড়াল টানেন। কিন্তু হিজাব!.... কথা ফুরনোর আগেই পাল্টা প্রশ্ন ‘জুন আন্টি’র, ‘‘এ গুলো দিয়ে ঠিক মতো নিজেকে লুকোনো যায় কি?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, অতিমারির কারণে স্কার্ফের সঙ্গে মাস্ক থাকায় তবু অনেকটাই সুবিধে হয়েছে। কিন্তু একটা সময়ের পরে অতিমারিও স্তিমিত হয়ে যাবে। তখন? তাই ঊষসীর কাছে হিজাবের তুলনা হিজাব নিজেই। সেই সঙ্গে ফাঁস করেছেন এই বিশেষ পোশাক বেছে নেওয়ার নেপথ্য কারণও।
তখনও তিনি তারকা নন। সবে অভিনয় দুনিয়ায় পা রেখেছেন। সেই সময় কোনও এক পত্রিকার মাধ্যমে বা লোকমুখে জেনেছিলেন, টলিউডের এক কিংবদন্তি নায়িকা নিজের ইচ্ছেমতো ঘোরার শখ হলেই নাকি গায়ে চাপিয়ে নিতেন হিজাব। এ ভাবে তিনি লোকাল ট্রেনে চেপে শান্তিনিকেতন বেড়াতে চলে যেতেন! ঊষসীর কথায়, ‘‘বিষয়টি জেনে বেশ অন্য রকম লেগেছিল। নাম-ডাক হওয়ার পরে আমিও তাই ওঁর পন্থায় হেঁটেছি। তারকা হয়েছি বলে কি সব শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিতে হবে?’’
হিজাব বেছে নেওয়ার আগে অন্য ধর্মের পোশাক গায়ে তুলছেন ভেবে একটুও কি অস্বস্তিতে ভুগেছিলেন তিনি? মনে হয়েছিল, প্রকারান্তরে যেন মুসলিম নারীদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া প্রথাকেই সমর্থন জানাচ্ছেন?
এ বিষয়ে উষসীর সাফ জবাব, তাঁর এ রকম কিছুই মনে হয়নি। কারণ, পোশাককে তিনি কোনও ভাবেই ধর্মগন্ধী করতে রাজি নন। নিজের ইচ্ছেমতো আর পাঁচটি পোশাক যেমন তিনি পরেন হিজাবও তাঁর কাছে তেমনই। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, তিনি বরাবর জোর করে কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়ার ঘোর বিরোধী। কিন্তু স্বেচ্ছায় সেই একই পোশাক কেউ পরলে সেটি আর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার পর্যায়ে থাকে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি নাম নেন এ আর রহমান-কন্যা খাতিজার। বলেন, ‘‘খাতিজা কিন্তু স্ব-ইচ্ছায় হিজাব পরেন। এ রকম আরও অনেকেই আছেন। ফলে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এমনটা বলা ঠিক নয়। ফলে, অন্যায়কে সমর্থন করার প্রশ্নও উঠছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy