সেই ১৮৮৭। ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার শাসনের সুবর্ণজয়ন্তী। তাই ব্রিটিশ শাসিত ভারত থেকে মর্যাদাস্বরূপ রানিকে একটি মোহর উপহার দেওয়া হবে। সে কাজের জন্য আগরায় হঠাৎই দীর্ঘদেহী পুরুষের খোঁজ পড়ল। তড়িঘড়ি জাহাজে চাপিয়ে ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়া হল কারাগারের এক করণিক আব্দুল করিমকে। যেমন কথা তেমন কাজ। না, ঠিক তেমন হল না। রানির সামনে ঝুঁকে তাকে মোহর নিবেদন করে ফিরে আসার কথা ছিল আব্দুলের। কিন্তু নিষেধ অমান্য করে হঠাৎই চোখে চোখ পড়ে গেল। ব্যস, পলকেই ভিক্টোরিয়ার পছন্দ হয়ে গেল ভারতীয় পুরুষটিকে!
এর পর রানির চাকর হিসেবে নিয়োজিত হল আব্দুল। ক্রমে পদোন্নতি হয়ে মুনশি। তার পর শুরু হল উর্দুর পাঠ। মুনশির অনুপ্রেরণাতেই ভারতীয় সংস্কৃতিকে ভালবেসে আইল অফ ওয়াইটসের রাজবাড়ি ‘অসবোর্ন হাউস’-এ দরবার ঘর তৈরি করালেন রানি। ‘অ-শ্বেতাঙ্গ’, ‘ভারতীয়’, ‘মুসলিম’ ছেলেটির এ হেন সমাদরে যারপরনাই বিরক্ত রাজপরিবারের সদস্যেরা। ভিক্টোরিয়া-পুত্র সপ্তম এডওয়ার্ডের মদতে দানা বাধল বিদ্রোহ। কিন্তু অনড় ভিক্টোরিয়া সসম্মান নিজের কাছেই রাখলেন তাঁর প্রিয় মুনশিকে। কিন্তু কোথায়ই বা ছিল তার শেষ? তার উত্তর ছবিটির জন্যই তোলা রইল।
এক কথায়, ছবিটা ছবির মতো। ‘আউটডোর’ বলতে উনিশ শতকের ইংল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডের পাহাড়-উপত্যকা-হ্রদ। আর ‘ইনডোর’ হল বাকিংহাম প্যালেস-সহ আরও কিছু রাজকীয় প্রাসাদ। কাজেই সৌন্দর্যের কোনও অভাব নেই। সেই সঙ্গে চরিত্রগুলির পোশাক-আশাকও খুব রংচঙে। এত জাঁকজমকের কারণেই ছবিটা দেখতে ভাল লাগে। আর রানি ভিক্টোরিয়ার চরিত্রে জুডি ডেঞ্চের অভিনয় দেখতে হয় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। ৫৮ বছর বয়সের দৃঢ় ভিক্টোরিয়া বা ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুশয্যায় রানি, কোথাও মনে হয়নি, তিনি অভিনয় করছেন। এতটাই সাবলীল। যে কাউকেই তাঁর পাশে ফিকে লাগবে, এ তো স্বাভাবিক। অস্বীকার করার উপায় নেই, আলি ফজলকেও লেগেছে। নিজের সবটুকু দিয়ে অভিনয় করার পরও জুডির দক্ষতার কাছে হার মেনেছেন। তবে অসীম ক্ষমতাধর ব্রিটেন-অধিপতির বিপরীতে, তাঁর লাজুক, অস্বচ্ছন্দ ভাবটা খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে পরদায়। বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে দর্শকের কাছে। এ বার ছবির পিছনের কয়েকটা কথা বলতেই হয়। ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আব্দুল’ ইতিহাস-আশ্রিত ছবি। লেখক-সাংবাদিক শ্রাবণী বসুর বইয়ের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে। মহারানি ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ‘কাজের লোক’ আব্দুলের সম্পর্কই ছবির গল্প। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব যে এক পলকে হঠাৎ গড়ে ওঠে, তা কি ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠল? ছবিটা দেখলে এ প্রশ্ন থেকে যাবেই। হতে পারে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের নির্মাণটিকে হয়তো যথাযথ বিচার করতে পারেননি পরিচালক। ছবিটি নিয়ে বেধেছে বিতর্কও। এক দলের মত, ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশে যে অত্যাচার চালাত, তার বিপ্রতীপে ভারতীয় আব্দুলের ব্রিটেনের রানির প্রতি প্রশ্নহীন সম্ভ্রম ও সমর্পণের ছবি আসলে ইতিহাসের বিকৃতি। রানির যতটা মহানুভবতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, ঠিক নয় তা-ও।
অসম বন্ধুত্বের গল্প শুনতে মিঠে হলেও, খুব যে জমল, এমন কিন্তু বলা গেল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy