পাভলভের মানসিক হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
নাম-পরিচয়ের জটিলতার মোড়কে এ যেন সেই ‘টোবা টেক সিংহ’-এর গল্প। মান্টোর গল্পের মানসিক ভারসাম্যহীন কয়েদি টোবা টেক সিংহ ভারতীয় না পাকিস্তানি— তার নিষ্পত্তি হয়নি শেষ পর্যন্ত। এ রাজ্যের বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে বন্দি আবাসিকদের অবস্থা খুব একটা আলাদা নয় সেই অমর কাহিনির চরিত্রের থেকে।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আবিদ হোসেনও এ রাজ্যে কবি সম্মেলনে এসে শেষে পাভলভের মানসিক হাসপাতালে ঠাঁই পেয়েছেন। গত ২২ মে তাঁকে শিয়ালদহ কোর্টের মাধ্যমে পাভলভে পাঠায় মানিকতলা থানার পুলিশ। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, “আমরা দেখি আবিদ সাহেব কানে কিছুটা খাটো। এটুকু বাদ দিলে ওঁর সমস্যা নেই বললেই চলে! আমরা দ্রুত পুলিশের মাধ্যমে আদালতকেও ওঁর বিষয়ে এই রিপোর্ট দিই।”
জানা গিয়েছে, ২০২২-এর জুলাইয়েও নারকেলডাঙা থানা ও কোর্টের মাধ্যমে আবিদ পাভলভে ঠাঁই পেয়েছিলেন। সে-যাত্রা মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে যান তিনি। এ বছর উত্তরবঙ্গে নজরুল বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে এসেই তিনি ফের পাকেচক্রে মানসিক হাসপাতালে ঢুকেছেন বলে আবিদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, বাগমারির এক পরিচিতের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে পুলিশ ডাকা হয়েছিল। তাঁর পাসপোর্ট, ভিসা মানিকতলা থানার পুলিশের কাছেই আছে।
মানিকতলা থানার অবশ্য বয়ান আলাদা। তারা বলছে, একটি মসজিদের কাছে বসে থাকা অবস্থায় আবিদের খোঁজ মেলে। সঙ্গে পাসপোর্ট, ভিসা ছিল না। তবে নারকেলডাঙা থানা মারফত আবিদের পাসপোর্ট, ভিসার ফটোকপি ও ছবি মিলেছে। কিন্তু সেটুকুর জোরে তাঁকে বাড়ি ফেরানো মুশকিল।
মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পাভলভ, লুম্বিনীতে ৭ জন করে এবং বহরমপুর ও পুরুলিয়ার মানসিক হাসপাতালে দু’জন করে মোট ১৮ জন বাংলাদেশি আবাসিক রয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ ২০১৪ বা ২০১৫ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এখন সবাই সুস্থ। শুধু সোহেল নামে লুম্বিনীর এক জন আবাসিক ছাড়া সকলেই ঠিকানা বলতে পেরেছেন। সুস্থ লোকজনকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর প্রবণতায় বিব্রত পাভলভের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী। বিদেশিদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের উপদেষ্টা মধুমিতা হালদার বলছেন, “আবাসিকদের তালিকা ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।এখনও সাড়া মেলেনি।”
চল্লিশোর্ধ্ব আবিদের মা-বাবা নেই। বাংলাদেশে তাঁর পরিজনের খোঁজ চলছে। তত দিন পাভলভের আধিকারিক ‘দিদি’, নার্সদের নিয়ে কবিতা লিখেই সময় কাটাচ্ছেন ‘দেশহীন’ আবিদ হোসেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy