সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।
বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বৃহস্পতিবার খোদ উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কেও রেয়াত করেনি সুপ্রিম কোর্ট। চার বছর আগের কলেজিয়াম বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চেয়ে করা একটি আবেদন শুক্রবার খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, কলেজিয়াম বৈঠকের সব তথ্য জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।
বিতর্কের মধ্যেই কলেজিয়াম পদ্ধতির বিকল্প হিসাবে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে শুক্রবার রাজ্যসভায় একটি বেসরকারি বিল আনেন সিপিএম সদস্য বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং স্বচ্ছ ভাবে সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ এবং বিচারপতিদের বদলি এই কমিশনের অধীনে করা সম্ভব বলে বিকাশ রাজ্যসভায় সওয়াল করলে বহু সদস্য তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু বিরোধী আম আদমি পার্টির সদস্য রাঘব চাড্ডা এই বিলের বিরোধিতা করে জানান, তাঁরা চান কলেজিয়াম পদ্ধতিই থাকুক। চাড্ডা বলেন, এর আগে তিন বার জুডিসিয়াল কমিশনের প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। আরও এক বার সেটা করতে পারে তারা। সুতরাং জেনেশুনে ব্যর্থ প্রয়াসে তাঁরা নারাজ। সুপ্রিম কোর্টের মনোভাবে স্পষ্ট, বিচারপতিরা কলেজিয়াম পদ্ধতিই চান। এই পদ্ধতির গলদগুলি শোধরানো তার থেকে বেশি উপযোগী হতে পারে।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ যে আবেদনটি খারিজ করে, ‘তথ্য জানার অধিকার’ আইনে সেটি এনেছিলেন অধিকার-কর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ। ২০১৮-র ১২ ডিসেম্বর হওয়া কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আনার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তাঁর কৌঁসুলি প্রশান্ত ভূষণ। এই বৈঠকে দুই বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল, সরকার যা মানেনি। কোন কোন বিচারপতির নাম সুপারিশ করা হয়েছিল, তা-ও অন্ধকারে। সেই সময়ে কলেজিয়ামের সদস্য থাকা বরিষ্ঠ বিচারপতি মদন লোকুর অবসর নেওয়ার পরে ফের কলেজিয়ামের বৈঠক ডেকে সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দুই বিচারপতির নামের সুপারিশ ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
বিচারপতি লোকুর অবসরের পরে এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কলেজিয়ামের উচিত ছিল আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকা। চাপের কাছে তারা পিছিয়ে গেল। এর পরেই এই আবেদনটি করা হয়েছিল। তবে বিচারপতি এম আর শাহ এবং বিচারপতি সি টি রবিকুমার সেই আবেদন খারিজ করে বলেন, কলেজিয়াম যা প্রকাশ করেনি, তা প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন নেই। কলেজিয়ামের সব সিদ্ধান্ত প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। প্রশান্ত ভূষণ সওয়াল করেন, বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতার স্বার্থেই এই বিষয়টি মানুষকে জানানো প্রয়োজন। এর ফলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাই বাড়বে।
বিচারপতিরা পাল্টা যুক্তিতে বলেন, এক সময়ে কলেজিয়ামের সদস্য থাকা এক জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির মন্তব্যের ভিত্তিতে এই আবেদন করা হয়েছে। এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। কোনও ‘ব্যস্তবাগীশের’ কথায় সুপ্রিম কোর্ট ধুয়ো ধরতে পারে না। সুতরাং এই আবেদন খারিজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy